Alapon

ওবায়দুল কাদেরের অসুস্থতা এবং মানুষের হাস্যরসের নেপথ্যে...


সকালে আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বুকের ব্যাথা নিয়ে মেডিকেলে ভর্তি হন। তারপর তাকে আসিইউতে স্থনান্তর করা হয়। অবশেষে জানা গেছে, ওবায়দুল কাদেরের বুকে তিনটি ব্লক ধরা পড়েছে। যদিও তিনি আশঙ্কামুক্ত নন। একজন মানুষ যিনি কিনা সরকারী দলের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা এবং সরকারের খুবই গুরুত্বপূর্ণমন্ত্রী, তিনি হার্টএ্যাটাক করে হাসপাতালে আইসিইউতে ভর্তি আছেন অথচ তার দেশের জনতা এটাকে নিয়ে ট্রল করছে; হাসাহাসি করছে! কিন্তু কেন?

এরকম একজন গুরুত্বপূর্ণ মানুষের অসুস্থতা নিয়ে ট্রল করা নিয়ে যদি মন্তব্য করতেই হয় তবে বলব, এগুলো তাদের নিজের হাতের কামাই। ওবায়দুল কাদেররা দেশের গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে মাঝে মাঝে এমন কিছু মন্তব্য করেছেন, যা শুনে মানুষ প্রচন্ড বিরক্ত হয়েছিল। যেমন রানা প্লাজার কথাই ধরুন। সাভারে রানা প্লাজা ধসের কারণে তৎকালীন সময়ে সরকার স্বাভাবিক ভাবেই চাপে পড়েছিল; বৈদেশিক এবং আভ্যন্তরীণ চাপ। আরও স্বাভাবিকভাবে বিরোধীদল চাইবেই এগুলোকে ইস্যু করে সরকারের অযোগ্যতা প্রমাণ করতে। বিরোধী দল যেন ইস্যু বানাতে না পারে, সে কারণে আওয়ামীলীগ সরকারের তৎকালীণ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহিউদ্দিন খান আলমগীর বলেছিলেন, ‘রানা প্লাজা ধসের পিছনে স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি জামায়াত-শিবিরের হাত রয়েছে। শিবিরের ছেলেরা বিল্ডিংয়ের পিলার ধরে ঝাঁকুনি দেওয়ায় রানা প্লাজা ধসে গেছে।’

যে সরকারের মন্ত্রীরা রানা প্লাজায় নিহত হওয়া ১১৭৫ জন শ্রমিকের সাথে উপহাস করতে পারে, তাদের অসুস্থতার খবরে মানুষ একটু ট্রল করতেই পারে।

মনে আছে, সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনির কথা?

সাগর-রুনি হত্যাকান্ডের পর তৎকালীণ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন বলেছিলেন, আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে খুনিদের অবশ্যই গ্রেফতার করা হবে। আজ ৬ বছর পার হয়ে যাওয়ার পরও একজন খুনিকে গ্রেফতার করাতো দূরের কথা, তদন্ত রিপোর্ট পর্যন্ত জমা দেওয়া হয়নি।

সাগর-রুনি হত্যাকান্ডের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রশ্ন করা হলে তিনি রেগে গিয়ে বলেন, ‘কারও বেডরুম পাহারা দেওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়।’ দেশের প্রধানমন্ত্রী যখন এমন দায়িত্ব-জ্ঞানহীন মন্তব্য করতে পারেন, তখন তাদের অসুস্থতার খবরে জনগন হাসি-তামাশা করতেই পারে।

সর্বশেষ, চকবাজারের অগ্নিকান্ডের ঘটনা নিয়ে বলি। নিমতলী ট্রাজেডির কারণে, চকবাজারের অগ্নিকান্ড নিয়ে প্রায় সবারই কিছুটা ধারণা ছিল; এটা ক্যামিক্যালের কারণে হতে পারে। ঠিক তখনই সরকারের তথ্য মন্ত্রী হাসান মাহমুদ বললেন, ‘চকবাজার অগ্নিকান্ডের পিছনে বিএনপির হাত থাকতে পারে। সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ডে ঈর্ষান্বিত হয়ে বিএনপি এমন ঘটনা ঘটাতেই পারে।’

চকবাজারে নিহত হওয়া ৭৮ জন মানুষের সাথে এ কেমন রসিকতা?

যারা এহেন নগ্ন এবং অসুস্থ মন্তব্য করতে পারে, তাদের অসুস্থতায় জনতা ট্রল বা রসিকতা করতেই পারে এবং করা উচিতও!

এটা ঠিক কোনো সুস্থ মানুষ অন্যের অসুস্থতায় খুশি হতে পারে না। স্বাভাবিকতা হল, কেউ অসুস্থ হলে তার জন্য দোয়া করা। আর এরূপ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের জন্য জাতি জামায়াত করে দোয়া-খায়ের করে।

কিন্তু যেখানে আপনার কথা বলার ক্ষমতা নেই, তাদের এরূপ অযৌক্তিক মন্তব্যকে রুখে দেবার সুযোগ নেই, তখন জনগন বাধ্য হয়েই তাদের এহেন ব্যক্তিগত বিপদে আনন্দ উল্লাস প্রকাশ করে। জনতা জামাত করে, ট্রল ও রসিকতা করে। এতে জনগনের দোষ আছে বলে আমার মনে হয় না। এগুলো ওবায়দুল কাদেরদের নিজের হাতের কামাই।

পঠিত : ১৯১৩ বার

মন্তব্য: ০