Alapon

বাংলাদেশীদের সৌদি বিদ্বেষ পর্ব ১২

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম   

বাঙ্গালী সেক্যুলার সমাজের মুসলমানরা দুই ভাগে বিভক্ত৷ একদল কমিউনিস্ট বা বামপন্থী৷ নাস্তিক এবং ইসলাম বিদ্বেষীরা এই দলের অন্তর্ভূক্ত৷ আরেক দল হলো ধর্ম যার যার উৎসব সবার টাইপের মুসলমান৷ এদেরকে নাস্তিকও বলা যায় না, আবার কাফেরও বলা যায় না৷ এরা মদিনা সনদেও বিশ্বাস করে, আবার মা দূর্গার আশীর্বাদেও বিশ্বাস করে৷ শুক্রবারে মসজিদে যায়, আবার পূজোর সময় মন্দিরে গিয়েও ঢোল পেঠায়৷
কমিউনিস্টদের একদল রাশিয়া পন্থী, আরেকদল চীনপন্থী৷ শিক্ষা, মিডিয়া, প্রশাসন, পররাষ্ট্রনীতির মত দেশের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো কিন্তু এই সেক্যুলারদের দখলে৷ এরাই আমাদের দেশের বুদ্ধিজীবী৷ ইহুদীরা যেভাবে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে বিশ্বটাকে নিয়ন্ত্রণ করছে, তদ্রুপ বাংলাদেশটাও এদের নিয়ন্ত্রণে৷ বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ইস্যুতে এদের মত বিরোধ থাকলেও সৌদী বিদ্বেষ এবং সৌদী বিরোধী প্রচারণার ক্ষেত্রে এরা একই গোয়ালের গরু৷
এসব সেক্যুলারদের ব্যবসার মূলধন হলো মুক্তিযুদ্ধের চেতনা৷ ইরাক ব্যতীত আরব বিশ্বের কোন মুসলিম রাষ্ট্র বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধের সময় সমর্থন করে নি, তাই সেক্যুলারদের দৃষ্টিতে সৌদী আরব পাকিস্তানের মত মৌলবাদী এবং জঙ্গী রাষ্ট্র৷ আরব বিশ্বের মুসলমান রাষ্ট্রগুলো কেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সহযোগিতা করে নি, সেটি বোঝতে হলে আপনাকে তৎকালীন বিশ্ব রাজনীতি দেখতে হবে৷
তৎকালীন বিশ্ব রাজনীতি আমেরিকা এবং সেভিয়েত ইউনিয়ন এই দুই পরাশক্তিতে ভাগ ছিলো৷ দক্ষিণ এশিয়ার দুই বৃহত্তর শক্তি পাকিস্তানের পররাষ্ট্রনীতি আমেরিকা মুখী, অন্যদিকে ভারতের পররাষ্ট্রনীতি রাশিয়া মুখী৷ বিশ্ব পরিস্থিতি লক্ষ্য করলে দেখবেন মুসলিম দেশগুলোর পররাষ্ট্রনীতি সব সময় আমেরিকা পন্থী৷

