Alapon

পুরনো দিনের গান আর আজকের কমার্শিয়াল গানের মাঝে মৌলিক পার্থক্য!

বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে প্রায়ই যাওয়া হয়। আমার সাবজেক্ট সম্পর্কিত কোন সেমিনারের সংবাদ পেলে উপস্থিত থাকার চেষ্টা করি।

বিভিন্ন সেমিনারে যেতে যেতে এক আপুর সঙ্গে পরিচয় হয়। তিনিও আমার মত সেমিনারের সংবাদ পেলে উপস্থিত হন। আর এভাবে ঘটনাচক্রে তার সাথে আমার পরিচয় হয়। তিনি বয়সে আমার কয়েক বছরের সিনিয়র হবেন। আমি 'আপু' বলে সম্বোধন করতে চাইলেও তিনি বাধ সাধলেন। বললেন, 'নো আপু! অনলি জান্নাত বলবা!'

তিনি আমাকে প্রায়শ অদ্ভুত অদ্ভুত প্রশ্ন করেন। গতবার দেখা হলে তিনি বললেন, ' আচ্ছা, ছোটবেলায় আমরা যেসব গান শুনতাম সেগুলোর বেশিরভাগই কিন্তু আমাদের স্মরণে আছে। ছোটবেলায় মনের অজান্তে সেই গানগুলো গুনগুনিয়ে গাইতাম। মনে এক ধরনের দোলা দিয়ে যেত! এখন সবগুলো স্মরণ না থাকলেও ঘটনাচক্রে কোনো একটা স্মৃতির সাথে সেই পুরনো গানগুলো মনে পড়ে যায়।'
আমিও মাথা নেড়ে সায় দিলাম, 'হ্যা, আমারও এমন হয়।'

তখন বললেন, 'এখনো তো গান হচ্ছে; গান গুনিও। কিন্তু সেগুলো আমার বা আমাদের মনে দোলা দিয়ে যায় না কেন?'

তাকে বললাম, 'আমি গান বিশারদ নই। বর্তমান সময়ের সব গান শুনিও না। গান গুলো মনে দোলা দিতে পারছে কেন, তার সঠিক জবাব আমার কাছে নেই। তবে একটা ছোট্ট ঘটনা বলি, যা আপনার উত্তর খুঁজে পেতে সহায়ক হতে পারে। তার আগে একটা প্রশ্ন করি, আপনি কি আজম খানের 'পাপড়ি কেন বোঝে না' গানটা শুনেছেন?'

তিনি বললেন, 'উহু! শুনিনি তো।'
তখন ইউটিউব থেকে গানটা বের করে ওনাকে শুনতে বললাম। গান শোনা শেষ হলে বললাম, এই গানটা আজম খান নিজেই লিখেছিলেন। সম্ভবত সময়টা ১৯৭৫ সালের কথা হবে। আজম খানরা পুরান ঢাকার বাসিন্দা। তার চাচার বাসায় এক পরিবার ভাড়া থাকত, তাদের মেয়ের নাম ছিল পাপড়ি। সেই পাপড়িকে একদিন এলাকার উড়তি মাস্তানরা বিরক্ত করলে, আজম খান তাকে সেখান থেকে উদ্ধার করেন। এরপর আজম খান পাপড়িকে দেখার জন্য প্রায়ই চাচার বাড়িতে যেতেন।

এভাবে বছর পেরিয়ে যায়। একদিন আজম খান চাচার বাসায় এসে দেখেন, পাপড়িরা বাসা পরিবর্তন করে চলে যাচ্ছে। সেদিন আজম খান বেশ কষ্ট পান। এর মাস ছয়েক পর জানতে পারেন, পাপড়ির বিয়ে! আর পাপড়ির বিয়ের রাতে পপ সম্রাট আজম খান তার এই অমর সৃষ্টি 'পাপড়ি কেন বোঝে না' গানটা রচনা করেন।

সম্ভবত আগের গানগুলো  যতটা না ব্যবসায়িক কারণে লেখা হত, তার চেয়ে ঢের জীবনের প্রয়োজনে লেখা হত! যার কারণেই হয়ত, সেই গানগুলো আমাদের মনে দেলা দিতে পেরেছে! গানের রেশগুলো রয়ে গেছে প্রজন্মের পর প্রজন্ম।

আর বর্তমানের অধিকাংশ গান লেখা হয় বাণিজ্যিক প্রয়োজনে! যার কারণে, গান শেষ হওয়ার সাথে সাথে বাতাসের সাথে তার রেশটাও দূর কোনো জঙ্গলে হারিয়ে যায়।

পঠিত : ২৭০৯ বার

মন্তব্য: ০