Alapon

বাংলাদেশীদের সৌদি বিদ্বেষ পর্ব ১৪

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
   নতুন বৌ এর ঘর ঝাড়ু দেখে শ্বাশুড়ির প্রতিক্রিয়া, "কেমন মায়ের মেয়ে তুমি, ঘর ঝাড়ু দেওয়াটাও শেখায়নি?" রান্না দেখে, "এই রান্না মানুষতো দূরের কথা হাঁস-মুরগীও খেতে পারবে না৷" গোসলে, "ও লো নবাবের বেটি গোসল করতে কতক্ষণ লাগে?" বৌ এর উঠতে দোষ, বসতে দোষ৷ সব দোষ কিন্তু বৌ এর না, শ্বাশুড়িরও কিছু দোষ আছে৷ সে দোষটা হলো মানসিক৷
প্রতিটা মানসিক দোষের একটা অতীত আছে৷ শ্বাশুড়ি যেদিন বৌ হয়ে এসেছিলো, সেদিন তার শ্বাশুড়িও তাকে এভাবে নিপীড়ন করেছিলো৷ তার অবচেতন মনে সেদিন প্রতিশোধের যে স্পৃহা কাজ করছিলো, আজ নতুন বৌ কে নিপীড়ন করে তিনি বদলা নিচ্ছেন৷ সৌদী আরবের সাথে আমাদের সম্পর্কটা হলো বৌ-শ্বাশুড়ির মত৷ আর এই বৌ-শ্বাশুড়ির সম্পর্ক তৈরিতে আমাদের মত প্রবাসীদের বিরাট ভূমিকা আছে৷
এক সময় দেশে থাকতে সৌদী প্রবাসীদের কাছে শোনতাম, সৌদীরা এত খারাপ যে বাবার ভয়ে মা- মেয়েকে আলাদা রুমে রাখে, ভাইয়ের ভয়ে বোনকে নিয়ে মা-বাবা শংকিত থাকে৷ শুক্রবারে হজ্ব হলে সৌদী বাদশাহ হাজীদেরকে অনেক উপঢৌকন দিতে হয়, তাই শুক্রবার যাতে হজ্ব না হয় সেজন্য সৌদী সরকার চাঁদের তারিখ পরিবর্তন করে৷ সৌদী নিয়ে এ ধরনের অনেক মিথ আমাদের দেশে প্রচলিত আছে৷
রাসূল (সাঃ) বলেছেন, "তোমাদের সন্তানদেরকে নামাযের আদেশ দাও যখন তাদের বয়স সাত বছর হবে। আর দশ বছর বয়স হলে নামাযের জন্য তাদেরকে প্রহার কর এবং তাদের পরস্পরের বিছানা আলাদা করে দাও।" উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় ফকীহগণ সাত বছর আবার কেউ দশ বছরে বিছানা আলাদা করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন৷ তবে দশ বছর বয়সে যে বাচ্চাদের বিছানা আলাদা করা ওয়াজিব এ বিষয়ে সকলে একমত৷ আধুনিক যৌন বিজ্ঞানীরাও বাচ্চাদের আলাদা বিছানায় ঘুমানোর ব্যবস্থা করার গুরুত্ব স্বীকার করেন৷
রাসূল (সাঃ) সাহাবীগণকে প্রতি চন্দ্রমাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ রোযা রাখতে বলেছেন৷ আমাদের দেশে এটা প্রচলিত না থাকলেও আরবের অনেকে এই সুন্নাহটি পালন করেন৷ এছাড়া রমজান, ঈদুল ফিতর, হজ্ব, ঈদুল আযহার মত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতগুলো চাঁদ দেখার উপর নির্ভরশীল৷ সেজন্য সৌদীতে চাঁদ দেখা কমিটি আছে৷ মেঘলা আকাশ বা কোন প্রাকৃতিক দূর্যোগের কারনে কমিটি যদি চাঁদের অবস্থান নির্ণয় করতে ব্যর্থ হয় তাহলে সুপ্রীম কোর্টের বিচারপতিগণ এব্যাপারে সিদ্ধান্ত দিবেন৷
