Alapon

আমার দু’আ কবুল হচ্ছে না কেন?

তিন মাস পর মেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষা। সামিহা রাতদিন ২৪ ঘন্টা পড়াশুনা করতেছে। সেইসাথে নামাযও নিয়মিত পড়তেছে। পড়াশুনার পাশাপাশি সে এখন নিয়ম করে ৬ ওয়াক্ত নামায পড়ে। সহজ ভাষায় বলতে গেলে, সে ফরয নামাযের পাশাপাশি তাহাজ্জুদের নামাযও নিয়মিত পড়ে। নামায শেষে সে আল্লাহর কাছে কেঁদে কেঁদে দু’আ করে। ‘আল্লাহ আমাকে মেডিকেলে চান্স পাইয়ে দাও। বাংলাদেশের যেকোন মেডিকেল কলেজে হোক। নামী দামি গুলোতে চান্স না পেলেও চলবে। শুধু চান্সটা যেন হয়। প্লীজ আল্লাহ দয়া কর।’


এরপর মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার রেজাল্টে দেখা গেল, সামিহার দু’আ কবুল হয় নি। অর্থাৎ সে মেডিকেল কলেজে ভর্তি হবার ‍সুযোগ পায় নি। এই দুঃখে সামিহা কাঁদতে কাঁদতে বলছে, ‘আল্লাহ আমার একটা দু’আও কবুল করে না। আমি যা চাই আল্লাহ কিচ্ছু দেয় না। আমার সঙ্গেই সবসময় এইরকম হয়। ধুর, আমি আর কোনদিনই কিচ্ছু চাইবো না’।


উপরের ঘটনাটি কাল্পনিক হলেও আমাদের প্রায় প্রত্যেকের জীবনেই এমন ঘটনা রয়েছে। আমরা আল্লাহ সুবহানওয়াতায়ালার কাছে খুব করে কিছু চেয়েও অনেক সময় পাই না। ঠিক তখনই সমস্ত হতাশা আমাদেরকে আঁকড়ে ধরে। এমন ঘটনা আল্লাহর রাসূলের সাহাবীদের সঙ্গেও ঘটেছিল। সাহাবীরা আল্লাহর রাসূলকে প্রশ্ন করেছিল, তাঁদের দু’আ কেন কবুল হচ্ছে না?


রাসূল (সঃ) জবাবে বলেছিলেন, ‘একজন ব্যক্তির দু’আর জবাব দেওয়া হতে থাকে যদি না সে অন্যায় অথবা হারাম কাজের জন্য দু’আ করে। সেই সাথে আত্নিয়তার সম্পর্ক ছিন্ন না করে। সেই সাথে যতোক্ষন পর্যন্ত সে তাড়াহুড়া না করে এবং অধৈর্য না হয়।’ সাহাবীর জিজ্ঞেস করল, ‘কিসের দ্বারা মানুষ অধৈর্য হয়ে যাবে?’ রাসূল (সঃ) জবাবে বললেন, ‘সে বলবে আমি দু’আ করেছি এবং করতেই থাকছি। কিন্তু আমি দেখছি আমার দু’আর কোনই জবাব দেওয়া হচ্ছে না। এভাবেই সে আশা হারিয়ে ফেলবে এবং আল্লাহকে স্মরন করা ছেড়ে দিবে’। (সহীহ মুসলিম)


দু’আ কবুল হবার জন্য কিরকম ধৈর্য প্রয়োজন তার একটি প্রতীকি ঘটনা আপনাদেরকে বলি। মিশরের ইসলামী আন্দোলনের নেতা সাইয়্যেদ কুতুব (রহঃ) কে গ্রেফতার করা হল। সেই সাথে তার পুরো পরিবারকেই গ্রেফতার করা হল। মিশরের কারাগার মানেই নরক। সেই ইতিহাস আপনারা অনেকেই জানেন। কারাগারের ভিতরের নির্যাতনে সাইয়্যেদ কুতুবের শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে যাচ্ছিল। এইকারণে ইখওয়ানের কর্মীরা মাসে একবার কারাগারে তাঁদের জন্য ফল পাঠাতো। সে সময় মিশরের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিল শারাওয়ী। শারাওয়ী এই ঘটনা জানার পর নতুন একটি আইন করল। বন্দিদের কোনরূপ ফল দেওয়া যাবে না। এর চার বছর পর মিশরের সরকার পরিবর্তন হল। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শারাওয়ীকে গ্রেফতার করা হল। আর সাইয়্যেদ কুতুব (রহঃ) রা জামিনে মুক্তি পেল। শারাওয়ী এর স্ত্রী তাকে কারাগারে দেখতে গেল। সেইসাথে তাকে দেবার জন্য সঙ্গে একঝুড়ি ফল নিল। কারাগারের মূল ফটকে শারাওয়ীর স্ত্রীর সেই ফলের ঝুড়িটাকে আটকে দেওয়া হল। বলা হল, বন্দিদের জন্য কারাগারে খাবার দেওয়া নিষেধ আছে। চাওয়া এবং পাওয়ার মাঝে সন্তুষ্ট থাকাটাই মানুষের স্বভাব। কিন্তু কিন্তু চাওয়ার পর তা পাওয়ার জন্য উত্তম পন্থায় ধৈর্য ধারণ করা আরো উত্তম স্বভাব। আল্লাহপাক আমাদেরকে এমন উত্তম স্বভাবের অধিকারী হবার তৌফিক দান করুন।

পঠিত : ৭১১ বার

মন্তব্য: ০