Alapon

সারাবিশ্বে রমজান আগমন করে শান্তি ও মুক্তির বারতা নিয়ে, আর বাংলাদেশে আগমন করে চিন্তার কারণ হয়ে!

শবে বরাতের সপ্তাহখানেক আগে বাজারে গেলাম গরুর গোশত কিনতে। বাজারে স্বাভাবিক যা দাম ছিল, সেই দামেই কিনলাম। ৪৮০ থেকে ৫০০ টাকা কেজি।

এরপর থেকেই লোকজনের মুখে শুনছিলাম, গোশতের দাম বেড়ে গেছে। প্রথমে ৫২০ তারপর নাকি ৫৫০ হয়েছে। শবেবরাতের দিন গোশত কিনতে গেলাম, দাম বলল ৬০০ টাকা।
জিজ্ঞেস করলাম, ‘এত্তো দাম ক্যান?’
কসাই বাবাজি পান খেয়ে লাল হয়ে যাওয়া কপাটি দাঁত বের করে বললেন, ‘শবেবরাত! আর সামনে রমজান আইতাছে। হের লাইগ্যা দাম একটু বেশিই! বাংলাদেশে রমজান আইলে দাম এমনিই বাইড়্যা যায়। এইটা তো সবায় জানে। অবাক হইতাচেন ক্যান!’

অবাক হওয়ার আরও অনেক বাকি আছে! শবেবরাত শেষ হলে দাম ৫০ টাকা কমে ৫৫০ টাকা হয়েছে। তারপরও আলহামদুলিল্লাহ। ৫০ টাকা কমে পাওয়া যাচ্ছে। বাংলাদেশ এমন একটা দেশ যে দেশে একবার দাম বাড়লে আর কমে না।

কিছুদিন আগে সরকারের তরফ থেকে বলা হল, ‘রমজানকে কেন্দ্র করে জিনিস পত্রের দাম বৃদ্ধি করা যাবে না। সরকার নাকি পুরো রমজান জুড়ে বাজার মনিটর করবে। কেউ অযথা দাম বাড়ালে তা কঠোর হাতে দমন করা হবে।’

সরকারের এই ঘোষণা শুনে আমার মনে হয়েছিল, এবার তাহলে রমজান শুরুর আগেই সব জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাবে। এবং হয়েছেও তাই।

রমজানের আগমন উপলক্ষ্যে ১৫০ টাকা দামের মুরগী বিক্রি হচ্ছে। মাছের দাম কেজি প্রতি প্রায় ৫০-৮০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। আর কাঁচাবাজারে তো রীতিমত আগুন লেগেছে।

আর আগুন নিয়ন্ত্রন করা বাদ দিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত আমাদের পুলিশ বাহিনী রমজান উপলক্ষ্যে চাদাবাজির পরিমাণটা বাড়িয়ে দিয়েছে। আর তাদের চাদাবাজি বাড়ানোর সাথে সাথে ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। এখন যারা বাজার নিয়ন্ত্রন করতে যাবে, তারাই তো পণ্যের দাম বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান কারণ! অতএব দাম নিয়ন্ত্রন করবে কে?

অথচ সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে দেখতে পাচ্ছি, বহিঃবিশ্বে পবিত্র রমজান উপলক্ষ্যে ভোজ্য জিনিসপত্রের দাম কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিছু কিছু দেশে মাছ, গোশত এবং কাচাবাজারের দাম অর্ধেক করা হয়েছে।

কতক দেশের সরকার নাকি ভর্তুকী দিয়ে রমজান মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমায় এবং বাস্তবিক অর্থে বাজার নিয়ন্ত্রণ করে।

রমজান আসে, আত্নশুদ্ধির জন্য। রমজান আসে, মানুষের মাঝে তাকওয়া অর্জনের জন্য। রমজান আসে গরীবের কষ্ট অনুভব করার জন্য। কিন্তু বাংলাদেশের যা অবস্থা তাতে মনে হয়, রমজান আসে পুলিশের চাঁদাবাজির পরিমাণ বৃদ্ধি করার জন্য।
রমজান আসে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধির জন্য।
রমজান আসে বাজারে আগুন ধরানোর জন্য।
রমজান আসে চুরি-চামারি বেশি করার জন্য।
আর রমজান আসে গরীবের কষ্টটাকে আরও খানিকটা বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য। তারা সারাবছর সীমাবদ্ধ আয়ের মধ্যে জীবন যাপন করে। রমজানের মহত্যনুসারে এই মাসে জীবন-যাপনের খরচ কম হওয়ার জন্য। কিন্তু বাস্তবতানুসারে এই মাসেই বাংলাদেশে জীবন নির্বাহে সবচেয়ে বেশি খরচ হয়।

সারাবিশ্বে রমজান আগমন করে শান্তি ও মুক্তির বারতা নিয়ে, আর বাংলাদেশে আগমন করে মধ্যবিত্ত আর নিম্ন আয়ের মানুষের চিন্তার কারণ হয়ে।

পঠিত : ১৫৩২ বার

মন্তব্য: ০