শায়খ আবদুর রহমান আল সুদাইসীর মত যাদের ইসলামী শরীয়াহ সম্পর্কে জ্ঞান আছে তাদেরকেই সাধারণত এখানে বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া হয়৷ কোটি কোটি মুসলমানদের ইবাদত যে চাঁদ দেখার উপর নির্ভরশীল সে চাঁদ নিয়ে এসব আলেমগণ হঠকারী সিদ্ধান্ত নিবেন, এসব বিশ্বাস করার মত কোটি কোটি বাঙ্গালী পাবেন আমাদের দেশে৷ এসব খবর কিভাবে ছড়ায় সেটা বলার আগে, যারা ছড়ায় তাদের সম্পর্ক বলি—
আমাদের জাতিগত বদঅভ্যাস হলো অন্যের ব্যক্তিগত বিষয়ে জানা এবং অন্যকে নিজের ব্যক্তিগত বিষয়ে জানানো৷ অন্যান্য দেশের লোকেরা হজ্ব ওমরাহ করতে আসলে জিয়ারত করার জন্য ঐতিহাসিক স্থান সমূহের নাম জানতে চায়, আর আমাদের দেশে লোকেরা এসে জিজ্ঞেস করবে বেতন কত? মাসে কত থাকে? কয় ঘন্টা ডিউটি? বাড়িতে কি কি করছেন? বৌ আছেনি? বাচ্চা-কাচ্চা কয়জন? ইত্যাদি ইত্যাদি যার সাথে ইবাদতের কোন সম্পর্কই নাই৷
ইউরোপ, আমেরিকা থেকে যারা আসেন তারা এখানকার শ্রমিকদের কষ্ট শোনে আফসোস করেন৷ তারপর ইউরোপে হেন আছে, আমেরিকায় তেন আছে গল্প শুরু করেন৷ ইউরোপ, আমেরিকার হেন-তেন গল্প বলা এসব ভাইদের যদি বলি আমাকে একটা ভিসা দেন, তখন তারা আবার নতুন কাহিনী শুরু করেন৷ এসব দেশের ভিসা পাওয়া কি এত সোজা? ভিসা পাইলে দূতাবাসের কর্মীরা গিয়ে চেক করে, বিশ-তিরিশ লাখ ব্যাংক এ্যাকাউন্ট শো করা লাগে, বিয়া করলে বৌ ঐখানে যাই মামলা করবে তারপর মামলার রায় হলে ভিসা আসবে ইত্যাদি, ইত্যাদি মানে আবারো হেন-তেন৷
এসব কাহিনীওয়ালা লোকদের আমি মুখের উপরই বলে দেই, ভাই, আমাদের এখানে আসতে অতকিছু লাগে নাই৷ ভিসা পাইছি, মেডিকেল ওকে তারপর বিমান উঠে গেছি৷ সৌদী বিমানে আমাকে দুইবার অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতির শিকার হতে হয়েছে৷ আমার সীটে অন্য যাত্রী বসে গেছেন৷ আমি ঊনাকে বললাম, এটা আমার সীট, আপনি আপনার সীটে যান৷ তিনি বললেন, আমাকে বিমান বালা বসতে বলছে৷ ফিলিপিনো বিমান বালাকে বললাম, আমার সীটে আপনি অন্যকে বসতে দিলেন কেন?
