Alapon

যে দেশে জনগনের ভোটে নির্বাচিত সরকার থাকে না, তখন সেই দরকারের দায়বদ্ধতা বলতেও কিছু থাকে না।

বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে যতগুলো সাড়া জাগানো আন্দোলন হয়েছে তার মধ্যে ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলন অন্যতম। বলা যায়, এই একটি মাত্র আন্দোলনে দেশের সর্বস্তরের মানুষ সাড়া দিয়েছিলো। যদিও আন্দোলনটি কোমলমতি শিক্ষার্থীরা শুরু করেছিল। কিন্তু শিক্ষার্থীদের এই যৌক্তিক আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে প্রায় সবাই অংশগ্রহণ করেছিল। যার কারণে সরকার বেশ ভালোভাবেই আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে পড়েছিল। যার দরুণ, এই আন্দোলনকে ছাত্রলীগের মত পেটুয়া এবং সন্ত্রাসীদের দ্বারা দমন করতে হয়েছিল।

আপনাদের স্মরণ আছে কিনা জানি না, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি গোলাম রাব্বানী সেসময় শিক্ষার্থীদের জন্য ফুল এবং চকলেট নিয়ে আন্দোলন বন্ধ করার জন্য বলেছিল। কিন্তু শিক্ষার্থীরা রাজি না হওয়ায় সেই রাব্বানীর নেতৃত্বেই শিক্ষার্থীদের উপর হেলমেট বাহিনীকে লেলিয়ে দেওয়া হয়। অনেক শিক্ষার্থীর উপর বর্বরোচিত হামলা করা হয়। এমনকি এই আন্দোলন নিয়ে বিদেশি মিডিয়ার সামনে সত্য তুলে ধরার অপরাধে পুরস্কারপ্রাপ্ত আলোকচিত্র শিল্পী শহিদুল আলমকে পুলিম গ্রেফতার করে ১০৫ দিন বন্দি করে রাখে।


এরপর সরকার আশ্বাস দিয়েছিল, সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানো হবে। শৃঙ্খলা ফেরানোর প্রমাণ স্বরূপ ডিএমপি ট্রাফিক সপ্তাহ ঘোষণা করলো। ট্রাফিক সপ্তাহে নাকি বাসগুলোর ফিটনেস এবং বাস ড্রাইভারদের লাইসেন্স চেক করা হবে। চলতি সপ্তাহেও ট্রাফিক সপ্তাহ চলছে। কিন্তু বাস্তবিক অর্থে দেখা যায়, এসব ট্রাফিক সপ্তাহে শুধু বাইক এবং প্রাইভেট কারের ফিটনেট ও লাইসেন্স চেক করা হয়। নাম কওয়াস্তে কয়েকটি বাসের লাইসেন্স এবং ফিটনেস চেক করা হলেও বাস্তবিক অর্থে বাস ও বাসের ড্রাইভারদের তেমন কিছুই চেক করা হয় না। কারণ, পুলিশের সাথে তাদের আগেই নাকি চুক্তি করা থাকে।


 

আর এর ফলাফল স্বরূপ আজ অবধি সড়কে শৃঙ্খলা ফেরেনি। আজ সকালেই বসুন্ধরা গেটের সামনে ‘সুপ্রভাত বাসের ধাক্কায় ঝরে গেল আরও একটি তাজা প্রাণ। বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস - এর শিক্ষার্থী আবরার হোসাইন বাসের ধাক্কায় ঘটনাস্থলেই নিহত হন।


এ ঘটনার পরে নিহতর বন্ধুরা সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন শুরু করলে আশে পাশের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও তাদের সাথে যোগদান করে। এসময় আন্দোলন জোরদার হলে একসময় বাসের হেলপার বাসটিতে আগুন ধরিয়ে দিয়ে আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করে। কিন্তু শিক্ষার্থীরা এই ফন্দি ধরে ফেলে এবং বাসের আগুন নিয়ন্ত্রনে আনতে চেষ্টা করে।


 

এভাবে আগুন দিয়ে এবং ভাংচুর করে আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার ফন্দি বহু পুরনো। যাইহোক তারপরও শিক্ষার্থীরা এটা ধরতে পারছে সেটাই আনন্দের সংবাদ।

 

এদিকে নবনির্বাচিত মেয়র আতিকুল সাহেব আন্দোলনকারীদের আন্দোলন স্থগিত করার আহব্বান জানিয়েছেন। তার বদলে ঘটনাস্থলে আবরারের নামে একটা ফুটওভার ব্রিজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।


 

কিন্তু ফুটওভার ব্রিজ করাই কী সমাধান! এভাবে একজন করে নিহত হবে আর আপনারা ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করেই যাবেন, তাহলে তো সমাধাণের কোনো পথ রইল না। এভাবে চলতে থাকলে দেখা যাবে, যে হারে একসিডেন্ট হচ্ছে তাতে পুরো ঢাকা শহর ফুটওভার ব্রিজে সয়লাব হয়ে যাবে।

 

এতো কিছুর পরও রাস্তায় বাসগুলোর ওভারটেকিং মনোভাব বদলায়নি! বাস চলাকালীণ সময়ে বাসের দরজা বন্ধ থাকার যে নিয়ম চালু করা হয়েছিল তা কার্যকর হচ্ছে না।

 

নিরাপদ সড়কের ব্যাপারে সরকার আর কবে সচেতন হবে, তা আমার বোধগম্য হচ্ছে না। অথবা উন্নয়নের কথা তুলে এই সমস্যাটিও পাশ কাটিয়ে যাবে কিনা, সেটাও নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। যে দেশে জনগনের ভোটে নির্বাচিত সরকার থাকে না, তখন সেই দরকারের দায়বদ্ধতা বলতেও কিছু থাকে না।

পঠিত : ১৫৩৫ বার

মন্তব্য: ০