এর বাইরে পাকিস্তানের চীনের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক, ভারতের ইসরাঈলের সাথে৷ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় ইসরাঈল অস্ত্র দিয়েছিলো যা ভারতের মাধ্যমে বাংলাদেশী মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে এসে পৌঁছায়৷ ভারতীয় গবেষক শ্রীনাথ রাঘবানের লেখা ‘১৯৭১ অ্যা গ্লোবাল হিস্টোরি অব দ্য ক্রিয়েশন অব বাংলাদেশ’ নামক বইটিতে এই তথ্য উঠে এসেছে।
রাশিয়া, ইসরাঈল, ভারতের মত অমুসলিম দেশগুলোর বাংলাদেশীদের সহায়তা মুসলিম বিশ্ব সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখেছিলো৷ দেশ স্বাধীন হওয়ার পরেও সে সন্দেহের অবসান ঘটেনি৷ স্বাধীনতার পর আমেরিকা, চীনের ক্ষেত্রে সেক্যুলাররা নমনীয় হলেও সৌদী আরবের যে কোন বিষয় এদের কাছে অমার্জনীয় অপরাধ৷ যেহেতু এরা তেমন ধর্ম-কর্মের ধার ধারে না, তাই এদের কাছ থেকে ইসলামী রাষ্ট্র সম্পর্কে কোন ইতিবাচক ধারণা আমরা আশা করি না৷
জাতীয়তাবাদীদের বিষয়টা যদি ইসলামী দৃষ্টিকোন থেকে আমরা দেখতে যাই, তাহলে ইসলামে জাতীয়তাবাদকে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে৷ বাংলাদেশে জাতীয়তাবাদের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে এক কথায় মূল্যায়ন করতে গেলে বিদ্রোহী কবির সেই অমর বাণীটি স্মরণ করতে হয়, "মম এক হাতে বাঁকা বাঁশের বাঁশরী, আরেক হাতে রণ তূর্য্য৷"
প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান একপাশে যেভাবে আলেমগণকে রেখেছেন, সেভাবে অন্যপাশে সেক্যুলার, কমিউনিস্ট সহ অন্যদেরও জায়গা করে দিয়েছেন৷ এখানে আমাদের মনে রাখা প্রয়োজন, গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে একজন ডাকাত আর একজন ডাক্তার উভয়ের মূল্য মাত্র এক ভোট৷ যেহেতু তিনি দেশে গণতান্ত্রিক রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন, সেহেতু তাকে উভয় দিকে ভারসাম্য রক্ষা করতে হয়েছে৷
সৌদী আরবের সাথে জিয়াউর রহমানের সম্পর্ক এত ঘনিষ্ঠ ছিলো যে, জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর হতে সৌদী রাজ পরিবারের আতিথেয়তায় জিয়া পরিবারকে প্রতি বছর রমজানে ওমরাহ করার সুযোগ দেওয়া হয়৷ আপনি যদি দলকানা না হন, তাহলে আপনাকে মেনে নিতে হবে এটি জিয়া পরিবার এবং বাংলাদেশের জন্য একটি বিরল সম্মাননা৷ তাহলে জাতীয়তাবাদী দলের সমর্থকরা সৌদী বিদ্বেষী মনোভাব পোষণ করে কেন?
একটু পূর্বে যেটা বললাম, গণতান্ত্রিক রাজনীতি৷ একটি গণতান্ত্রিক দলে বিভিন্ন মতাদর্শের মানুষ থাকে৷ এই দলটিতেও আছে মাজার পূজারী, পীর পূজারী, বিদআতি, সেক্যুলার, কমিউনিস্ট সহ বিভিন্ন মতাদর্শের মানুষ যাদের বিষয়ে এই সিরিজের পূর্বের লেখাগুলোতে বলেছিলাম৷ এদের সাথে যোগ হয়েছে হতাশাগ্রস্ত এবং সুবিধাবাদী নেতা-কর্মীরা৷
হতাশাগ্রস্ত লোকরা সব সময় অন্যের দোষ ধরায় পারদর্শী৷ আর সুবিধাবাদী লোকেরা অন্যের কাঁধে বন্দুক রেখে শিকার করতে পছন্দ করে৷ এই হতাশাগ্রস্ত এবং সুবিধাবাদীদের কথা হলো কেউ তাদেরকে গদিতে বসিয়ে দিলে, তারা ক্ষমতার স্বাদ গ্রহণ করবে৷ এই লক্ষ্যে তারা নিজেদের ব্যর্থতাকে আড়াল করার জন্য কখনো হেফাজত, কখনো জামাত-শিবির, কখনো সৌদী আরবকে দোষারোপ করে সান্ত্বনা খোঁজে৷
গত এক দশকে বাংলাদেশের মানুষ যখনই কোন ন্যায্য দাবী তুলেছে তখনই সেক্যুলাররা তাকে জামাত-শিবিরের ষড়যন্ত্র বলে প্রত্যাখ্যান করেছে৷ যখন কেউ সত্য এবং ন্যায়ের পক্ষে কথা বলেছে তাকে জামাত-শিবিরের লোক বলে টুটি চেপে ধরেছে৷ ফলে সাধারণ মানুষের কাছে জামাত-শিবির হয়ে গেছে সুপারম্যানের মত কাল্পনিক শক্তিশালী৷ আর জামাত-শিবিরের কর্মীরা মনে করতেছে যে, আমরাতো দেশীয় রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠা পেয়ে গেছে, এবার বিশ্ব রাজনীতি শুরু করি৷
বাস্তবে সাধারণ মানুষ জামাত-শিবিরের রাজনীতিকে কতটুকু বুঝতে পেরেছে সে বিষয়ে সন্দেহ আছে৷ দলটির প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক গোলাম আযমের রাজনৈতিক দূরদর্শীতাকে উপমহাদেশের আরেক কিংবদন্তী রাজনীতিবিদ মাওলানা আবুল কালামের আযাদের সাথে তুলনা করা যায়৷ ভারতের স্বাধীনতার জন্য মাওলানা আবুল কালাম আযাদ জেল খেটেছেন, ইংরেজদের নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়েছেন কিন্তু ভারত-পাকিস্তান আলাদা হোক এটি তিনি সমর্থন করেন নি৷
কারো সাথে রাজনৈতিক মতাদর্শের মিল না থাকলে তাকে যদি দেশদ্রোহী বলা যায় তাহলে মাওলানা আবুল কালাম আযাদ, সুভাষ চন্দ্র বসুর মত অনেক নেতাই দেশদ্রোহী৷
অনেকেই গোলাম আযম সাহেবের ৭১ এর ভূমিকা টেনে আনেন৷ ৭১ এ তাঁর ভূমিকা সম্পর্কে ২০১২ সালের ১১ জানুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির হওয়ার আগে তিনি বলেছিলেন, "১৯৭১-এ মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে না পারা রাজনৈতিক নেতাগণ জনগণকে জুলুম থেকে রক্ষা করার জন্য সাধ্যমতো চেষ্টা করেছেন। নির্বাচনে বিজয়ী নেতৃবৃন্দ দেশে না থাকায় সাহায্যপ্রার্থী অসহায় জনগণের সমস্যার সমাধান করাই তাদের একমাত্র দায়িত্ব ও চেষ্টা ছিল। আমিও এ চেষ্টাই করেছি।"
স্যার হুমায়ুন আহমেদ স্বীকার করেন যে ,তাঁর নানা একজন রাজাকার ছিলেন৷ এবং তাঁর নানা এবং মামাদের মত ভালো মানুষ অত্র তল্লাটে ছিলো না৷ নিজের নানা যখন রাজাকার তখন তিনি সম্মানী ভালো মানুষ, কিন্তু অন্যের বেলায় "তুই রাজাকার"৷ এটি হচ্ছে আমাদের দেশের মুক্তিযুদ্ধ ব্যবসায়ী চেতনাবাদী মিডিয়া ব্যক্তিত্বদের আসল রূপ৷

