Alapon

শ্রীলংকায় হামলা এবং কৌতূহলি মনে কিছু প্রশ্ন...


শ্রীলংকার ইতিহাসে এযাবকালের সবচেয়ে ভয়াবহ দিনটি ছিল গত রবিবারের দিনটি। এইদিন একই সাথে ৮ টি বোমা বিষ্ফোরনে ৩১০ জন নিহত ও ৫ শতাধিক মানুষ আহত হয়।

এমন ভয়াবহ হামলার চিত্র যুদ্ধ কবলিত দেশ ফিলিস্তিন, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ইরাক, সিরিয়া বা লিবিয়াতেও দেখা যায় না। তামিল বিদ্রোহীদের যুগ পার হয়ে যাবার পর শ্রীলংকা দেশ হিসেবে বেশ শান্তই ছিল। বিগত বছরগুলোতে এই ধরনের কেন, উল্লেখযোগ্য কোনো সন্ত্রাসেরও খবর পাওয়া যায় না। কিন্তু হঠাৎ করে শ্রীলংকায় এই হামলা কেন?

এর উত্তর সময়ই বলে দিবে! কিন্তু হামলার পরপরই শ্রীলংকান নিরাপত্তা বাহিনী বেশ কয়েকজন সন্দেহভাজনকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃতদের পরিচয় শ্রীলংকান সরকার প্রকাশ না করলেও, ভারতীয় মিডিয়াতে আটককৃত ব্যক্তিদের নাম পরিচয় প্রকাশিত হয়। কিন্তু তারা কীসের ভিত্তিতে তার পরিচয় পেয়েছেন তার কোনো সদুত্তর পাওয়া যায়নি। শুধু ভারতীয় মিডিয়াই নয়, ইসরাঈলি কয়েকটি মিডিয়াকেও একই ধরণের প্রচার-প্রচারণা চালাতে দেখা যায়।

কোনো ধরণের প্রমান বা সুনির্দিষ্ট হুমকি না থাকা স্বত্ত্বেও যখন মুসলিমদের নাম শোনা যাচ্ছিল তখন আমার মনে হয়েছে, এই হামলার দ্বায়ভার মুসলিমদের উপরই আসবে। অবশেষে তাই হল, হামলার তিনদিন পর আইএস এই হামলার দ্বায় নিলো। তাদের দাবি, ‘নিউজিল্যান্ডের হামলার প্রতিশোধ হিসেবে তারা এই হামলাটি চালিয়েছে।’
এর সত্য-মিথ্যা যাচাই করা আমার কাজ নয়। কিন্তু কিছু সমীকরণ মিলানো প্রয়োজন। হামলা হলো শ্রীলংকায়, কিন্তু এই হামলাকে পুঁজি করে নরেন্দ্র মোদি কেন ভোট চায়? নরেন্দ্র মোদি কেন এটাকে ইস্যু করে নিজের ভোট ব্যাংক বাড়াতে চায়?
এই প্রশ্নটি অবশ্যই বিবেচনায় রাখা উচিত। কারণ, বিগত কয়েকবছর ধরে শ্রীলংকায় চীনের বিনিয়োগ নিয়ে ভারত সরকারের সাথে শ্রীলংকান সরকারেরে টানাপোড়ন চলছে। এর মাঝে চলতি বছর শ্রীলংকার হাম্বানটোট সমুদ্র বন্দর ভারতের বগলের নিচ দিয়ে চীনের হাতে চলে যায়। স্বার্থের আঘাত সইতে না পেরে ভারতের কুখ্যাত গোয়েন্দা বাহিনী ‘র’ এই কাজ করল কিনা সেটাও বিবেচনায় রাখা উচিত!

দ্বিতীয়ত, ভারতীয় মিডিয়াগুলো যখন মুসলিমদের সন্দেহ করে তাদেরই মনগড়া রিপোর্ট প্রকাশ করছিলো তখনই শ্রীলংকার মানুষ ফুঁসে ওঠে। শ্রীলংকার বিভিন্ন জায়গায় মুসলিম স্থাপনা ও মসজিদে হামলার ঘটনা ঘটে। এমনকি কোনো কোনো মসজিদে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করা হয়। এই ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে কারা? তাদের চিহ্নিত করা উচিত।

তৃতীয়ত, ভারতীয় মিডিয়ার মনগড়া রিপোর্ট প্রকাশ হওয়ার সাথে সাথে, হামলার সাথে সম্পৃক্ত একটি ইসলামি দলের নাম শোনা যাচ্ছিল। দলটির নাম ন্যাশনাল তাওহীদ জামায়াত। এই হামলার আগে এই দলের নামও কেউ কোনোদিন শোনে নাই। এরপর পশ্চিমা পত্রিকাগুলো নিজেদের ধারণামত রিপোর্ট করল এই দলটি সম্ভবত আইএস-এর শ্রীলংকা শাখা। আর মজার বিষয় হচ্ছে, আজ আইএস এই হামলার দ্বায় স্বীকার করেছে।

গতবছর শেষের দিকে সিরিয়ায় আসাদ বাহিনী এবং মিলিশিয়া ও তুর্কি বাহিনীর হামলায় তথাকথিত আইএস প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। এই আইএস-এর নাম ব্যবহার করে বহু হামলা করা হয়েছে। আইএস যখন আপন ঘরেই বসতে পারছে না এবং তাদের অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে, তখন তাদের কতৃক এ-ধরণের হামলা করা দুঃস্বাধ্য ব্যবহার। কিন্তু তারপরও যদি তারাই একাজ করে থাকে তাহলে এর নিন্দা জানাই। কিন্তু একটা সমীকরণ আমি কিছুতেই মেলাতে পারছি না।

মিডিয়া যখন বলল, সন্দেহভাজন গ্রেফতারকারীরা মুসলিম। তখনই একটি অজানা-অচেনা মুসলিম দলের নাম শোনা গেল। যখনই মিডিয়া বলল, এই দলটি সম্ভবত আইএস-এর শ্রীলংকান শাখা। ঠিক তখনই আইএস এই ঘটনার দ্বায় স্বীকার কর। এগুলো কি কাকতালীয় নাকি ভারতীয় মিডিয়া ও ইসলাঈলি মিডিয়ার প্রি-প্যান করা তা কে বলবে? এসব সমীকরণ শেষ পর্যন্ত হয়ত অমীমাংসিত-ই থাকবে, শুধু মাঝখান দিয়ে সারাবিশ্বের মুসলিমদের উপর দিয়ে আরও একটি ঝড় বয়ে যাবে। সর্বশেষ বলতে চাই, সন্ত্রাসীদের কোনো ধর্ম নেই। ধর্মের নামে এহেন ন্যাক্কারজনক হামলার নিন্দা জানাই।

পঠিত : ২৯৯৫ বার

মন্তব্য: ০