এবার বিমান বালা লোকটাকে উঠতে বললো, কিন্তু তিনি উঠলেন না৷ অবস্থা বেগতিক দেখে তিনি তার মিশরীয় কলিগের দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন৷ মিশরীয় লোকটা তাকে কিছু না বলে আমাকে বললেন, সরি, সীট নাম্বার ঠিক করতে করতে প্রতিবার ঢাকা ফ্লাইটে ১৫-৩০ মিনিট দেরী হয়৷ তাই যে যেখানে খালি সীট পাও সেখানে বসে যাও৷ নিজেদের সীট নাম্বারটা দেখে বসার মত নূন্যতম অক্ষরজ্ঞান নেই, আইন বোঝে না এমন ৮০% বাঙ্গালী সৌদীতে জব করেন৷
আসার সময়ও অন্যজনকে দেখি আমার সীটে, পূর্ব অভিজ্ঞতার কারনে এবার আর কিছু বলা হয় নি৷ আমি প্রায় পাঁচ বছর আগের কথা বলছি, বর্তমানে এ অবস্থার উন্নতি হয়েছে কি না, যারা ইতিমধ্যে ভ্রমণ করেছেন তারা ভালো বলতে পারবেন৷ ইউরোপ-আমেরিকায় এমন নিরক্ষর বাঙ্গালী কয়জন আছেন তা সেখানকার প্রবাসী ভাইরা ভালো জানেন৷
আমার এক আত্মীয় দেশে মানুষের জমিনে হালচাষ করতেন৷ সৌদীতে তার চার, পাঁচটা দোকান হয়েছে৷ দেশে কোটি টাকার উপরে সম্পদ হয়েছে৷ ঊনাকে যদি সৌদীর ব্যাপারে জিজ্ঞেস করতাম বলতেন, সৌদীদের মত অমানুষ দুনিয়াতে আর নেই৷
আরেক লোক এক সৌদী প্রবাসীর বাড়ির রাখাল ছিলো৷ বর্তমানে বাংলাদেশেই তিনি মাসে এক লক্ষ টাকা বাড়ি ভাড়া পান, সম্পদের হিসাব নাইবা বললাম৷ এই ভদ্রলোককে জিজ্ঞেস করলে বলে, সৌদীতে মানুষ থাকে নাকি? এই লোক ডায়বেটিস এবং হার্টের রোগে ভূগছেন, মেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন এখনো সৌদী আরব ছাড়েন নাই৷
অন্য একজন দেশে মাছ বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন৷ বর্তমানে তার উত্তরায় একটা, নারায়নগঞ্জে একটা, কুমিল্লায় দুইটা বাড়ি৷ "সৌদীদের মত জানোয়ার আর নেই" এটাই তার জপ কিন্তু আজও সৌদীতেই আছেন৷
কারো ব্যক্তিগত জীবন উল্লেখ করে তাকে ছোট করা আমার উদ্দেশ্য নয়, আর কোন হালাল কাজকেই আমি ছোট মনে করি না৷ শুধু লোকগুলো কোথায় ছিলো? আজ কোথায় এসেছে? এবং তাদের মনোভাব বোঝানোর জন্যই এসবের অবতারণা করা৷ এসব লোকগুলোকে যদি সৌদী আরবের বাদশাহীও দেওয়া হয় তবু এরা সন্তুষ্ট হবে না৷ কারন রাসূল সাঃ বলেছেন, "আদম সন্তানের যদি দুইটি স্বর্ণ ভরা পাহাড় থাকে, তবে সে তৃতীয় পাহাড়ের আশা করবে৷"
সীমাহীন লোভের বাইরে আছে আমাদের ব্যক্তিগত ব্যর্থতাকে অপরের উপর চাপিয়ে দেওয়ার প্রবণতা৷ শুধু মাত্র বিমান ভাড়ার বিনিময়ে আমার খালু তার ছোট ভাইকে এনেছিলেন ঊনার কফিলের কাজে৷ দুই মাস যেতে না যেতেই ঊনার ভাই দেশে চলে গেলেন৷ ছোট ভাইয়ের উপকার করতে গিয়ে বেচারা এখানে কফিলের কাছে ছোট হলেন৷ ওখানে দেশে মা এবং ছোট ভাইয়ের স্ত্রীর বকা শোনলেন, বিমান ভাড়ার টাকাটাও আর পান নি৷ ঊনার ছোট ভাই দেশে গিয়ে কফিল সম্পর্কে যা বললেন, তা যাচাই করার সুযোগ ছিলো না৷
