তারিখঃ ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১২:১৬
সেই চিরন্তন নিয়মকে গ্রাহ্য করেই আজ বাংলা সাহিত্যে অনতিক্রম্য উচ্চতায় উপনীত কীর্তিমান কবি আল মাহমুদের জীবনাবসান হলো।
‘পার হয়ে যাচ্ছি’নামক একটি কলামে কবি চলে যাওয়া সম্পর্কে লিখেছিলেন ‘আমি যাচ্ছি উদ্দেশ্যহীন এক অপরিসীম পথের টানে’।
তবে কি কবি অনন্তের আহ্বান আগে থেকেই শুনতে পেয়েছিলেন? আবার বলেছেন-‘মাটির শীতলতা আমার মর্মে হাত বুলিয়ে না দিলে আমি শান্তি অনুভব করবো না। আমার জন্য কেউ যদি মৃত্যুর শীতলতা বুলিয়ে দিতে পারতো, তাহলেই আমার বিশ্রাম হতো’।
সৃষ্টির সেরা জীব মানুষের জীবনের মূল্যবোধ জাগানিয়া, মমত্বময় মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি সম্পন্ন, দেশপ্রেমিক, মানুষের মঙ্গল প্রত্যাশী, মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো সমৃদ্ধ এক কল্যাণময় মাতৃভূমির স্বাপ্নিক, প্রগতি ও সমাজ বদলের প্রেরণা, কাব্য ও সাহিত্য সাধক আল মাহমুদ তার কাঙ্ক্ষিত অপরিসীম পথ ধরেই যেন আজ শীতলতা খুঁজে পেয়েছেন।
তার কবিতা সমগ্রে “আমি আর আসবো না বলে” কবিতায় সহজ-সাবলীলভাবে কবির মুখে বিদায়ের সুর এভাবেই বেজে উঠেছে -
আমি আর আসবো না।
প্রতিটি নামের শেষে, আসবো না।
পাখি, আমি আর আসবো না।
নদী, আমি আর আসবো না।
নারী, আমি আর আসবো না, বোন।
আজ অতৃপ্তির পাশে বিদায়ের বিষণ্ণ রুমালে
কে তুলে অক্ষর কালো, ‘আসবো না’
সুখ, আমি আসবো না।
দুঃখ, আমি আসবো না।
প্রেম, হে কাম, হে কবিতা আমার
তোমরা কি মাইলপোস্ট না ফেরার পথের ওপর?
তেমনি তিনি ‘অস্তাচলে নাম লিখেছি’কবিতায় বার্ধক্য-মৃত্যুকে সুরে-ছন্দে উপভোগ্য করতে চেয়েছেন এভাবে -
বদনখানি নেতিয়ে পড়া হাল ভাঙা এক নাও
তাহার মাঝে বিরাজ করে তার বাঁধা এক লাও।
লাওয়ের খোলে গান বেঁধেছি, ‘সোনার ময়না রে
পিঞ্জিরা তো প্রাচীন হইল এবার উড়াল দে’।
জীবনে তার বৈরি সময় এসেছে বহুবার। কিন্তু তিনি কবিতার আঙিনা ছেড়ে কোথাও যাননি কোনো দিন। যেকোনো অনুশাসন– তা জীবনের হোক বা সাহিত্যের, অথবা সমাজের– তিনি প্রত্যাখ্যান করতে চেয়েছেন এক রাজকীয় অবহেলায়। ১৯৯০ দশক থেকে ব্যক্তি জীবনে ইসলামের অনুবর্তী হয়ে কবি আল মাহমুদ সমালোচনার শিকার হয়েছেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ইসলামকে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। এবং নিজেকে একজন বিশ্বাসী মুসলমান মনে করতেন। এটা নিয়ে তার কোনো রাখ-ঢাক ছিল না।
পঠিত : ৪০৫৮ বার
মন্তব্য: ০