তারিখঃ ১৩ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:৫০
বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় ধর্ষণ কখনো বন্ধ হবে না। যুদ্ধ থাক বা না থাক, পেটে খাবার থাক বা না থাক, ধর্ষণের কঠোর শাস্তি হোক বা না হোক ধর্ষণ থাকবে। কারণ ধর্ষণ বর্তমান বিশ্বসভ্যতার অবশ্যম্ভাবী উপাদান। তাই যতদিন এই পশ্চিমা সভ্যতা বিশ্বকে নেতৃত্ব দিবে, যতদিন আমরা পশ্চিমা সভ্যতাকে ফলো করব ধর্ষণ ততদিন চলতেই থাকবে।
ধর্ষণ কোন সামাজিক, রাষ্ট্রিক বা আইনগত সংকট নয়, এটা সভ্যতার সংকট। তাই কিছু আইন প্রণয়ন করে, আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করে বা সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি করে ধর্ষণ প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। ধর্ষণ প্রতিরোধ করতে হলে পশ্চিমা সভ্যতা পরিবর্তন করে ইসলামী সভ্যতা প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।
২০১৫ সালের ৭ জুলাই দৈনিক ইত্তেফাকে প্রকাশিত এই তথ্যগুলোর দিকে তাকান (লিংক কমেন্টে)- ধর্ষণের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এখানে প্রতি ১০৭ সেকেন্ডে একজন নারী ধর্ষণের শিকার হয়।গ্রেট বৃটেনে প্রতি বছর প্রায় ৮৫ হাজার নারী ধর্ষণের শিকার হয়।সুইডেনে প্রতি চারজনে একজন নারী ধর্ষণের শিকার হয়।পঞ্চম স্থানে থাকা ভারতে প্রতি ২০ মিনিটে একজন নারী ধর্ষিত হয়। ইউরোপের উন্নত দেশ জার্মানিতে এখন পর্যন্ত ধর্ষণের ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে ২ লাখ ৪০ হাজার নারী। আর ১৯৮০ সাল পর্যন্ত ফ্রান্সে ধর্ষণের ঘটনা অপরাধ হিসাবে গণ্য হতো না। পরে তা অপরাধের তালিকায় স্থান পেয়েছে। বছরে ৭৫ হাজারের বেশি ধর্ষণের ঘটনা ঘটে ফ্রান্সে।হাফিংটন পোস্টের রিপোর্ট অনুযায়ী বছরে ৪ লক্ষ ৬০ হাজার মানুষ যৌন নির্যাতনের শিকার হন কানাডায়।অস্ট্রেলিয়াতে ২০১২ সালের হিসাব অনুযায়ী পঞ্চাশ হাজারের বেশি মহিলা বছরে নির্যাতিতা হয়। এর বাইরে ডেনমার্কে ৫২ শতাংশ নারী যৌন নির্যাতনের শিকার হয় প্রতিবছর।ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রকাশিত ২০১৪ সালের একটি সমীক্ষা অনুযায়ী, ফিনল্যান্ডে প্রায় ৪৭ শতাংশ নারী শারীরিক অথবা যৌন নির্যাতনের শিকার হয়।এই তথ্যগুলো থেকে এটি স্পষ্ট যে, আইন বা আইনের প্রয়োগের অভাবে দেশে দেশে ধর্ষণ উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে না। বাড়ছে বিশ্বব্যাপী পশ্চিমা সভ্যতার প্রভাব বাড়ার কারণে। (এই তথ্যগুলোকে হয়ত কেউ কেউ চ্যালেঞ্জ জানাতে পারেন। বলতে পারেন তথ্যে ভুল আছে। কিন্তু এটি কি বলতে পারেন যে, ওই উন্নত পশ্চিমা সভ্যতার দেশগুলোতে ধর্ষণ নেই?)