এখানে আসার পর প্রতি বছরই দুই একবার ঊনার কফিলের মাজরায় যাওযা হয়৷ সেখানে গেলে আমাদের জন্য ডিম, মুরগী, কবুতর, উটের দুধ, গাওযা, খেজুর, লেবু যা পাওয়া যায় সবই খাওয়া এবং নিয়ে আসা ফ্রী৷ অতিথি আপ্যায়নে আরবরা অত্যন্ত আন্তরিক৷ কারো কারো মনে হতে পারে এসব খেয়ে আমি ঊনার কফিলের সুনাম করছি, কিন্তু ঐ কফিলের বাঙ্গালী ছাড়াও পাকিস্তানী এবং সুদানী শ্রমিক আছে তাদের সাথেও আমার আলাপ হয়েছে৷ আসলে বৌ ছেড়ে বিদেশ করা সবার পক্ষে সম্ভব না, এই সহজ বিষয়টা সহজে বলা যায় না৷ তার চেয়ে সৌদী কফিলকে বলির পাঁঠা বানানো সহজ৷
আরেক লোক তার কফিলের ভিসায় আপন ভাগিনাকে এনেছিলো৷ তিন মাস না যেতেই ভাগিনা দেশে চলে গেছে৷ তারপর আর কি! সেই পারিবারিক কলহ৷ তার ভাগিনা ছিলো মাদকাসক্ত৷ সৌদীতে আপনি সিগারেট আর মোবাইল ছাড়া সহজে আর কোন নেশা পাবেন না৷ মাদকাসক্তদের জন্য সৌদী মাদক নিরাময় কেন্দ্র, উচ্ছৃঙ্খলদের জন্য জেলখানা৷ বন্দী জীবন সবাই মেনে নিতে পারে না সেক্ষেত্রে, দেশে গিয়ে নির্মম নির্যাতনের একটা গল্প বলে দিলেই সিমপ্যাথি দেখানোর লোকের অভাব হবে না৷
টাঙ্গাইল বাসস্ট্যান্ডে একটা পতিতা পল্লী আছে৷ ওখানে কয়দিন পর পরই উচ্ছেদ, পূনর্বাসন চলে৷ বছর দেড়েক পূর্বে সেখানকার মেয়েদের উচ্ছেদ করে দেওয়ার পর, ওখানকার এক মেয়েকে এক ভদ্রলোক গৃহকর্মীর ভিসায় সৌদীতে নিয়ে আসেন৷ অনেক কষ্টে সে ছয় মাস ছিলো তারপর চলে গেছে৷ তার সমস্যা ছিলো কফিলের স্ত্রী তাকে স্মার্ট ফোন না দিয়ে সাধারণ মোবাইল দিয়েছে৷ সৌদীরা যদি দুপুরে ব্রুস্ট (চিকেন ফ্রাই) খায় তাকেও ব্রুস্ট খেতে হয়৷ তার জন্য আলাদা ভাত-তরকারী রান্না হয় না৷ দেশে এত কিছু না বলে একটা নারী নির্যাতনের গল্প বললে খুব সহজেই সিমপ্যাথি পেয়ে যাবে৷
দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার ৬ই এপ্রিল ২০১৮ এর রিপোর্টে বলা হয়েছে, "পুলিশ সদর দপ্তরের এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১৭ সালে নারী নির্যাতনের মামলা হয়েছে ১৫ হাজার ২১৯ টি, ২০১৬ সালে ১৬ হাজার ৭৩০টি, ২০১৫ সালে ১৯ হাজার ৪৮৬টি, ২০১৪ সালে ১৯ হাজার ৬১৩টি, ২০১৩ সালে ১৮ হাজার ৯১টি, ২০১২ সালে ১৯ হাজার ২৯৫টি এবং ২০১১ সালে ১৯ হাজার ৬৮৩টি। তদন্তে দেখা গেছে, এসব মামলার ৯০ ভাগই ভুয়া।" এটি বাংলাদেশের হিসাব, বিদেশের মামলাগুলো কতটুকু ভূয়া কতটুকু সঠিক এ ব্যাপারে এখন পর্যন্ত সরকার কোন উদ্যোগ নেয়নি৷

