Alapon

যেমন ছিলেন গ্রেট হুমায়ূন ফরীদি...

জাহাঙ্গির নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আল বেরুনী হল। হলের মূল ফটকে হলের নামের শুধু ‘আল’ আছে বাকিটা ভেঙে পড়ে গেছে। হলের নামের বাকি অংশ ঠিক করার জন্য, হল কতৃপক্ষকে বহুদিন বলার পরও কোনো সুরাহা হচ্ছিল না।

একদিন সকালে উঠে দেখা গেল, হলের মূল ফটকে লেখা ‘আল হুমায়ূন ফরীদি’ হল। এই হলেই বাস করতেই গ্রেট অভিনেতা হুমায়ূন ফরীদি। আর এই ঘটনা আমাদের হুমায়ূন ফরীদি সাহেবই ঘটিয়েছিলেন। এর ২৪ ঘন্টার মধ্যে হলের নাম ফলক মেরামত করা হয় এবং মূল ফটকে দৃশ্যমান হয় ‘আল বেরুনি হল’।

আর একদিনের কথা! খুব ভোর বেলা আচমকা গুলির শব্দে হুমায়ূন ফরীদি সাহেবের ঘুম ভেঙে গেল। খবর নিয়ে জানতে পারলেন, অতিথি পাখি স্বীকার করার জন্য কে বা কারা গুলি চালাচ্ছে। হুমায়ূন ফরীদি প্রচন্ড ক্ষেপে গিয়ে হোস্টেল বয়কে বললেন, ‘যাতো, যে গুলি করতেছে তাকে বেঁধে নিয়ে আয়।’ এ কথা বলে হুমায়ূন ফরীদি ঘুমিয়ে পড়লেন। এর কিছুক্ষণ পর চিল্লাচিল্লির শব্দে তাঁর ঘুম ভেঙে গেল। শব্দ শুনে মনে হচ্ছিলো বিরাট গ্যানজাম হয়েছে।

হুমায়ূন ফরীদি রুম থেকে বেরিয়ে দেখলেন, হোস্টেল বয়রা সত্যি সত্যিই সেই পাখি শিকারীকে দড়ি দিয়ে বেঁধে নিয়ে এসেছে। হুমায়ূন ফরীদি তাড়াতাড়ি করে তার দড়ি খোলার ব্যবস্থা করলেন এবং রুমে নিয়ে বসালেন। লোকটাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘নাস্তা করেছেন? আমার সাথে নাস্তা করেন।’

হোস্টেলের বয়রা নাস্তা নিয়ে আসলে হুমায়ূন ফরীদি নাস্তা খেতে খেতে বললেন, ‘পাখি মারা ভালো কাজ না। আর কখনো পাখি মারতে আসবেন না। ঠিক আছে?’
এই ঘটনা শিকারিদের কানে পৌঁছতে বেশি সময় লাগল না। এরপর থেকে জাহাঙ্গির নগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শীতকালীন অতিথি পাখি স্বীকার প্রায় বন্ধ হয়ে যায়!

সর্বশেষ ঘটনা বলি! হুমায়ূন ফরীদি তখন মাস্টার্স শেষ করেছেন। এদিকে ঈদ চলে এসেছে; কুরবানির ঈদ। চাকরি-বাকরি নাই। বাড়িতে গেলে নানা জনে নানা কথা বলে। তাই হুমায়ূন ফরীদি হলেই ঈদ করার সিদ্ধান্ত নিলেন। হুমায়ূন ফরীদি দেখলেন, তারমত আরও অনেকেই হলে ঈদ করতেছে।

তখন হুমায়ূন ফরীদি কয়েকজন ছাত্রকে সাথে নিয়ে, ঈদের আগের দিন প্রক্টর স্যারের বাসায় গেলেন। বাসায় প্রবেশ করার সময় দেখলেন, স্যারের কুরবানির গরুটা বাহিরে বেঁধে রাখা! হুমায়ূন ফরীদিরা স্যারকে ছাত্রদের জন্য একটা গরু দিতে বললেন। কিন্তু প্রক্টর স্যার বললেন, ‘আজ ঈদের আগের দিন! তাছাড়া তেমন কোনো বাজেটও নেই। এখন সম্ভব না।’

হুমায়ূন ফরীদিরা হতাশ হয়ে প্রক্টর স্যারের বাড়ি থেকে বের হলেও, তাদের আর হতাশা রইল না। বাড়ির বাহিরে বেঁধে রাখা গরুটাই তারা নিয়ে গেল।

নামায শেষে কুরবানি করে নিজেদের খাওয়ার জন্য গুরুর দুটি পা রেখে স্যারের বাড়িতে গরুর দুটি পা পাঠিয়ে দিলেন।

এরকমই ছিলেন, আমাদের গ্রেট অভিনেতা হুমায়ূন ফরীদি। বাংলাদেশের অভিনয় জগতে যাদের অভিনয় দেখে মুগ্ধ হয়েছি, তার মধ্যে হুমায়ূন ফরীদি অন্যতম। আজ এই গ্রেট অভিনেতার ৭ম মৃত্যুবার্ষিকী।

আজ এই দিনে এই গ্রেট অভিনেতার জন্য দোয়া করছি, আল্লাহ তার ভুলত্রুটিগুলো ক্ষমা করুন। আমীন।

পঠিত : ১৩৩৩ বার

মন্তব্য: ০