তারিখঃ ১২ এপ্রিল, ২০১৯, ০৫:১১
একটি সত্যনিষ্ঠ দলের প্রয়োজন
সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদুদী
পৃথিবীতে বর্তমানে একটা মহা প্রলয় চলছে | এর উদ্দেশ্য কি কেবল বিশ্ববাসীকে তাদেরা কৃতকর্মের শাস্তি দেয়া অথবা প্রলয়ের
পর ভালো একটা কিছু সৃষ্টি করা- তা আমরা জানিনা । তবে বাইরের লক্ষণ দেখে আচ করা যায়, এ যাবৎ যে সভ্যতার
ধ্বজাধারীরা মানব জাতির নেতৃত্ব দিয়ে এসেছে, তাদের আয়ুষ্কাল ফুরিয়ে এসেছে | তাদের পরীক্ষার মেয়াদ শেষ হয়ে আসেছে| আল্লাহর শাশ্বত বিধান অনুযায়ী তাদেরকে ও তাদের এ জাহেলী সভ্যতাকে পৃথিবীর
ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব থেকে হটিয়ে দেয়ার সময় আগত প্রায় | পৃথিবীতে তাদের দায়িত্ব পালন করার যেটুকু সুযোগ পাওয়ার দরকার ছিল তা তারা পেয়েছে নিজেদের
যাবতীয় গুণপনা এবং সমস্ত প্রচ্ছন্ন যোগ্যতা ও প্রতিভাকে তারা
সম্পুর্নরুপে কাজে লাগিয়েছে | তাদের ভিতর হয়তো এমন আর কিছুই অবশিষ্ট নেই যা প্রকাশ পায়নি| তাই মনে হচ্ছে খুব শিগগীর পৃথিবীর রঙ্গমঞ্চ থেকে তারা অপসারিত হবে| বিশ্বব্যাপী তাদের এ ব্যাপক পরাজয়ের মহড়া সম্ভবত এ জন্যই চলছে, যাতে করে তারা
নিজেদের মৃতদেহ সৎকারের ব্যাবস্থা নিজেরাই করে যেতে পারে | এরপরে সারা দুনিয়ায় আবার একটা অন্ধকার
যুগও এসে যেতে পারে, যেমন সর্বশেষ ইসলামী আন্দোলনের পতন ও বর্তমান জাহেলী সভ্যতার
মধ্যবর্তী সময়ে এসেছিল | আবার এ ভাঙ্গার ভেতর দিয়ে নতুন
করে গড়ার একটা পালাও শুরু হতে পারে ।
পূজিবাদী গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদী সমাজতন্ত্র এবং কমিউনিজমের
যে শক্তিগুলো আজ পরষ্পর সংঘর্ষে লিপ্ত, তারা আসলে আলাদা আলাদা সভ্যাতার ধারক নয় | তাই তাদের মধ্য হতে বাছাই করে ভালোটিকে রাখার প্রশ্নই আসেনা | আসলে তারা একই সভ্যতার তিনটা শাখা | বিশ্ব প্রকৃতি ও মানুষ সম্পর্কে এদের সকলের দৃষ্টিভঙ্গি অভিন্ন | একই জীবন দর্শন ও একই নৈতিক আদর্শের ভিত্তিতে এদের কাঠামো তৈরী হয়েছে| মানুষকে পশু মনে করা, বিশ্বজগতকে স্রষ্টাবিহীন ঠাওরানো, প্রকৃতি-বিজ্ঞান থেকে
মানব জীবন পরিচালনার জন্য আইন আহরণ করা এবং অভিজ্ঞতা, স্বার্থপরতা ও প্রকৃতির
লালসাকে নৈতিক ভিত্তিরুপে গন্য করা- এসবই হলো এ তিনটি সংঘর্ষশীল আদর্শের সাধারণ
উপাদান | এদের মধ্যে পার্থক্য শুধু
এতটুকু যে, এ জাহেলী সভ্যতা সর্বপ্রথমে ব্যাক্তি স্বাধিনতা ও জাতীয় স্বাতন্ত্রের
বীজ বপন করেছিল | তার ফলে জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্র ও