এখানে কোন কফিল শ্রমিক নির্যাতন করলে কফিলের অর্থদন্ড এবং কারাদন্ড উভয়ের বিধান রয়েছে৷ সেক্ষেত্রে যেসব গৃহকর্মীরা নির্যাতিত হচ্ছে তাদের পক্ষ নিয়ে দূতাবাস মামলা করলে মেয়েগুলো যেমন স্বাবলম্বী হতে পারবে তেমনি দেশও অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে৷ কিন্তু দূতাবাস মামলা করবে কি করে? ৯ই নভেম্বর ২০১৫ কালের কন্ঠের এক প্রতিবেদনে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম এর বরাত দিয়ে প্রকাশ করা হয়, "মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ বিশেষ করে সৌদি আরবের বিভিন্ন বাড়িতে কর্মরত নারী শ্রমিকদের যৌন হয়রানির তথ্য সঠিক নয়৷"
অনেকে এখানে ইমোশনাল হয়ে মন্ত্রীর উদ্দেশ্যে কটু বাক্য শুরু করবেন কিন্তু আপনাকে মনে রাখতে হবে এসব মন্ত্রীরাই বাহিরের দেশে আপনার, আমার, আমাদের প্রতিনিধিত্ব করেন৷ এদের পেছনেই আমরা স্লোগান দেই৷ নিজের পোলা যেমন তেমন হোক, বৌ ভদ্র হতে হবে এমন আবেগী বাঙ্গালী মায়ের অভাব নেই৷ নিজের দেশের শাসকরা যেমনই হোক সৌদী শাসকরা ভদ্র হতে হবে এমন আবেগী বাঙ্গালীরও অভাব নেই৷
যে কোটিপতি ভদ্রলোকদের কথা বললাম, সারা দিন উঠতে বসতে সৌদীকে গালি গালাজ করে এরা প্রত্যেকেই আবার নিজের সন্তানকে সৌদী আরব নিয়ে এসেছে৷ সৌদী যদি এতই খারাপ, তাহলে এরা নিজেদের সন্তানকে আবার সৌদীতে কেন এনেছে? এদের সন্তানদের মুখেও বাপদের মত সেই পুরাতন বুলি৷ এধরনের লোকদের দেখার জন্য আপনাকে সৌদী আসতে হবে না চোখ, কান খোলা রেখে আপনার আশেপাশে লক্ষ করলেই এমন অনেক সৌদী প্রবাসী পাবেন৷
সৌদী আরবের লোকেরা ছিলো আমাদের দেশের আদিযুগের মানুষদের মত সহজ-সরল৷ পুরাতন দিনের জায়গা-জমির কাগজপত্র নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করলে দেখা যায় একটা বড় ইলিশ মাছ, এক হাঁড়ি মিষ্টি, এক প্যাকেট বিড়ির বিনিময়ে অনেকে জায়গা জমি দান করে দিয়েছেন৷ নাতির যুগে এসে তাদের ভিটেমাটি ছাড়া আর কিছুই নেই৷
কিং সালমান ক্ষমতায় আসার পর থেকে তার ছেলে মুহাম্মদ বিন সালমানই পরোক্ষভাবে দেশ শাসন করেছে৷ এই তরুণ উপলব্ধি করতে পেরেছে সৌদীরা যদি কাজ না করে অলসভাবে বসে থাকে আর প্রবাসী শ্রমিকরা কাজ করে তাহলে একদিন তাদেরও ভিটেমাটি ছাড়া আর কিছু থাকবে না৷ কিভাবে সৌদীদের কাজে লাগানো যায়, এ চিন্তায় সে নতুন নতুন আইন প্রণয়ন করছে৷ এর ফলে আমাদের মত লক্ষ লক্ষ প্রবাসী বেকার হয়েছে, হচ্ছে এবং হবে৷ চাকুরীচ্যূত শ্রমিক মালিকের সুনাম করেছে এমন নজির খুবই কম৷ বাংলার চিরায়ত বৌ-শ্বাশুড়ির দ্বন্ধের মতই আমাদের সৌদী বিদ্বেষ চলতে থাকবে৷
শুরুতেই যেটা বলেছি এখানে যারা কাজ করতে আসে বেশিরভাগ লোকই নিরক্ষর৷ ব্যক্তিগত সমস্যা, অভ্যন্তরীণ সমস্যা, রাষ্ট্রীয় সমস্যা, রাজনৈতিক সমস্যা, ধর্মীয় সমস্যা এসবকে আলাদা আলাদাভাবে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করার ক্ষমতা অনেকেরই নেই৷ কিন্তু আমাদের দেশের শিক্ষিতদের অবস্থাটা কেমন?
