Alapon

আমাদের ট্রাফিক পুলিশ কি দেশের স্বার্থে নিজেদের পকেট গরম করাকে জলাঞ্জলি দিতে পারবে?

শুক্রবার, ছুটির দিন! দুপুরবেলা ভাবতেছে ঘুম দেওয়ার পর আসরের পর বের হলাম। মতিঝিল শাপলা চত্বর আসতেই দেখলাম, জ্যাম! ছুটির দিনগুলোতে সাধারণত মতিঝিলে জ্যাম থাকে না। জ্যাম থাকাটা অস্বাভাবিক-ই বলতে হয়।

সামনে এগিয়ে দেখলাম, ট্রাফিক পুলিশ গাড়ি থামিয়ে লাইসেন্স চেক করছে। কি হয় দেখার জন্য কিছুক্ষণ দাড়িয়ে রইলাম। গতদিন পত্রিকায় দেখলাম, ট্রাফিক পুলিশরা নাকি বাসের লাইসেন্স এবং ফিটনেস চেক করার চেয়ে মটরসাইকেলের প্রতি বেশি আগ্রহি। যার দরুন, গত সপ্তাহে ট্রাফিক পুলিশ মামলা করেছে প্রায় ৫০ হাজার। তার মধ্যে ৩৫ হাজার মটরসাইকেলের বিরুদ্ধে! বাদ-বাকি ১৫ হাজার মামলা সিএনজি, ট্রাক এবং বাসের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। অথচ ঢাকা শহরের মূল সমস্যা কিন্তু মটরসাইকেল নয়; বাস! যার কারণে বাসের লাইসেন্স এবং লাইসেন্স চেক করার দিকে ট্রাফিক পুলিশের বেশি নজর দেওয়া দরকার! তারা সেই দরকার কতটুকু অনুভব করছে, তা দেখার জন্যই দাড়িয়ে দাড়িয়ে পুলিশের কান্ড-কারখানা দেখলাম।

দেখলাম, নিউভিশন এবং ৮ নাম্বার বাসের লক্কর-ঝক্কর বাসগুলো ট্রাফিক পুলিশের নাগের ডগা দিয়ে ক্যাত ক্যাত শব্দ তুলে চলে গেল কিন্তু তাদের কোনো বিকার নেই। সেখানে দাড়িয়ে যা দেখলাম তাতে মনে হল, ট্রাফিক পুলিশ বাসের লাইসেন্স চেক করার চেয়ে মটরসাইকেলের প্রতি বেশি আগ্রহি।


অন্যদিকে, পুলিশের এক কর্মকর্তার সাথে ব্যক্তিগত সম্পর্ক থাকার খাতিরে জানতে পারি, প্রত্যেক ট্রাফিক পুলিশের দৈনিক টার্গেট দেওয়া থাকে। যেখানে বাস এবং মোটরসাইকেলের সংখ্যা উল্লেখ থাকে। তবে টার্গেটে বাস কমই থাকে। কারণ, বাস মালিক সমিতি থেকে প্রতি সপ্তাহে ট্রাফিক পুলিশের হেডকোয়ার্টারে চাঁদা পাঠানো হয়। যার কারণে, বাস গুলোকে আটক করার মত নৈতিক সাহস ট্রাফিক পুলিশ রাখে না। যার প্রভাব গিয়ে পড়ে মোটর সাইকেল ওয়ালাদের ওপর! অনেক সময় মটর সাইকেল গুলো আইন ভঙ্গ না করলেও খোড়া অজুহাতে সেগুলোর নামে মামলা দায়ের করে।

ছাত্রদের নিরাপদ সড়কের দাবিতে একটা করে আন্দোলন হয়, আর অন্যদিকে ট্রাফিক পুলিশের পোয়াবারো অবস্থা দাঁড়ায়! ট্রাফিক শৃঙ্খলা ফেরানোর অজুহাতে ট্রাফিক সপ্তাহ পালন করে আর মোটরসাইকেল ও ট্রাক চালকদের পকেট কাটার ব্যবস্থা হয়!

কিন্তু যে সমস্যার কারণে ট্রাফিক সপ্তাহ পালনের উদ্যোগ নেওয়া হয়, তা সমস্যাই রয়ে যায়! যার কারণে, লাইসেন্স ছাড়া এবং ফিটনেস বিহিন বাসগুলো এখনো ঢাকা শহরে চলছে এবং ক্রমাগত দূর্ঘটনা ঘটে চলেছে।

আমি বিশ্বাস করি, বাংলাদেশ ট্রাফিক পুলিশ চাইলে ঢাকা শহরের ট্রাফিক শৃঙ্খলা ফেরানো অসম্ভব নয়। প্রয়োজন ইচ্ছা এবং সৎ সাহসের। ট্রাফিক পুলিশরা যদি দুর্নীতি না করে, কোনো ধরনের পক্ষ পাতিত্ব মূলক আচরণ না করে, সৎ নিয়তে গাড়িগুলোর লাইসেন্স ও ফিটনেস চেক করে তবে ১ সপ্তাহের মধ্যেই ঢাকা শহরে ট্রাফিক শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রনে আনা সম্ভব হবে। সেই সাথে নিয়ন্ত্রনে আসবে জ্যাম! কিন্তু আমাদের ট্রাফিক পুলিশ কি দেশের স্বার্থে পকেট গরম করাকে জলাঞ্জলী দিতে পারবে?

পঠিত : ২০২২ বার

মন্তব্য: ০