Alapon

নারীর প্রধান শত্রু কিন্তু নারীরাই...

আমারও একটা ছোট বোন আছে। আমরা ৬ ভাই-বোন। সব ছোট বোনটা ছাড়া আমরা মোটামুটি সবাই বড় হয়ে গেছি। সে কিন্টার গার্ডেনে পড়ে। আমরা ৫ ভাই-বোন মোটামুটি পড়াশুনা শেষ করে কেউ সংসার ধর্মে আর কেউবা নব্য দাসত্ব চাকরিতে ঢুকে পড়েছি। আমরা এতো বড় গেছি, সবাই বিভিন্ন জায়গায় পড়াশুনা করেছি কিন্তু আম্মা আমাদের কারোর সাথেই স্কুল বা আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাননি। আম্মা হয়তো আমাদের পড়া প্রতিষ্ঠানগুলোই চিনেন না।

কিন্তু কিন্টারগার্ডেন পড়ুয়া আমার এই বোনটাকে আম্মা ইস্কুলে নিয়ে যান, আবার নিয়ে আসেন। আম্মার সাথে কথা বলে যা মনে হল, আম্মা যতোদিন পারেন তাকে এইভাবেই পড়াশুনা করাবেন। তাকে কখনো একা ছাড়ার পক্ষপাতি নন। কারণ?

এর কারণ হচ্ছে,আমাদের এই সমাজে নারীরা নিরাপদ নয়। সে যতো বয়েসরই হোক না কেন, নারী মাত্রই এই সমাজে নিরাপত্তাহীনতার মধ্য দিয়ে দিন অতিবাহিত করতে হয়। আর এই নিরাপত্তাহীনতা সবচেয়ে বেশি পরিলেক্ষিত হয়েছে, শিক্ষকদের কাছ থেকে। বিগত কয়েক বছরে বাংলাদেশে শিক্ষক কতৃক যৌন নিপীড়নের ঘটনা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। অথচ এই শিক্ষকদের বলা হত মানুষ গড়ার কারিগর। কিন্তু এই কারিগররাই এখন মনুষত্বহীনতায় ভুগছে। এর থেকে পরিত্রানের উপায় কী?

এই প্রশ্নটি আজ নতুন করে সকলের সামনে অবতারণা করেছে, আগুনে পুড়ে মারা যাওয়া নুসরাত। ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে গত ৬ এপ্রিল তারই মাদ্রাসার ছাদে ডেকে নিয়ে গায়ে কোরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় কতিপয় দুর্বুত্ত। কারণ, গত ২৭ মার্চ নুসরাত জাহান রাফির মা উক্ত মাদ্রাসার প্রিন্সিপালের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির মামলা করে। মামলা করার পর থেকেই রাফির উপর নানা হুমকি-ধামকি আসতে থাকে, যেন তারা মামলা তুলে নেয়। কিন্তু রাফির মা মামলা তুলে নিতে অস্বীকৃতি জানালে তখন মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল সিরাজউদ দৌলা এবং তার সাঙ্গপাঙ্গরা রাফিকে ছলচাতুরি করে মাদ্রাসা বিল্ডিংয়ের ছাদে নিয়ে যায়। এরপর রাফির গায়ে কোরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে রাফির শরীরের ৭৫-৮০ শতাংশ পুড়ে যায়।

এরপর তাকে দ্রুত ঢাকা মেডিকেলে আনা হলেও শেষ রক্ষা হল না। গতকাল রাত ৯ টায় নুসরাত জাহান রাফি ইন্তেকাল করে।

এভাবে আর কত নুসরাতরা জীবন দিবে?

আমার ধারণা আরও অনেক নুসরাতই এভাবে জীবন দিবে। কারণ, নারীর শত্রু যে নারীই। স্থানীয়দের বক্তব্যনুসারে জানা যায়, নুসরাতের গায়ে আগুন দেওয়ার ঘটনায় উক্ত মাদ্রাসার অন্য ছাত্রীও জড়িত ছিল। এটি প্রমাণ সাপেক্ষ বিষয়। তদন্ত হলে হয়তো প্রকৃত সত্যটা আমরা জানতে পারব। কিন্তু যখন দেখি মাদ্রাসার ঐ লম্বট প্রিন্সিপালের মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে উক্ত মাদ্রাসার ছাত্রীরা মিছিল করে, তখন বলতে হয়, ‘নারীর প্রধান শত্রু নারীরাই।’

পঠিত : ২৭৫১ বার

মন্তব্য: ০