Alapon

দল ভেঙে সংস্কার: জামায়াতের ক্ষেত্রে তা কি আদৌ সম্ভব?

কথা হচ্ছিল, দক্ষিণবঙ্গের কোনো এক উপজেলার জামায়াত নেতার সাথে। তিনি স্থানীয় সংগঠনের কর্মপরিষদ ও শূরা সদস্য। এর অর্থ উপজেলার নিধি-নির্ধারক পর্যায়ের লোক।
তাকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘জামায়াতে ভাঙনের সুর এবং সংস্কারের ঢামাঢোল শোনা যাচ্ছে। এই সংস্কারের দাওয়াত আপনারা পাননি? সেইসাথে আপনাদের উপজেলায় জামায়াতের জনশক্তিদের মাঝে এই সংস্কার নিয়ে কীরূপ বিভক্তি এবং জনমত দেখছেন?’
তিনি বললেন, ‘আমাদের উপজেলায় সংগঠন বেশ শক্তিশালী। সরকার বিরোধী আন্দোলনে আমাদের উপজেলা সংগঠন বেশ ভূমিকা রেখেছে। যার দরুন উপজেলায় আমাদের বিরুদ্ধে প্রায় ষাটোর্ধ্ব মামলা রয়েছে। অথএব বুঝতে পারছেন, আমাদের উপজেলায় সংগঠনের কিরূপ কাজ।’
এখন মূল প্রশ্নে আসি। ঢাকায় না আসলে জানতাম-ই না, সংস্কার নিয়ে এতোকিছু হচ্ছে। কই আমাদের উপজেলায় তো সংস্কারের নাম-গন্ধও নেই।
আসলে জামায়াত এমন একটি সংগঠন, যার কর্মীরা কেন্দ্রীয় সংগঠনের প্রতি প্রচন্ড আনুগত্যশীল। সংগঠনের রূপরেখা এবং আনুগত্যের সিস্টেমই কর্মীদের মনমানসিকতাকে এভাবে গড়ে তোলে। আর এর প্রমাণ আমরা বারংবার পেয়েছি। তারপরও বলছি, জামায়াতের কর্মীদের এমন আনুগত্য পরায়নতা এবং কেন্দ্রের উপর আস্থা না থাকলে, রাজনৈতিক ভুল সিদ্ধান্তের কারণে এই দল বহু আগেই বিলিন হয়ে যেত।
যার জলন্ত উদাহারণ, একাত্তরের যুদ্ধ। একাত্তরের যুদ্ধে অখণ্ড পাকিস্তানের পক্ষে থাকা ছিল জামায়াতের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পাকিস্তান দ্বি-খণ্ডিত হয়ে যায়। যার ফলে দৃশ্যত জামায়াতের সেই সিদ্ধান্ত ভুল প্রমাণিত হয়। যার দরুন, মুক্তিবাহিনীর হাতে প্রায় ৩ হাজার জামায়াত কর্মীকে মৃত্যু বরণ করতে হয়। সেইসাথে প্রায় ৫ হাজার কর্মীকে গৃহহারা হতে হয়।
সেইসাথে জামায়াতের তৎকালীণ আমীর অধ্যাপক গোলাম আযম সাহেবও দেশ ছাড়া! এমন এক কঠিন অবস্থা, যেখানে জামায়াতের অস্তিত্ত্ব নিয়ে টানাটানি। স্বাধীনতার পর জামায়াত নিজ নামে রাজনীতিও করতে পারেনি। এ অবস্থাতেও দলের মাঝে খুব একটা বিশৃঙ্খলা দেখা যায়নি। বরং দেখা গেছে, জামায়াতের ৫ হাজার গৃহহারা এসকল নেতা-কর্মী যে যেখানে সুযোগ পেয়েছে, সেখানেই ইসলামি আন্দোলনের দাওয়াতি কাজ চলমান রেখেছে। যার ফলে জামায়াত আস্তে আস্তে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে এবং এক পর্যায়ে জোট সরকার গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৭১ পরবর্তি সংকট আর আজকের সংকট এক বিষয় নয়। সেদিনের সেই পরিস্থিতি আর আজকের পরিস্থিতি এক নয়। সেদিনের সাংগঠনিক অবস্থা আর আজকের সাংগঠনিক অবস্থা এক নয়। স্বাধীনতার পরেও দল ভাঙার আওয়াজ পাওয়া গেছে। এমনকি মাওলানা আব্দুর রহীম শেষ পর্যন্ত জামায়াত থেকে বেরিয়ে গিয়ে একটা নতুন দল খুলেছেন। দেশের জেলায় জেলায় উপজেলায় কমিটিও দিয়েছিলেন। কিন্তু তা এখন নাম সর্বস্ব দলে পরিণত হয়েছে অথবা তার অস্তিত্ব আদৌ আছে কিনা তা আমার জানা নেই।
যেখানে মাওলানা আব্দুর রহীম সাহেবের মত যোগ্যতা সম্পন্ন মানুষ, জামায়াতের কর্মীদের নিজ দলে ভেড়াতে পারেনি সেখানে আজকালকার কোনো এক পুঁচকে ছেলে জামায়াতের কর্মীদের টেনে নিয়ে নিজের দলে ভিড়াবে, এমন যদি মনে করে থাকে তাহলে সে বোকার স্বর্গে বাস করছে। এই পর্যায়ে এসে সেই প্রবাদের কথা মনে পড়ে, ‘হাতি-ঘোড়া গেল তল, পিঁপড়া বলে কত জল!’

পঠিত : ৩৬৯৪ বার

মন্তব্য: ০