Alapon

এবার সেনাবাহিনী চায় কুমিল্লার জঙ্গিরা!


সিলেটের আতিয়া মহলে নিজেদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য সোয়াত টিমকে চাওয়ার পর এবার কুমিল্লার জঙ্গি আস্তানায় অভিযানের জন্য স্বয়ং সেনাবাহিনীকে চেয়ে বসেছে জঙ্গিরা। বুধবার রাতে ওই আস্তানা থেকে সেনাবাহিনী পাঠাও বলে চিৎকার করতে শোনা যায়।


কুমিল্লার এসপি শাহ মো. আবিদ হোসেন জানান, বুধবার দুপুরে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের সদস্যরা কোটবাড়ীর দক্ষিণ বাগমারা বড় কবরস্থানের পাশে তিন তলা ওই বাড়ি ঘিরে ফেলেন। কিন্তু ‍রাতে জঙ্গিরা চিৎকার করে বলতে থাকে কাউন্টার টেররিজম, সোয়ত দিয়ে কাজ হবে না। সেনাবাহিনী ডাক।


কুমিল্লার পুলিশ সুপার ঘটনাস্থলে উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, “ওই বাড়িতে কয়েকজন জঙ্গি আছে এবং তাদের কাছে শক্তিশালী বোমা থাকতে পারে বলে আমরা ধারণা করছি। তাই সেনাবাহিনীর সহযোগিতা প্রয়োজন। এজন্য আমার আজ অভিযান চালাবো না। নির্বাচনের পর সেনাবাহিনী যোগ দেয়ার পর অভিযান শুরু হতে পারে।”


পাঠক অবাক হয়েছেন? অবাক হওয়ার কিছু নেই। এখন হয়তো চায়নি। তবে কুমিল্লার জঙ্গিরা সেনাবাহিনী চাইলেও সেটা বড় ধরণের কোন অন্যায় অবদার হবে না। কারণ তাদেরও প্রেস্টিজ বলতে একটা বিষয় আছে। সিলেটের জঙ্গিরা সেনাবাহিনীর হাতে মরেছে অথচ সেনানিবাসের কাছে ঘাঁটি গড়েও কুমিল্লার জঙ্গিরা পুলিশের হাতে মারা পড়বে, এমনটা হলেতো জান্নাতে গেলেও তাদের প্রেস্টিজ থাকবে না। সেখানে সিলেটের জঙ্গিরা বড়াই করে বলবে আমরা সেনাবাহিনীর শক্তিশালী অস্ত্রের আঘাতে মরেছি আর তোমরা মরেছ ‍পুলিশের হাতে।


হ্যা পাঠক, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী যখন নিজেদের পরাজিত প্রমান করতে এত নাটক সাজাতে পারে বা নিচে আসতে পারে তাহলে জঙ্গিরা তাদের আরো নিচে নামাতেই পারে। এবারের নাটকের শ্যুটিং স্পট সিলেটের কথিত জঙ্গি আস্তানায় শেষ পর্যন্ত খলনায়কের ভূমিকায় অবর্তীর্ন হয়েছিল আমাদের এলিট ফোর্স সেনাবাহিনী। আর মঞ্চস্থ করেছিল আত্মঘাতী সিনেমা ‘অপারেশন টোয়াইলাইট’। কিন্তু বাংলাদেশে এমন সিনেমায় র‍্ব-পুলিশ পাক্কা অভিনেতা হলেও সেনাবাহিনী এখানে নতুন। তাই স্বাভাবিকভাবেই পাক্কা অভিনেতারা যেখানে হিমশিম খাচ্ছিল সেখানে নায়ক হতে এসে নতুন অভিনেতাদের খলনায়ক বনে যাওয়াটা বেশি একটা অস্বাভাবিক না।


 


যাইহোক পাঠক হয়তো ভাবছেন, লেখক কি বুঝাতে চাচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছি না। আমি আসলে বলতে চাচ্ছি সিলেটে চলা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অভিযান সিনেমার অভিনয় মাত্র। হয়তো আমার এ মন্তব্যে আপনার বিতর্ক থাকতে পারে। তবে আপনি যদি বিতর্কে যান তাহেল বিতর্কের খাতিরে আমি বলবো ‘বাংলাদেশ সেনাবাহিনী অপরিপক্ক, এদের বসিয়ে বসিয়ে দেশের টাকা দেয়ার কোনো দরকার নেই। কারণ যে সেনাবাহিনী ৪ জন জঙ্গি থেকে একটি বাড়ি রক্ষা করতে ৪ দিন সময় নেয়, তারা পুরো দেশ শত্রুমুক্ত করবে কি করে?’। তর্কের খাতিরে এই কথা বললেও আমি এতটুকু বিশ্বাস করি যে, আমাদের সেনাবাহিনী অনেক শক্তিশালী। কিন্তু এখানে তাদের এভাবে ব্যবহার করা হয়েছিল বলে এত সময় লেগেছে। আর দৃঢ়ভাবে বলবো এটা নাটক ছিল।


শুধু ধারনা নয় আমার এই দাবির পক্ষে কিছু যুক্তিও ‍রয়েছে। আশাকরি সেগুলো পড়লে আপনিও বিষটি স্পষ্ঠ বুঝতে পারবেন।


১। আতিয়া মহলের ওই ফ্ল্যাটে থাকা মানুষগুলো সব জঙ্গি সেটা প্রশাসন নিশ্চিত হলো কি করে?। যদি তাদের কাছে যথাযথ তথ্য থেকেই থাকে তাহলে ভেতরে কয়জন আছে, কে কে আছে সেটা বলতে পারলো না কেন? এই তথ্য বের করতে না পারলে আমাদের গোয়েন্দারা বসে বসে কি করে?


