Alapon

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি এবং ছাত্রলীগের অবস্থান নিয়ে আমার ভাবনা...

ছাত্রলীগের নাম শুনলেই আমার হাজার বছরের পুরনো সেই আরব গোত্রগুলোর কথা মনে হয়। সেই আরব গোত্রগুলো প্রায়শ মারামারি, কাটাকাটি, ঝামেলা, ফ্যাসাদ নিয়ে লেগে থাকত। এই গোত্রের ভিতরে আবার বিভিন্ন বংশীয় গ্রুপ ছিল। সেই বংশীয় গ্রপের আবার সর্দার ছিল। এই বংশীয় গ্রুপগুলোর মাঝে প্রায়শ মারামারি বা যুদ্ধ হত। যেন তেন যুদ্ধ নয়, মানুষ মারা যুদ্ধ।

আবার যখন এক গোত্রের সাথে অন্য গোত্রের যুদ্ধ লেগে যায়, তখন যুদ্ধচলাকালীণ সময় পর্যন্ত গোত্রের ভেতরকার বংশীয় গ্রুপগুলো অন্তকোন্দলের কথা ভুলে যায়। তখন তারা একজোট হয়ে প্রতিপক্ষের উপর ঝাপিয়ে পড়ে। ঠিক যেমনটা আমরা কোটা সংস্কার আন্দোলন ও নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের সময় দেখেছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই ছাত্রলীগের প্রায় শতাধিক গ্রুপ রয়েছে। তারা নিজেরা নিজেরা মারামারিও করে। কিন্তু ঠিক যখনই বিরোধী দল বা সরকার বিরোধী কোনো শক্তির বিরুদ্ধে দাড়ানোর প্রয়োজন পড়ে, তখন তারা কিছু সময়ের জন্য সব দ্বন্দ ভুলে গিয়ে এক জোট হয়ে যায়। এক জোট হয়ে তারা নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ পরিচালনা করে। আবার যখন বিভিন্ন গোত্র থেকে কোনো আক্রমনের সম্ভাবনা থাকে না, তখন তারা কারণে-অকারণে নিজেরা নিজেদের মধ্যে মারামারি শুরু করে দেয়।

ঠিক যেমন এখন চলছে। আমরা কিছুদিন আগেও দেখেছি, ছাত্রলীগ একজোট হয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলন রুখে দেওয়ার জন্য একজোট হয়ে সরকারের পেটুয়া বাহিনী হিসেবে ভূমিকা পালন করেছে। ডাকসু নির্বাচনে এক জোট হয়ে ভোট কারচুপি এবং জাল ভোটের ব্যবস্থা করেছে। এখন কোটা সংস্কার আন্দোলন নেই, নেই বিএনপি জামায়াত তাই তারা অন্তকোন্দলে মেতে উঠেছে। এবারকার ইস্যু কেন্দ্রিয় কমিটি। কেন্দ্রিয় কমিটিতে জায়গা পাওয়া এবং পদ বঞ্জিতরা একে অপরের সাথে মারামারি করে, চুলোচুলি করে এক জনের মাথা ফাটিয়েছে। সাথে ৮ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছে।

এবার আসি কেন্দ্রিয় কমিটি নিয়ে। কেন্দ্রিয় কমিটি ঘোষণা হওয়ার পর জারিন দিয়া নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রলীগ নেত্রীর একটি ফেসবুক ভাইরাল হয়। সেই পোস্টের মাধ্যমে জানা যায়, ছাত্রলীগের মহিলা নেত্রীদের পদ পেতে হলে আগে কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে শুতে হয়। সোজা বাংলায় বলতে গেলে, নেতাদের মনোরঞ্জন করতে হয়। আর এটা নিশ্চিত করে, দেশের নিরাপত্তায় নিয়োজিত NSI !

এই পর্যায়ে এসে আমার আবার সেই পুরনো সময়কার কথা মনে পড়ে যায়। খ্রিস্টিয় সভ্যতা কিংবা রোমান সভ্যতার সময়কার কথা। সেইসময়কার নারীরা আজকের ছাত্রলীগের নেত্রীদের মত শিক্ষিত ছিল না। তাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মত কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিল না। সেসময় নারীদের তেমন কোনো মূল্যই ছিল না।

কিন্তু তাই বলে কি নারীরা তমে যাবে! নাহ! নারীরা দমানোর জন্য জন্ম নেয়নি। সেসময়েও কতক নারী সাম্রাজ্য বা রাজ মহলের গুরুত্বপূর্ণ কিছু পদে চাকরি করতেন। আর এই চাকরি বাগিয়ে নেওয়ার জন্য সাম্রাজ্যের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের মনোরঞ্জন করতে হতো। তাদের মনোরঞ্জন করতে পারলেই কেবল এই ধরণের লোভনীয় পদে চাকরি পাওয়ার সুযোগ মিলতে পারে।

আজ ছাত্রলীগের অবস্থা দেখছি, সেই রোমান সভ্যতা বা খ্রিষ্ঠপূর্ব সময়কার মত অবস্থা! এখানে পদ পেতে হলে, নিজের স্বতিত্ব বিকিয়ে দিতে হয়। নেতাদের সাথে শুইতে হয়। মনোরঞ্জন করতে হয়।

ছাত্রলীগের অফিসিয়াল গানে দুটি কলি শোনা যায়। ‘পিছনে ফেলে সামনে চল, জয় বাংলা বলে আগে বাড়!’ কিন্তু ছাত্রলীগের প্রকৃত অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, ‘তার সভ্যতার সাথে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে না, বরং জয় বাংলা বলে খ্রিষ্ঠপূর্ব জংলী এবং নোংরা সভ্যতার দিকে চলে যাচ্ছে। আর তাদের এ অবস্থা দেখে বলতে ইচ্ছে হয়, জয় বুঙ্গা বুঙ্গা!

পঠিত : ৬৮২ বার

মন্তব্য: ০