পুজিবাদী গণতন্ত্রের উদ্ভব ঘটে এবং দীর্ঘকালব্যাপী মানবজাতি এর হাতে নিষ্পেষিত ও
নির্যাতিত হতে থাকে | এ যুলুম ও নিষ্পেষন যখন মাত্রা
ছাড়িয়ে যেতে থাকে তখন ঐ একই সভ্যতা সমাজতন্ত্রকে তার প্রতিকারের উপায় হিসেবে পেশ
করে । কিন্তু এ প্রতিকার যে
মূল রোগের চেয়েও মারাত্নক তা অল্প দিনেই প্রকাশ হয়ে পড়ে | অবশেষে সেই একই সভ্যতার পক্ষ থেকে ফ্যাসিবাদ, জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র নামে
প্রতিকারের দ্বিতীয় উপায় উপস্থাপন করা হয় | কিন্তু কয়েক বছরের অভিজ্ঞতা থেকে প্রমাণিত হয়েছে যে, জাহেলিয়াত জননীর এ
সর্বশেষ সন্তানটি নাশকতা ও বিপর্যয় সৃষ্টিতে আগের দুই সন্তানকেও হার মানিয়েছে|
এভাবে যে সভ্যতা মানুষকে লাগামহীনভাবে বিচরনশীল পশু মনে করে
দুনিয়ার বুকে আপন দায়িত্ব পালন করতে শুরু করেছে এবং মানুষকে পররাজ্য গ্রাস থেকে
শুরু করে জঘন্যতম নৃশংসতা পর্যন্ত কোনো মানবতা বিধ্বংসী ব্যাধী উপহার দিতে বাদ
রাখেনি,- তাকে পরীক্ষা করে দেখার আর কোনো অবকাশ নেই | এ সভ্যতা বাস্তবিক পক্ষে তার সকল শাখা-প্রশাখা সমেত স্বাভাবিক প্রবৃদ্ধির শেষ
প্রান্তে উপনীত হয়েছে | তার পরীক্ষা-নিরীক্ষার মেয়াদ
শেষ হয়ে গেছে, তার কাছে এমন কোন দাওয়াই অবশিষ্ট নেই, যা সে মানবজাতীর সমস্যা
সমাধানের জন্য দিতে পারে| তবুও যদি ধরে নেয়া যায় যে,
নিজের আয়ুষ্কাল বাড়িয়ে নেয়ার জন্য সে আর একটা ‘ইজম‘ বা মতবাদ হাজির করবে, তাহলেও
আল্লাহ নিজের গড়া পৃথিবীটাকে নৈরাজ্য দিয়ে ভরে তোলার আরো সুযোগ তাকে দেবেন, তা মনে
হয়না | হতে পারে, বর্তমান সংঘর্ষের পর
এর শাখা-প্রশাখা গুলোর মধ্যে কোনোটা অবশিষ্ট থেকে | তবে তা যে খুব ক্ষণস্থায়ী হবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই | সেই শাখা-প্রশাখার মধ্য থেকেই শিগগীরই আগুনের শিখা বের হবে এবং সেই আগুনেই সে
পুড়ে ছাই হয়ে যাবে |
এখন প্রশ্ন হলো, এ সভ্যতা ধ্বংস হয়ে প্রথমত, বর্তমান নিরেট জাহিলিয়াতের ব্যর্থতার দ্বিতীয়ত, একটি নতুন মতাদর্শের ভিত্তিতে এ ধরনের কোনো একটা মতাদর্শ যদি সত্যিই আজ মানব জাতি এক অবর্ণনীয় যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে আমি আগেই বলেছি যে, এহেন শোচনীয় ও সেই সম্ভাব্য মতাদর্শ- যা পরিবেশের সাফল্যমন্ডিত হতে এ ক্ষেত্রে যদি আদিম অংশিবাদী জাহেলিয়াতের এরপরে আসে বৈরাগ্যবাদের সম্ভাব্য ভূমিকার আর নিরেট জাহিলিয়াতের (যা আদৌ কোনো পঠিত : ১২১৪ বার
|
মন্তব্য: ০