Alapon

জনসাধারণ ঐক্যবদ্ধ হলে, দেশ থেকে সকল সমস্যাই চিরবিদায় নিতে বাধ্য হবে।

এখন দেশের সবচেয়ে আলোচিত বিষয়, নুসরাত হত্যাকান্ড। নুসরাতের গায়ে আগুন দেওয়ার সাথে সাথে বেরিয়ে আসে মানুষরূপী জানোয়ার সোনাগাজি মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল সিরাজ উদ দৌলার নাম।


দাড়ি-টুপিওয়ালা সিরাজ উদ দৌলার নাম প্রকাশ হওয়ার সাথে সাথে আমাদের দেশের এক শ্রেণির মিডিয়া এক গোপন সংবাদ আবিষ্কার করে ফেলল। আর সেই গোপন সংবাদ হল, সিরাজ উদ দৌলা জামায়াতের সাবেক নেতা। ঘটনা ঘটার মাত্র কয়েক ঘন্টার মধ্যে পত্রিকাওয়ালারা এই গোপন সংবাদ পেয়ে গেল, ভাবতেই কেমন জানি হাসি পায়! পত্রিকাওয়ালাদের ভাব-ভঙ্গি দেখলে মনে হয়, পৃথিবীর তাবত অপরাধী এবং দৃষ্কৃতিকারীদের যদি জামায়াত বানিয়ে দেওয়া যেত, তাহলেই হয়তো তারা শান্তি পেত। দেশের পত্রিকা বা মিডিয়ার কাছে অপরাধী কে সেটা কমই গুরুত্ব পায়, কিন্তু সেই ব্যক্তির রাজনৈতিক পরিচয় সবকিছু ছাপিয়ে পত্রিকার পাতায় বেশি স্থান পায়। সেটা যদি হয় বিরোধী দলের কেউ বা জামায়াতের, তাহলে তো পত্রিকাদের পোয়াবারো! চাঁদ দেখা ছাড়াই তারা ঈদের আনন্দ শুরু করে দেয়। আর এভাবে করেই দেশের মিডিয়াগুলো অপরাধকে শ্রেণিভুক্ত করে ফেলছে। অথচ অপরাধের কোনো শ্রেণি বা পরিচয় নেই। অপরাধ অপরাধই। আর অপরাধকারীর দলীয় পরিচয় যদি মুখ্যই হবে, তবে অপরাধীর সাথে সরকারি দলের সম্পৃক্তের খবর যখন পাওয়া যায় তখন কেন মিডিয়ারা চেপে যায়?

নুসরাত হত্যারকান্ডের সাথে জড়িত ছাত্রলীগের সভাপতি এবং তাকে গ্রেফতারও করা হয়েছে।


 

এমনকি তাদের বাঁচানোর জন্য চেষ্টা-তদবিরও শুরু হয়েছে।


 

এগুলো পত্রিকায় আসলেও, ঠিক শিরোনাম হচ্ছে না; টকশোও হচ্ছে না। কারণ, এটা সরকারি দলের ব্যাপার-স্যাপার।

 
আর দ্বিতীয় ব্যাপার হচ্ছে, নারীবাদিরা! আমরা কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় দেখেছি, শহীদ মিনারে কোটা সংস্কারের পক্ষে আন্দোলনকারী নারীদের উপর ছাত্রলীগের ন্যাক্কারজনক হামলা। চুলের মুটি ধরে নির্যাতন করেছিল। কিন্তু সেসময় অতি শক্তিশালী মাইক্রস্কোপ দিয়ে খুঁজেও এই নারীবাদিদের খুঁজে পাওয়া যায়নি। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রায়ই যৌন নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে কিন্তু সেসব নিয়ে নারীবাদিদের তেমন একটা চিৎকার চেচামেচি দেখা যায় না। কিন্তু যেই না মাদ্রাসায় ঘটেছে অমনি নারীবাদিরা হা...রে...রে রব তুলে হাজির হয়েছে। তাদের দাবি, মাথা ব্যথা হয়েছে এখন মাথাটাই কেটে ফেলতে হবে। অর্থাৎ মাদ্রাসা শিক্ষা বন্ধ করে দাও।

মাদ্রসা শিক্ষা বন্ধ করে দেওয়া কোনো কাজের কথা নয়। আর মাদ্রাসা বন্ধ করে দিলেই যে সারাদেশে যৌন নির্যাতন বন্ধ হয়ে যাবে তাও নয়। বরঞ্চ মাদ্রাসাগুলোর চেয়ে বিশ্ববিদ্যায়গুলোতেই যৌন নির্যাতনের ঘটনা বেশি ঘটে। এমনকি এসব নিয়ে খুনোখুনিও হয়ে গেছে। কিন্তু কই তখন তো বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করার কথা কেউ বলেননি।


আমাদের জাতিগত সমস্যা হচ্ছে, যাবতীয় সমস্যাকে আমরা শ্রেণিবিন্যাস করে ফেলি। অর্থাৎ যেখানে আমার স্বার্থ জড়িয়ে আছে সেখানে আমি সরব থাকব। আর যেখানে আমার লাভ সেখানে ‍চুপচাপ থাকব। যার কারণে, আমাদের দেশ থেকে কোনো সমস্যারই স্থায়ী সমাধান হয় না। আর সমাধান না হওয়ার দরুন, নিত্যদিন নতুন নতুন সমস্যা জন্মগ্রহণ করার সুযোগ পাচ্ছে।


সমস্যাগুলো আমাদের, আমাদের সমাজের। সমস্যাগুলোকে শ্রেণিভাগ না করে ‘সমস্যা’ হিসেবেই চিন্হিত করা উচিত। সকল জনসাধারণের এক সাথে এসব সমস্যা সমাধানে ঐক্যবদ্ধ হওয়া উচিত। জনসাধারণ ঐক্যবদ্ধ হলে, দেশ থেকে সকল সমস্যাই চিরবিদায় নিতে বাধ্য হবে।

পঠিত : ৫৬৫ বার

মন্তব্য: ০