তাছাড়া, তারা জঙ্গি বলে যথাযথ প্রমাণ থাকলে তাদের পেঁছনে দীর্ঘদিন লেগে থেকে সমস্ত বায়োডাটা সংগ্রহ ও তাদের মদদদাতা কারা তা বের করলো না কেন? যারা এদের নামই জানে না তারা কিভাবে নিশ্চিত হয় যে এরা জঙ্গি? আর সেনাবাহিনীওবা কি বুঝে তাদের বিরুদ্ধে অভিযানে নেমে পড়ে?


২। সেনাবাহিনী ওই ভবনের সবাইকে উদ্ধার করেছে অথচ জঙ্গিরা টের পেল না কেন? টের পেলে এত সুন্দর সুযোগ দিল কেন?। এই প্রশ্নের একটি জবাব অবশ্য সেনাকর্মকর্তা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, জঙ্গিরা বোধয় ঘুমে ছিল, বৃষ্টির কারণে তারা টের পায়নি। আমার প্রশ্ন হলো যুদ্ধের ময়দানে কেউ ঘুমাতে আসে?


৩। যারা নিজেদের আত্মহুতী দিতে সুইসাইড ভেস্ট পরে থাকে তারাতো মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতই থাকে তাহলে ঘরে বন্দি থেকে মরার কারণ কি?


৪। ৪ জঙ্গিকে মারতে ৪ দিন লাগার যোক্তিকতা কী?


৫।  সবচেয়ে বড় প্রশ্ন সেনাবাহিনী ভেতরে না ঢুকে নিহতের লাশ বের করলো কি করে? বা নিহতের লাশ বের করার পর ভেতরে কেন ড্রোন পাঠিয়ে চেক করতে হবে বোমা আছে কি না? সেনাবাহিনী যদি ভেতর থেকে এ লাশগুলো বের না করে থাকে তাহলে কি মৃত্যুর সাথে সাথে জঙ্গিদের লাশগুলো সেনাবাহিনীর কাছে আজগুবিভাবে উড়ে এসেছে? আর যদি সেনাবাহিনী নিজেরা উদ্ধার করে থাকে তাহলে ভিতরে বোমা থাকেলোতো তারা দেথারই কথা, এত নাটক করার প্রয়োজন কি?


৬। আমরা গণমাধ্যমে যা দেখেছি তাতে বুঝা যায় ভবনটির চতুরপাশে সাইড ওয়াল দেয়া, আর সেই ভবনের নিচতলায় ছিল জঙ্গিরা এবং তাদের ফ্ল্যাটে তালা লাগানো ছিল। তাহলে মাঝখানে দুইটি ওয়াল ভেদ করে কিভাবে চললো এ যুদ্ধ। আর সেনাবাহিনীইবা কিভাবে পর্যবেক্ষণ এবং হত্যা করলো জঙ্গিদের?



৭। সর্বশেষ আজ কয়েকটি পত্রিকায় দেখলাম আতিয়া মহলে থেকে মৌলভীবাজারের তথ্য পেয়েছে প্রশাসন। কিন্তু আতিয়া মহলের জঙ্গিরাতো মারাই গেছে, মৃত মানুষ তথ্য দিল কী করে? আর তথ্য পেলেও আজই ঘেরাও করতে হবে কেন? এদের গোয়েন্দা নজরদারিতে রেখে এক এক করে ধরলে সমস্যা কি ছিল? এদের ফলো করলে মূল হোতাদের ধরাওতো কঠিন কিছু ছিল না।


নিয়মিত জঙ্গি অভিনয় দেখে এমন অনেক প্রশ্ন জাগছে আমাদের মতো সাধারণ মানুষের মনে। জানি এসব প্রশ্নের কোনো সদুত্তর দিতে পারবে আমাদের প্রশাসন। বরং উঠে পড়ে লাগবে আমাদের মুখ বা কলম বন্ধ করতে। অবশ্য এটা পুলিশের চরিত্র, সেনাবাহিনীর প্রতি আমাদের এখনো আস্থা আছে। আমরা বিশ্বাস করি সেনাবাহিনী এখানে ষড়যন্ত্রের শিকার। সেনাবাহিনীকে বিতর্কিত করতে এবং ভারতের শৃঙ্খলে বাঁধতে এটি ছিল একটি মহলের চক্রান্তের অংশ। তবে আমরা হতাশ হচ্ছি দেশ প্রেমিক চৌকশ সেনাবাহিনীকে এসব চক্রান্তে পা দিতে দেখে। নিজেদের বিপদ নিজেদের হাতেই টেনে আনতে দেখে। আমরা আশা করছি দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী দেশের সত্যিকার বিপদে নিজেদের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে দেশ রক্ষা করবে। আস্থা ফিরিয়ে আনবে মানুষের।

পঠিত : ৭৫৭ বার

মন্তব্য: ০