Alapon

আসুন জেনে নেই, যেসব কারণে রোজা ভঙ্গ হতে পারে...


১) নাকে ও কানে ড্রপ ব্যবহার করলে কিংবা সুরমা লাগালে:
ইমাম ইবনে তাইমিয়া বলেন, "কোরআন হাদিসের বর্ণনা থেকে বুঝা যায় , পানাহার করার মাধ্যমে সিয়াম ভঙ্গ হবে। আর উপরোক্ত কাজগুলোকে আহার বলা হয় না, পান করাও বলা হয় না। এগুলো দ্বারা পানাহার উদ্দেশ্য‌ও হয়ে থাকে না । তাই এগুলো দ্বারা রোজা নষ্ট হবে না। এর উপর ভিত্তি করে ইঞ্জেকশন এবং তার সকল প্রকারভেদে একই হুকুম প্রযোজ্য হবে । তবে ইঞ্জেকশন এর উদ্দেশ্য খাদ্য গ্রহণ হলে কিংবা খাবারের কাজ করলে তা পানাহারের হুকুমের অন্তর্ভুক্ত হবে এবং রোজা নষ্ট হয়ে যাবে। (মাজমুউল ফাতা‌ওয়া ৬/৩২০)

২) জুনুবী অবস্থায় সকাল করলে: অর্থাৎ রাতে গোসল ফরজ হয়েছে কিন্তু ফজরের পরে গোসল করেছে। তাতে রোজার সমস্যা হবে না তবে এত বেশি লেইট করা যাবে না যাতে করে ফজরের নামাজ কাজা হয়ে যায়। 
হযরত আয়েশা ও উম্মে সালমা থেকে বর্ণিত,
ان رسول الله صلى الله عليه وسلم كان يدركه الفجر وهو جنب من اهله ثم يغتسل ويصوم
"রাসূল (সা) স্ত্রী সহবাসের পর গোসল করেননি। এমতাবস্থায় অনেক সময় ফজর উদিত হয়ে যেত এরপর তিনি গোসল করতেন এবং সিয়াম পালন করতেন । (সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিম)

৩) বীর্যপাত হওয়ার আশঙ্কা না থাকলে স্ত্রীকে চুম্বন করা ও জড়িয়ে ধরলে: হযরত আয়েশা বলেন,
كان النبي صلى الله عليه وسلم يقبل ويباشر وهو صائم وكان املككم لإربه 
"রাসুল (সা) সিয়ামরত অবস্থায় স্ত্রীকে চুম্বন করতেন এবং জড়িয়ে ধরতেন। নিজের প্রবৃত্তি আয়ত্ত করার ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন তোমাদের মধ্যে সর্বোচ্চ শক্তির অধিকারী। (প্রাগুক্ত)

৪) মাথা ঠান্ডা করার জন্য পানি ঢাললে: এক সাহাবী বলেন, لقد رايت رسول الله صلى الله عليه و سلم بالعرض يصب على راسه الماء وهو صائم من العطش او من الحر
"আমি রাসুল (সা) কে দেখলাম তিনি তৃষ্ণা থেকে শীতলতা অথবা গরম থেকে ঠান্ডা লাভের আশায় সিয়ামরত অবস্থায় মাথায় পানি ঢালছেন। ( আবু দাউদ লিল আলবানী , হাঃ ২৩৪৮) 
৫) পেটে পৌঁছার আশঙ্কা না থাকলে খাদ্যের স্বাদ নিলে: ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণিত, لا باس ان يذوق الخل او شيء ما لم يدخله حلقه وهو صائم "সিয়ামরত অবস্থায় ঝোল অথবা অন্য কোনো জিনিসের স্বাদ নেওয়াতে অসুবিধা নেই, যতক্ষণ না গলায় পৌঁছে। (বাইহাকি, ৪/২৬১)

৬) রক্তদান করলে: রোজা রেখে শিঙ্গা লাগালে কিংবা কাউকে রক্ত দিলে রোজা নষ্ট হবে না। ইবনে আব্বাস বলেন, ان رسول الله صلى الله عليه وسلم احتجم وهو صائم "রাসূল (সা) রোজা অবস্থায় শিঙ্গা লাগিয়েছেন। (সহিহ বুখারি, ১৯৩৯)
৭) টুথপেস্ট ব্যবহার করলে: টুথপেস্ট বা মাজন ব্যবহার করলে রোজা নষ্ট হবে না। তবে দিনের বেলায় ব্যবহার না করা উত্তম।

৮) গিলে ফেলা থেকে বাঁচা যায় না এমন জিনিস গিলে ফেলা। যেমন দাঁতের ফাঁকে আটকে যায় এমন অবশিষ্টাংশ যদি খুবই অল্প হয় । এটা থুথুর হুকুমের অন্তর্ভুক্ত হবে‌। কারণ এটা থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব নয় তবে শর্ত হলো তা স্বেচ্ছায় গিলা যাবে না ।
#মাড়ি বা দাঁতের অল্প রক্ত: হানাফিদের দৃষ্টিতে মাড়ির রক্ত থুথুর সাথে মিশ্রিত হয়ে যদি পেটে না পৌঁছে শুধু গলায় ঢুকে গেলে সিয়াম ভঙ্গ হবে না । কেননা এটা থেকে বেঁচে থাকা অসম্ভব। তবে থুথুর চেয়ে রক্তের পরিমাণ বেশি হলে তাদের দৃষ্টিতে সিয়াম ভঙ্গ হয়ে যাবে। আর শাফেয়ী ও হাম্বলীদের দৃষ্টিতে থুথুর সাথে রক্তের মিশ্রণ গিলে ফেলার কারণেই সিয়াম ভঙ্গ হয়ে যাবে। ‍(ফিকহুস সুন্নাহ)

৯) ভুলে পানাহার করলে কিংবা স্ত্রী সহবাস করলে রোজা নষ্ট হবে না।

১০) অনিচ্ছায় বমি হলে রোজা নষ্ট হবে না তবে ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করলে রোজা নষ্ট হয়ে যাবে। 
من ذرعه قيء وهو صائم فليس عليه قضاء وان استقاء فليقض
রাসূলুল্লাহ বলেন, কার‌ও যদি মুখ দিয়ে অনিচ্ছাকৃত বমি আসে তাহলে তার ওপর কাজা নেই আর কেউ যদি স্বেচ্ছায় বমি করে তাহলে সে যেন কাজা আদায় করে। সহিহ আবু দাউদ, হাঃ ২৩৮০) 

পঠিত : ১৪০৯ বার

মন্তব্য: ০