Alapon

আপনি সংস্কারবাদি নাকি মূলবাদি ?

ইদানিং যেদিকে-ই যাই, এই প্রশ্নটা বার বার শুনতে হয়। গত কয়েকমাস থেকে এ প্রশ্ন শুনতে শুনতে অভ্যস্থ হয়ে গেছি। ব্যাপারটা এমন অবস্থায় দাড়িয়েছে, কোনো আড্ডায় সামিল হলে 'সংস্কারবাদি' এবং 'মূলবাদি' নিয়ে কথা না উঠলেই বরং অবাক হই।

যাইহোক, গতকাল এক ভাইকে বলছিলাম, নিজের জীবনের দিকে তাকালে সংগঠনের কাছে ঋনি হয়ে যাই। এই যে 'আমি' এই 'আমি'টাই ত সংগঠনের কারণে হয়েছি। এই সংগঠনের সংস্পর্শে না আসলে এই 'আমি'ও হতাম না, আপনাদের মত মানুষের সাহযর্য পাওয়া ত দূরের কথা, পরিচয়ই হত না।

আমি আমার বন্ধুদের দিকে তাকাই। তাদের সাথে নিজের জীবনের তুলনা করি। সংগঠন করার কারণে জীবনে অনেক চরাই-উতরাই পার হতে হয়েছে। পড়াশুনায় তাদের থেকে হয়ত বেশ কিছুটা পিছিয়ে গেছি; থেমে যাইনি। কিন্তু তাদের মধ্যে অনেকের কাছে মসজিদটা সপ্তাহের হাজিরার স্থল হলেও, আমার কাছে তা নিত্য দিনের! তাদের অনেকের কাছে মসজিদটা অপরিচত হলেও, আমার ভীষণ পরিচিত; অতি আপন। আর এটা সম্ভব হয়েছে সংগঠনের কল্যাণে-ই।

আমাদের মধ্যে অনেকেই প্রশ্ন করে, সংগঠন কী করেছে?

বাংলাদেশের মসজিদগুলোতে তরুণদের সংখ্যা উল্লেখ করার মত। তাদের মধ্যে ৫% হয়ত জন্মগতভাবেই বা পরিবারগত শিক্ষার কারণে মসজিদে যায়। ৩০% তবলিগ জামাতের ভাইদের দাওয়াতের বদৌলতে। আর বাকি ৬৫% সম্ভব হয়েছে সংগঠনের কারণে। আর এটা আমি যেমন জানি, আপনিও তেমনই জানেন।

হ্যা, আপনি এটা বলতে পারেন, সংগঠনের আরও অনেক কিছু করার সুযোগ ছিল। সুযোগ আসলেই ছিল, কিন্তু যেকোনো কারণেই হোক তা সম্ভব হয়নি। এখন কী করতে হবে? 
এই গ্যাপ পূরণে নতুন দল খুলতে হবে!

নতুন দল খুলুন, মানুষদের সংঘবদ্ধ করুন; আপত্তি নেই ত। অতি রাজনৈতিক হওয়ার সাধ জাগলে আমি বা আমরাও হয়তো কোনো একদিন আপনার দলে যোগ দিবো।

কিন্তু আপনি বা আপনারা যখন জামায়াতকে প্রতিপক্ষের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দল করতে চান, তখনই আপত্তিটা তৈরি হয়। বিরোধীদের দাবিনুসারে, জামায়াত একটি জনবিচ্ছিন্ন দল। আর পরিসংখ্যান হিসেবে, জামায়াতের জনসমর্থন সারাদেশে ১০ শতাংশ। আর আপনাদের টার্গেট কিনা এই ১০ শতাংশ-ই! 
বাদ বাকি ৯০ শতাংশ মানুষকে টার্গেট করবে কে?

প্রশ্ন করবেন, তারা যে ১০%-ই টার্গেট করছে, তা আমি কী করে নিশ্চিত হলাম?

গেল সপ্তাহে, আমাদের প্রিয় ও সম্মানিত নেতা শহীদ কামারুজ্জামান ভাইয়ের শাহাদাত বার্ষিকি ছিল। শাহাদাত বার্ষিকি উপলক্ষ্যে 'সংস্কারবাদের' মূল ব্যক্তিত্ব মঞ্জু ভাই, শহীদ কামারুজ্জামান ভাইয়ের লেখা 'সংস্কার' নিয়ে চিঠিটা পুনরায় শেয়ার দিয়েছেন। এই চিঠির অস্তিত্ব অস্বীকার করছি না। আমরা যারা সংগঠনে একটিভ তারা সকলেই জানি, শহীদ কামারুজ্জামান ভাই কতটা 'ট্যালেন্টেট' এবং 'ক্যারিশমাটিক' চিন্তার অধিকারী ছিলেন।

তিনি সংস্কার চেয়েছেন এ-কথা সত্য। কিন্তু সংগঠন ভেঙ্গে নয়। তিনি সংগঠনের ভেতর থেকে-ই সংগঠনকে সংস্কার করতে চেয়েছেন। যার জলন্ত প্রমাণ, ফাঁসি কার্যকরের আগ মুহুর্তে, কামারুজ্জামান ভাই পরিবারের সাথে শেষবারের মত সাক্ষাত করেন। সাক্ষাত শেষে তাঁর ছেলে দেশবাসির সামনে প্রিয় নেতার বক্তব্য তুলে ধরেন।

আমাদের প্রিয় নেতা শহীদ কামারুজ্জামান জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত বিশ্বাস করেছেন, কেবল বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামি এবং ইসলামি ছাত্রশিবিরের হাত ধরেই এদেশের মুসলিম জনতার কাঙ্ক্ষিত মুক্তি মিলবে।

অথচ, নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য আমাদের শহীদ নেতাকেও বতর্কিত করবার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। আপনার বা আপনাদের মত মানুষের পক্ষে এসব শোভা পায় না।

আপনাদের ভাষ্যনুসারে আমরা না হয় 'গোড়াবাদি'-ই রইলাম। কিন্তু আপনারও কি উদার হতে পেরেছেন?

ঘোলা পানিতে মাছ স্বীকার না করে, নিজের যোগ্যতায় দল গড়ে তুলুন। আশা করি, আপনাদের শুভবুদ্ধির উদয় হবে। সেই কামনায়...


পঠিত : ১৩৮৫ বার

মন্তব্য: ০