এইতো কিছু দিন আগে মুহাম্মদ বিন সালমান মারা গেছে প্রচার করে শিক্ষিত সমাজ ফেসবুকে তোলপাড় করে ফেললো৷ কিন্তু এ খবরটা যখন মিথ্যা প্রমাণিত হলো যেসব শিক্ষিত সমাজ এই সংবাদ প্রচার করেছিলো এবং বিশ্বাস করেছিলো, তাদের কারো মাঝে কি এই মিথ্যা খবর নিয়ে কোন প্রকার অনুশোচনা বা ক্ষমা চাওয়ার প্রবণতা দেখা গেছে? মোটেই না৷ বরং নতুন নতুন আর কি কি গুজব নিয়ে মাতোয়ারা হওয়া যায় তার সন্ধানে মাঠে নামলো৷ এরা আবার নিজেদের দাবী করে ইসলামের সৈনিক!
এদের ইসলাম কায়েমের নমুনা দেখলে পুরাতন এক ঘটনার কথা মনে পড়ে যায়৷ আমার এক ফ্রেন্ড এক হিন্দুকে বলছে, শালা মালাউনের বাচ্চার কত বড় সাহস আমার বাড়ির সামনে মদ খায়! তাকে যতই বাধা দেই ততই সে ক্ষিপ্ত হয়ে মারতে যায়৷ অবস্থা বেগতিক দেখে তাকে স্মরণ করিয়ে দিলাম যে, তার নিজের পকেটেই গাঁজার পুরিয়া আছে৷ পরে জেনেছি ঐ হিন্দুর ভাইয়ের সাথে তার নারী ঘটিত বিরোধ ছিলো৷ এধরনের গাঁজাখোরের কথায় ধর্ম যুদ্ধে নেমে যাওয়ার মত মূর্খের অভাব নাই দেশে৷
পবিত্র কাবা শরীফের ইতিহাসে বহু রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়েছে৷ পুরো দশ বছর হাজরে আসওয়াদ ছাড়া মুসলমানরা হজ্ব পালন করেছে৷ হাজরে আসওয়াদ ভেঙ্গে যথাসম্ভব চার কি আট টুকরো হয়ে গেছে যা পরবর্তীতে জোড়া লাগানো হয়েছে৷ এত কিছুর পরেও আলহামদুলিল্লাহ! চব্বিশ ঘন্টার মাঝে এক মিনিটও বিরতি নেই মানুষ তাওয়াফ করছে৷ ঈদুল আজহার সময় সাধারণত হাজীরা মক্কা থাকে না, যারা তাওয়াফ করে তারা স্থানীয়৷
দূর-দূরান্ত থেকে হজ্ব-ওমরাহ করতে আসা মানুষের তাওয়াফে যাতে কষ্ট না হয় সেজন্য প্রতি বছর ঈদুল আজহার সময় কাবার গিলাফ পরিবর্তন হয়৷ এই সাধারণ বিষয়টা নিয়ে আমাদের কিছু কিছু আলেম যে প্রতিক্রিয়া দেখালেন এতে ঊনাদের ইলম কতটুকু আছে সেটা নিয়েই আমি চিন্তিত৷ অবশ্য এসব আলেমগণ ইসলাম প্রচারে হাদীস-কোরআনের চেয়ে গাঁজাখুরি গল্প বেশি ফাঁদে৷ আমাদের মত মূর্খ প্রবাসী, গাঁজাখোর মুজাহিদ আর গাঁজাখুরি গল্পের আলেমগণ নিয়েই আমাদের ইসলামী সমাজ৷

পঠিত : ৩৯৭১ বার

মন্তব্য: ০