বৈরি মিডিয়ার কারনে মাওলানা গোলাম আযমের রাজনৈতিক চিন্তাধারা সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছায় নি৷ আজ যখন সবার হাতে হাতে সোশ্যাল মিডিয়া এসে গেছে, তখন জামাত-শিবিরের কর্মীরা নিজেদের আদর্শ-উদ্দেশ্য প্রচার করার চেয়ে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে নিজেদের দক্ষতা প্রমাণে বেশি ব্যস্ত৷ সেক্ষেত্রে তাদের সৌদী বিদ্বেষী মনোভাব শিয়াদেরকেও হার মানিয়েছে৷
জামাত-শিবির টিভি চ্যানেল চালু করলে ঠিক আছে, সৌদী সিনেমা হল চালু করলে ইসলাম ধ্বংস হয়ে গেছে৷ বাংলাদেশের মেয়েরা ছাত্রীসংস্থা করলে ঠিক আছে, সৌদী মেয়েরা চাকুরী করলে এটা উচিত না৷ নিজেদের কর্ম পদ্ধতির দিকে না তাকিয়ে এভাবেই তারা সৌদী সমালোচনায় মুখর৷ সাধারণত কলেজ এবং আলিয়া মাদ্রাসার ছাত্ররা এই দলটির সমর্থক৷ এদের মাঝে অনেকেই আবার আহলে হাদীসের সমর্থক৷ আহলে হাদীসদের শায়খদের প্রায় সবাই সৌদী পন্থী৷ তাহলে জামাত-শিবিরের কেন এই সৌদী বিদ্বেষ?
আমরা দেখেছি, বিচারের নামে প্রহসন করে জামায়েতে ইসলামীর বেশ কয়েকজন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিকে ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়েছে৷ এটা নিয়ে বিশ্বের অনেক দেশই নিন্দা জানিয়েছে কিন্তু সৌদী আরব ছিলো নিরব৷ এটিই হচ্ছে তাদের সৌদীর প্রতি আক্রোশের কারন৷
জামাত-ইসলাম প্রায় সময়েই নিজেদেরকে ব্রাদারহুডের অনুসারী পরিচয় দিয়ে থাকে৷ প্রথম প্রথম ব্রাদারহুডের সাথে সৌদীর সম্পর্ক ভালো থাকলেও পরে অবনতি ঘটে৷ রাজনীতিতে রাজার সাথে রাজার সম্পর্ক, দলের সাথে দলের৷ সৌদী যেহেতু রাজতান্ত্রিক দেশ সেহেতু তারা যে কোন দেশের সরকারের সাথেই সম্পর্ক বজায় রাখে৷
আমেরিকা, ভারত এদেরকে আমরা কেন ঘৃণা করি? কারন এরা আমাদের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি, খনিজ সম্পদ, প্রাকৃতিক সম্পদ সব বিষয়ে নাক গলায়৷ সৌদীকে কেন ঘৃণা করি? কারন তারা আমাদের অভ্যন্তরীণ কোন বিষয়ে নাক না গলিয়ে দেশের সব দলের জনগণের প্রতি ভ্রাতৃত্বের হাত বাড়িয়ে দেয়৷


