Alapon

চুরির দ্বায় কি শুধু চোরের একারই...?

কয়েকদিন আগে, কোনো এক বই বাঁধাই খানায় গিয়েছিলাম। কাজ শেষ করে ফেরার সময় পরিচিত এক ভাইয়ের সাথে দেখা হয়ে গেল। তিনি একটা প্রকাশনা সংস্থার প্রডাকশন বিভাগে কাজ করেন।

তিনি আমাকে দেখে বাঁধাই খানার ম্যানেজারকে বলল, ‘তোমার লগে আলাদা কথা আছে। বসের সামনে কওয়া যাইবে না!’

তার কথায় আমি হাসলাম এবং বললাম, ‘কী হিস্যা নিয়ে কোনো ঝামেলা হইছে নাকি?’
সে লজ্জা মাখা হাসি দিয়ে বলল, ‘বস, আপনি তো সবই বোঝেন। এইগুলা আর নতুন কী!’

তাকে চায়ের দাওয়াত করলাম। তারপর আমরা একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে বসলাম। তাকে প্রশ্ন করলাম, ‘কত টাকার মামলা?’
সে বলল, ‘৫ হাজার কপি! কোম্পানির কাছে প্রতি কপি ১ টাকা বেশি কইছি! আর এইখানে নির্ধারিত রেট থেকে ১ টাকা কমাইছি। অবশ্য ম্যানেজারকেও কিছু ভাগ দিতে হইবো!’

প্রশ্ন করলাম, ‘এইসব কেন করেন?’
তিনি একটা দির্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন, ‘বস, বেতন পাই ১২ হাজার! এই কোম্পানিতে আছি আইজ ৩ বছর। তিন বছরে বেতন বাড়াইছে ২ হাজার। আগে ১০ হাজার দিয়ে একলা একলা চলবার পারতাম। এখন ঘরে বউ, সাথে বাচ্চা! মেলা খরচ। ১২ হাজার দিয়া ক্যামনে কুলামু, কন?’

আমি তাকে আর কিচ্ছু বলতে পারি না! বা বলা যায় না। তার ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে জেনেছি, ‘সে রাত-দিন ঘেটে যে পরিমাণ কাজ করে, তাতে তার বেতন ২০ হাজার হওয়া উচিত। কিন্তু শ্রমের ন্যায্য মূল্য আদায়ে মালিক পক্ষ বরাবরই অপারগ! কিন্তু ১২ হাজার টাকা বেতন দিয়ে রাত-দিন খাটিয়ে, ডাবল আদায় করে নিতে তারা বদ্ধপরিকর!’

শুধু পাবলিকেশন জগতেই নয়, এই চিত্র পুরো বাংলাদেশ জুড়েই বিদ্যমান!

প্রয়োজন তাকে এভাবে চুরি করতে বাধ্য করেছে। মানুষ প্রথমে ১ টাকা দিয়ে শুরু করে। পরে সে পুকুর চুরি করে। মনে নেই, ‘পেটের দ্বায়ে কুখ্যাত সন্ত্রাসী এরশাদ শিকদার একসময় চুরি-চামারি করত। কিন্তু পরবর্তিতে সে হয়ে যায়, খুনি! তা পেটের দ্বায়ে নয়, বিলাসিতা কিংবা অন্যকোনো কারণে!’

এই যে লোকটা প্রতিষ্ঠানকে ফাঁকি দিয়ে টাকা মারছে, এ জন্য কি তাকে ১০০% দোষারোপ করা যায়?

এর উত্তর আমার জানা নেই। আমি তাকে ১০০% দোষারোপ করতে পারিনি! হয়তো এর কিছু দ্বায় মালিক পক্ষরও রয়েছে। কিন্তু সেই দ্বায় তাদের বোঝাবে কে?

পঠিত : ১৩২৬ বার

মন্তব্য: ০