কুমির প্রজনন কেন্দ্রে আপনি যেমন কুমিরের সাথে লড়াই করে জিততে পারবেন না তেমনি বর্তমান সভ্যতায় থেকে আপনি ধর্ষণ প্রতিরোধ করতে পারবেন না। কুমিরের সাথে জিততে হলে আপনাকে যেমন কুমির প্রজনন কেন্দ্রের বাইরে যেতে হবে তেমনি ধর্ষণ প্রতিরোধ করতে হলে আপনাকে পশ্চিমা ভোগবাদী সভ্যতা ত্যাগ করে ভাববাদ ও বস্তুবাদের সিনথিসিস ইসলামী সভ্যতায় প্রবেশ করতে হবে।
পশ্চিমা সভ্যতা গড়ে উঠেছে বস্তুবাদের এই মূল কথা 'সৃষ্টি কর নতুন কামনা' এর উপর ভিত্তি করে। মানুষের জন্য নিত্য নতুন চাহিদা তৈরি করে সেই সব চাহিদা পূরণে মানুষকে ব্যপৃত রাখার মধ্য দিয়েই পশ্চিমা সভ্যতা এগিয়ে যাচ্ছে। ফলে পশ্চিমা সভ্যতার মূল কাজ হল মানুষকে ইন্দ্রিয়পরায়ণ করে তোলার মাধ্যমে ভোগবাদী করে তোলা। নইলে পশ্চিমা সভ্যতার নিত্য নতুন প্রডাক্ট মানুষের কাছে কোন চাহিদাই সৃষ্টি করতে পারবে না। আর এক্ষেত্রে পশ্চিমা সভ্যতার সবচেয়ে বড় অস্ত্র হল যৌনতা। এ কারণেই পশ্চিমা সভ্যতা অবাধ যৌনতার কথা বলে, পারস্পরিক সম্মতিতে বিয়ে ছাড়াই যৌনতার অনুমোদন দেয়, পর্ন ইন্ডাস্ট্রির অনুমতি দেয়, বেশ্যালয়ের অনুমতি দেয় এমনকি যে কোন পণ্যের বিজ্ঞাপনেও যৌনতার অনুমোদন দেয়। গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করলে বুঝতে পারবেন পশ্চিমা সভ্যতার মূল চালিকাশক্তিই হল যৌনতা। সুতরাং বর্তমান সভ্যতা যতদিন টিকে থাকবে ততদিন যৌনতার প্রসার ও প্রচার থাকবে একই সাথে থাকবে ধর্ষণের মত অমানবিক অপরাধও।
অন্যদিকে ভাববাদ বলে কামনার বীজ ধ্বংস কর। অথচ এটি এমন এক মতবাদ, যদি সমগ্র মানবজাতি একযোগে এটি অনুসরণ করে তাহলে মানুষের পরবর্তি প্রজন্ম আর জন্মই নিবে না। তাই ইসলাম ভাববাদ আর বস্তুবাদের সমন্বয়ে এমন এক জীবন দর্শন উপস্থাপন করেছে যা একই সংগে মানুষের কামনাকে নিয়ন্ত্রণ করে আবার বিধিবদ্ধ উপায়ে তার সীমিত প্রকাশও ঘটায়। ইসলাম মানুষকে যেমন জীতেন্দ্রীয় হতেও বলে না তেমনি কামনার পেছনে ছোটা চূড়ান্ত ভোগবাদী হতেও বলে না। আর এ জন্যই ইসলামকে বলা হয় ভারসাম্যপূর্ণ জীবন বিধান।
যদি কেউ পাশ্চাত্য সভ্যতায় ইসলামী নিয়ম কানুন প্রচলন করে ধর্ষণ রোধ করতে চায় তাহলেও সে ব্যর্থ হবে।বাংলাদেশের মত মুসলিম প্রধান দেশে ক্যন্টনমেন্টের মত নিরাপদ জায়গায় হিজাব পরিহিতা নারীর ধর্ষণের শিকার হওয়া প্রমাণ করে পরিপূর্ণ ইসলামী সমাজ এবং রাষ্ট্র কায়েম ব্যতিত অল্প কিছু ইসলামী নিয়ম প্রচলনের মাধ্যমে ধর্ষণ রোধ করা সম্ভব নয় । ধর্ষণের জন্য পোষাক দায়ী কি দায়ী নয় এই বিতর্ক অনেকটা ঘরে আগুন লাগলে ভেজা কাপড় পুড়বে কি পুড়বে না জাতীয় বিতর্কের মতই অর্থহীন। কেননা বর্তমান সভ্যতায় বাস করা প্রতিটি নারীই (অনেক ক্ষেত্রে পুরুষও) ধর্ষণ ঝুঁকিতে আছে। সে ন্যাংটা থাকুক বা আপাদমস্তক কাপড়ে মুড়ে থাকুক।
তিক্ত হলেও সত্য যে, বর্তমান বিশ্বসভ্যতা থেকে কোনভাবেই ধর্ষণ নির্মূল করা সম্ভব নয়। ধর্ষণ নির্মূল করতে হলে আমাদেরকে অবশ্যই ইসলামী সভ্যতার পুনর্জাগরণ ঘটাতে হবে।তাই যতদিন ইসলামী সভ্যতার পুনর্জাগরণ হচ্ছে না ততদিন তনু, বিউটি, ইয়াসমিন, পুর্ণিমারা ধর্ষিত হতেই থাকবে। ততদিন আমরা ধর্ষণের জন্য ক্ষমতাসীনদের দায়ী করতে থাকব। আবার কেউ কেউ পোষাক দায়ী নাকি পুরুষের মানসিকতা দায়ী তা নিয়ে জ্ঞানগর্ভ বিতর্ক করতে থাকব। আর ওদিকে নিরীহ নিরপরাধ আমাদের মা বোনরা নিয়মিত ধর্ষিত হতেই থাকবে।
লিখেছেন: দিপ্র হাসান
পঠিত : ১৮৩৯ বার
মন্তব্য: ০