Alapon

আমাদের অবস্থা ‘শর্ট টার্ম মেমোরি লস’ রোগিদের মত!

সময়টা ২০১৫ সালের কথা। রংপুর থেকে এক ভাই ঢাকায় আসলেন, চাকরির উদ্দেশ্যে! বেশ কিছুদিন খোঁজাখুঁজির পরও কোনো চাকরি জোটাতে পারলেন না। তখন আমিও ঢাকায় নতুন।

তারপরও চেষ্টা-তদবির করে তার জন্য একটা চাকরির ব্যবস্থা করতে কিঞ্চিত সাহায্য করেছিলাম। বেতন ছিল অতি সামান্য; মাত্র ৪ হাজার টাকা। তারপরও সে সন্তুষ্ট ছিল। বলেছিল, কিছু না করার চেয়ে একটা কাজ করছি এটাই বড় ব্যাপার। আলহামদুলিল্লাহ।

৪ হাজার টাকায় চাকরি শুরু করা সেই ভাই এখন প্রায় ৩০ হাজারের মত বেতন পান! কয়েকদিন তাকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘কী অবস্থা ভাই?’
তিনি বললেন, ‘একদমই ভালো না! যে বেতন পাই তাতে বিয়ে করে বউ নিয়ে ঢাকায় থাকা সম্ভব না। জীবনে কিছুই করতে পারলাম না।’

এবার এক ছোট ভাইয়ের কথা বলি। তার সাথে আমার প্রথম যখন দেখা হয় তখন তার হাতে ছিল একটা ফিচার (কি-প্যাড যুক্ত) ফোন। খুব সম্ভবত নকিয়া ব্র্যান্ডের মোবাইল ছিল। মোবাইলটা অবস্থা খুব একটা ভালো ছিল না। মোবাইলটা রাবার দিয়ে বেঁধে রাখতো হতো, না হয় ব্যাটারি খুলে দৌড় দিত! তার উপর সেটাকে অটো চার্জারে চার্জ দিতে হতো। এ কারণে সে-সময় তাকে রাত ১১ টার ফোন দিলে কখনোই পাওয়া যেত না। মোবাইল বন্ধ করে ব্যাটারি খুলে অটো চার্জারে চাজ দিত।

সেই ছোটভাই এখন স্যামসাংয়ের মোটামুটি দামের একটা স্মার্ট মোবাইল ব্যবহার করে। বইমেলায় তার সাথে দির্ঘদিন পরে সাক্ষাৎ হল! জিজ্ঞেস করলাম, ‘তোর অবস্থা কী রে?’
সে বলল, ‘ভালো না ভাই! বন্ধুগো প্রায় সবার হাতে আইফোন। আজ পর্যন্ত আমি কিনবার পারলাম। জীবনে কিচ্ছু করবার পারলাম নাহ!’

আর এক বড় ভাইয়ের গল্প বলে ক্ষ্যান্ত দিচ্ছি! বড় ভাই কর্পোরেট জব করেন। বছর তিনেক আগে মোটামুটি ধার-দেনা করে জিক্সার বাইক কিনেছিলেন। বাইক কেনার সময় তিনি আমার মত ফকিরের কাছেও ধার চাইতে ভুল করেননি। বাইক কেনার সময় বললেন, ‘তুই কয় টাকা ধার দিবি?’

সেই ভাই এখন বলছেন, ‘জীবনে কিছুই করতে পারলাম না! কলিগরা প্রায় সবাই প্রাইভেট কার কিনে ফেলেছে। আর আমার অবস্থা দেখ! এই শালার জিক্সারেই পড়ে আছি। অফিসে মান-সম্মান বলে কিচ্ছু নাইরে! জীবনটা শ্যাষ!’

উপরের তিনজন ব্যক্তির অবস্থান এবং ঘটনাচক্র ভিন্ন হলেও, তাদের একটি জায়গায় দারুণ মিল! তারা অতি সহজেই তাদের পূর্বের অবস্থা ভুলে গিয়ে নৈরাশ্যবাদিদের কাতারে সামিল হয়েছে। আর নৈরাশ্যবাদি হয় তারাই, যারা অকৃতজ্ঞ। আমাদের সকলের অবস্থাই প্রায় উপরের ঘটনাগুলোর মত।

অথচ আমরা ভাবি না, আমাদের শুরুটা কীরূপ ছিল আর বর্তমানে আল্লাহ কীরূপ রেখেছেন। এই পর্যায়ে এসে আমাদের অবস্থা ‘শর্ট টার্ম মেমোরি লস’ রোগীদেরন্যায় হয়।

আমরা যদি আমাদের পুরো জীবনটাকে নির্মোহ এবং ইনসাফপূর্ণ রিভিউ করি তাহলে দেখব, আমরা জীবনে অনেক কিছু করেছি। সত্যিই অনেক কিছু করেছি। এমনও কিছু করেছি, যা করার যোগ্যতা আমার বা আমাদের ছিল না। তাহলে কীভাবে সম্ভব হয়েছে?

মহান আল্লাহরাব্বুল আলামীনের রহমতে! আল্লাহপাক জীবনে এতোকিছু দিয়েছেন, যা বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না। অথচ আমরা এক নিমিষের মধ্যেই ‘জীবনে কিছুই করতে পারলাম না’ বলে আল্লাহর রহমতগুলোকে অস্বীকার করে ফেলি। অথচ আমরা যদি একটু কৃতজ্ঞ হতাম তাহলে আল্লাহর রহমতের পরিমাণটা আরও বৃদ্ধি পেত।

আর এ কথা আল্লাহই বলেছেন, “আর স্মরণ করো, তোমাদের রব এই বলে সতর্ক করে দিয়েছিলেন যে, যদি কৃতজ্ঞ থাকো, তাহলে আমি তোমাদের আরও বেশি দিবো। আর যদি নিয়ামতের প্রতি অকৃতজ্ঞ হও, তাহলে আমার শাস্তি বড়ই কঠিন।” (সূরা ইব্রাহিম- ৭)

আল্লাহপাক আমাদের নৈরাশ্যবাদ থেকে দূরে থাকার তৌফিক দান করুন এবং কৃতজ্ঞ মানুষের অন্তভুক্ত হবার সৌভাগ্য দান করুন। আমিন।

পঠিত : ২০৬০ বার

মন্তব্য: ০