Alapon

এই যে এতো আগুন লাগছে, তাতে আমার কী; কিচ্ছু না!

আজ অফিসে বসে ফেসবুকে বনানীর আগুনের লাইভ দেখছিলাম। আগুন দেখার সাথে সাথে মনে হল, বড় ভাইয়ার অফিস ত গুলশান দুই-এ। সে কোনো কাজে বনানী যাইতে পারে। মনে হওয়ার সাথে সাথে বুকটা কেঁপে উঠল।

ওর জিপি নাম্বারে কল দিলাম, কিন্তু রিসিভ করল না। তারপর এয়ারটেল-এ কল দিলাম, রিং হচ্ছে হচ্ছে ত হচ্ছে, রিসিভ করছে না! বুকের কাঁপুনিটা বেড়ে যাচ্ছে। অবশেষে সে কল রিসিভ করল এবং বলল, ‘আমি ঠিক আছি ভাই! চিন্তা করো না। বাসায় ফিরতেছি।’

বুকের ভিতর থেকে একটা লম্বা শ্বাস বেরিয়ে গেল। মনে মনে বললাম, আলহামদুলিল্লাহ। এরপর অনেকটা নিশ্চিন্তে পুনরায় আগুনের দৃশ্য দেখা শুরু করলাম। 
আগুনে আটকে পড়া কারও কারও বাঁচার আকুতি দেখে কখনো আফসোস করলাম আর কখনোবা কপল বেয়ে দুফোটা চোখের পানি ফেলেছি। তারপর?

তারপর আর কিচ্ছু না! এখন পত্রিকার পাতা খুলে দেখি ইতোমধ্যে ১৯ জন মারা গেছে। মৃতের সংখ্যা দেখে আতকে উঠলাম। তারপর?

তারপর আর কিচ্ছুও না! এনটিভির ভবনে আগুন লাগার পর পত্রিকায় বহু লেখালেখি হয়েছে। সাধারণ মানুষও বলেছিল, ভবনগুলোতে আগুন নির্বাপনের ব্যবস্থা থাকা দরকার।
তারপর আগুন লাগল বসুন্ধরা শপিং কমপ্লেক্সে। বসুন্ধরা শপিং কমপ্লেক্সের আগুনটা লেগেছিল টপ ফ্লোরে। ফায়ার সার্ভিস বলল, ঐ উপরে আগুন নেভানোর মত কেপাসিটি আমাদের নেই।

এরপর পত্রিকায় ফায়ার সার্ভিসের অবকাঠামোগত উন্নয়ন নিয়ে লেখালিখি হল। ভবনগুলোতে অগ্নি নির্বাপকের ব্যবস্থা নিয়ে কথা হল। তারপর কিছুদিন পর সবাই সবকিছু ভুলে গেল।

এরপর এলো নিমতলী ট্রাজেডি! নিমতলী ট্রাজেডির সময় ফেসবুকে বহু লেখালেখি হল। সরকারের এই করা উচিত, সেই করা উচিত। এমন ঘটনা যেন আর না ঘটে, সে জন্য সরকারকে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে হবে।

সরকার কী ব্যবস্থা নিয়েছিল, তার নমুনা ত চকবাজারে আমরা দেখেছি। তারপরও আমরা কথা বলি এবং বলছি। শুধুই কথা বলি।

ফেসবুকে বিজ্ঞ বিজ্ঞ কথা কই। স্ট্যাটাসে সব একাকার করে ভাসিয়ে দেই। রাত দিন প্রায় ২৪ ঘন্টা ফেসবুকে এসব নিয়ে জিহাদ করি। তারপর একসময় ক্লান্ত হয়ে মোবাইলটা চার্জে দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ি। যাই ঘটুক, রাতেই মোবাইল চার্জ দিতেই হবে। কারণ, আগামীকাল যে আমাকে নতুন কোনো ইস্যু নিয়ে বিজ্ঞ সূচক পোস্ট লিখতে হবে!

আর দিনশেষে আমার সবচেয়ে বড় স্বস্তি, আমার বড় ভাইয়া ভালো আছে এবং নিরাপদে আছে। ঠিক তেমনই বাংলার কোটি জনতাও আজ ঘুমাতে যাওয়ার আগে ভাববে, মৃত ২৫ জনের মধ্যে ত আমার ছেলেটা নেই। অতএব আমার কীসের এতো ভাবনা! আগামীকাল জুম্মাবার, নামায শেষে একটা লম্বা দোয়া কইরা দিবো। খেল খতম...

পঠিত : ১৩৯৯ বার

মন্তব্য: ০