স্বাধীনতার পর সেক্যুলার সরকারের প্রতি ভ্রাতৃত্বের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলো, অহংকারের বশে তারা সে হাত মিলায় নি৷ জিয়াউর রহমান সে ভুল করেন নি৷ সেই ভ্রাতৃত্বের বন্ধন আজ পর্যন্ত অটুট আছে৷ যদি সেটি ছিন্ন করতে চাইত তাহলে এরশাদের সাথে তারা কোন সম্পর্ক রাখত না৷ কাউকে ক্ষমতায় বসানো বা নামানোর রাজনীতি যদি তারা করত তাহলে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে বেগম খালেদা জিয়াকে রাজপথে নামতে হত না৷
আমাদের জামাত-শিবিরের ভাইযেরা এতই ধার্মিক যে, তারা শিয়া-সুন্নী বিভেদ মানেন না; কিন্তু ক্বাওমী আলেমরা মোনাফেক, দরবারী, বিদআতী, বেঈমান এসব বলে খুব সুন্দরভাবে ক্বাওমী আলেমদের সাথে বিভেদের দেয়াল তুলে দিতে পারেন৷ অথচ ইতিহাস বলে শিয়া-সুন্নী বিভেদ তৈরী হয়েছে সাহাবীগণের আমলে, আর কলেজ-আলিয়া-ক্বাওমী বিভেদ হয়েছে ইংরেজ আমলে৷
যারা তিনশ বছর আগের বিভেদ মীমাংসা করতে পারেন না, তারা চৌদ্দশ বছর আগের বিভেদ মীমাংসা করতে পাররবেন! এটি কি আদৌ সম্ভব, নাকি ভোটের রাজনীতিতে ভোট পাওয়ার ধান্ধা?
উপমহাদেশের রাজনীতিতে ক্বাওমী আলেমগণের ঐতিহাসিক, ঐতিহ্যবাহী, গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে৷ একটা সময় ক্বাওমী আলেমগণ সৌদীপন্থীই ছিলেন, সেজন্য বিদআত পন্থীরা ক্বাওমী আলেমগণকে ওহাবী বলে গালিগালাজ করত৷ ইদানীং সৌদীদের সাথে আমাদের ক্বাওমী আলেমগণের দূরত্ব বেড়ে চলেছে৷
কিছু আলেমের সাথে আক্বীদা বা বিশ্বাসগত কারনে দূরত্ব৷ আর কিছু আলেমের সাথে রাজনৈতিক এবং ব্যবসায়িক মনোবৃত্তির কারনে দূরত্ব৷ বিশ্বাসগত কারনে যে দূরত্ব সেটা ইনশাআল্লাহ এক সময় ঠিক হয়ে যাবে৷ আর রাজনৈতিক এবং ব্যবসায়িক মনোবৃত্তির কারনে যে দূরত্ব সেটা আদৌ ঠিক হবে কি না, আল্লাহ ভালো জানেন৷

ব্যবসায়িক বিষয়গুলো হলো মাজার, পীর, সূফী, দরবেশ ইত্যাদি৷ আর রাজনৈতিক ক্ষেত্রে দেখা যায়, কারো যদি একটা মাদ্রাসা আর কিছু ছাত্র থাকে তিনিই রাজনৈতিক দলের দোকান খুলে বসেন৷ অথচ আল্লাহ পাক পবিত্র ক্বোরানে বলেছেন, "তোমরা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দলে বিভক্ত হয়ো না৷" ঊনারা বলেন, গণতন্ত্র হারাম, কিন্তু ঊনাদের মার্কায় ভোট দিলে পাবেন বেহেশতের আরাম৷
এই গণতন্ত্র আমাদের কি দিয়েছে তার সামান্য ঊদাহরণ দেই- বাবা ছেলেকে বলছে, "সেক্যুলাররা কোন মানুষের বাচ্চাই না৷" ছেলে বাবাকে বলছে, "জাতীয়তবাদীরা সব পাগল৷" ভাই ভাইকে বলছে, "জামাত-শিবির রগ কাটা রাজাকারের দল৷" অপর ভাই বলছে, "পীর হইলো ঈমাণ চোর, ভন্ড৷" এদের সাথে আমার রক্তের সম্পর্ক৷
অনলাইনেও আমরা প্রতিদিন অহরহ জারজ, কুত্তা, শুয়োর এ ধরনের শব্দে একজন আরেকজনকে গালাগাল করছি৷ ধর্মীয় দিক দিয়ে আমাদের মাঝে একজন অপরজনকে সংশোধনের যতটুকু না উদ্দেশ্য থাকে তার চেয়ে বেশি থাকে দলীয় উদ্দেশ্য৷
আমরা প্রায় সবাই গণতান্ত্রিক দলের জন্য জীবন দেওয়া, জীবন নেওয়া, আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা মুসলমান৷ অথচ রাসূল (সাঃ) বলেছেন, "আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী বেহেশতে প্রবেশ করবে না৷" যারা নিজেদের রাসূল (সাঃ) ওয়ারিশ পরিচয় দিয়ে আমাদেরকে ইসলামের পথে আহবান করেন তারা নিজেরাই একে অপরের কাপড় খুলতে ব্যস্ত৷
রাসূল (সাঃ) বলেছেন, "খাঁটি মুসলমান ঐ ব্যক্তি যাহার হাত ও মুখ থেকে অপর মুসলমান নিরাপদ থাকে৷" আর আমাদের কাছে, "খাঁটি মুসলমান ঐ ব্যক্তি যে আমার দল করে৷" দলের জন্য নিজের বাবা-মেয়েকে, মা-ছেলেকে, স্বামী-স্ত্রীকে, ভাই-ভাইকে ছোট করার সামান্য প্রবণতাও সৌদীদের মাঝে নেই৷
এখানে ধর্মের বাণীকে বিকৃত করে নিজের ব্যক্তি স্বার্থ বা দলের স্বার্থ হাসিল করতে গেলে সৌদী শরীয়াহ পুলিশ পিঠাই পাছা লাল কইরা দিবে৷ তো আমাদের মত দলবাজ ধার্মিক এবং আমলহীন আলেমদের কাছে সৌদীকে অমুসলিম, ইহুদী, আমেরিকার দালাল মনে হতেই পারে৷

পঠিত : ১০০৩ বার

মন্তব্য: ০