Alapon

আল্লাহর রাসূলের আগমন কি ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার জন্য হয়েছিল?

ইদানিং কেউ কেউ লিখছেন, ‘ইসলামি রাষ্ট্র’ টার্মটা ভুল! এই ধরণের কোনো টার্ম-ই ইসলামে নেই।

আবার কেউ কেউ বলছেন, আল্লাহর রাসূল তো মদীনাকে ইসলামি রাষ্ট্র বানায়নি। এমনকি আল্লাহর রাসূল কখনো ইসলামি রাষ্ট্রের কথাই বলেননি। তিনি সেখানে কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছেন।

এটা ঠিক যে, আল্লাহর রাসূল কখনো এই কথা বলেননি যে, ‘আমার আগমন হয়েছে ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার জন্য।’ আল্লাহর রাসূলের সীরাহ গ্রন্থ ও হাদীস শরীফ খুঁজেও এই ধরণের কোনো কথা বা টার্ম খুঁজে পাওয়া যায়নি।

আল্লাহর রাসূল বলেছেন, ‘আমাকে পাঠানো হয়েছে কেবল নৈতিকতা এবং সদাচারণকে প্রতিষ্ঠা ও সমুন্নত করার জন্যই।’ (মুসনাদে বাজ্জার- ৮৯৪৯)

এই হাদীসের মাধ্যমে আল্লাহর রাসূলের আগমনের উদ্দেশ্যে পরিষ্কার হয়ে যায়। তিনি নৈতিকতা প্রতিষ্ঠা করার জন্য এসেছেন, ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার জন্য নয়। তাহলে নৈতিকতা প্রতিষ্ঠা কীভাবে সম্ভব?

এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হলে আপনাদের একটি গল্প জানতে হবে। আর এই গল্পটি স্বয়ং আল্লাহর রাসূল সা. বলেছেন। তিনি একজন খুনি সম্পর্কে বলেছিলেন। সেই খুনি অনেকগুলো অপরাধ করার পর একসময় নিজের অপকর্মের জন্য দারুণ অনুতপ্ত হয়। কিন্তু কীভাবে এই পাপের মার্জনা পাওয়া যাবে- তা নিয়ে সে সন্দিহান ছিল।

এমন সময় সে একজন জ্ঞানী লোকের নাম জানতে পারল। পাপ মোচনের পথ খুঁজে পাওয়ার আশায় সেই খুনি জ্ঞানী লোকটার কাছে সাহায্য চাইল এবং বলল, ‘আমি শতাধিক খুন করেছি। আমার সেই পাপ মোচনের কোনো সুযোগ আছে কি? জ্ঞানী ব্যক্তিটি উত্তর দিলেন-, ‘তোমার অনুশোচনায় প্রধান বাধা হচ্ছে তোমার নিজ লোকালয়। তাই সেখান থেকে বেরিয়ে এমন জায়গায় যাও, যেখানে আল্লাহর ভালো কিছু বান্দা রয়েছে এবং যারা প্রতিনিয়ত আল্লাহর ইবাদাতে মশগুল থাকে। তুমিও তাঁদের সাথে ইবাদাতে শরিক হও। নিজের গ্রামে আর ফিরে এসো না। কারণ, এটা ভালো কোনো জায়গা নয়। (মুসলিম: ২৭৬৬)

একই ঘটনা ভিন্ন একটি বর্ণনায় পাওয়া যায়। বোঝার সুবিধার্থে সেটিও উল্লেখ করছি। ‘খুনিটি একজন দরবেশের কাছে গিয়ে নিজের অবস্থা ব্যাখ্যা করল। দরবেশ উত্তর দিলেন- ‘তুমি খুব বড়ো আকারের অন্যায় করেছো। জানি না আমি তোমার জন্য কী করতে পারব। তবে এ কথা বলতে পারি, একটু দূরে গেলেই তুমি দুটি গ্রামের দেখা পাবে। একটির নাম নাসরাহ। যেখানে আল্লাহর প্রিয় বান্দারা থাকেন। আর অপর গ্রামটির নাম কুফরাহ। যেখানে আল্লাহকে অস্বীকারীরা বসবাস করে। নাসরা গ্রামবাসিরা সেই আমলই করে থাকে, যা জান্নাতবাসীরা করে থাকে।

আর কুফরাবাসিরা আছে জাহান্নামের পথে। আল্লাহতে বিশ্বাসী কেউ-ই কুফরা গ্রামটাতে থাকতে পারে না। তাই তোমাকে যেতে হবে সেই নাসরার লোকদের কাছে। তুমি যদি সেখানে গিয়ে তাদের সাথে থাকতে পারো এবং তাদের মতো করে ইবাদাত করতে পারো, তাহলে আশা করা যায়, আল্লাহ তোমার অনুতাপ, তোমার ক্ষমা প্রার্থনাকে কবুল করে নিবেন।’” (মুসনাদে আহমদ-১১১৫৪)

আল্লাহর রাসূল বর্ণিত উপরেল্লিখিত ঘটনা থেকে বোঝা যায়, আল্লাহতে বিশ্বাসী এবং নৈতিকতা সম্পন্ন মানুষদের জামাত বদ্ধ জীবন যাপন করতে হবে। নৈতিকতা সম্পন্ন সেই জামাতের জন্য আপনাকে দলবদ্ধ হতে হবে এবং সমাজ ব্যবস্থাকে নৈতিকতা সম্পন্ন করার চেষ্টা করতে হবে।

এই সমাজকে নিয়ন্ত্রন করে কে? আমাদের সমাজ ব্যবস্থাকে প্রচ্ছন্নভাবে নিয়ন্ত্রন করে রাষ্ট্র! যেমন, আমাদের দেশে সরকার সুদকে বাধ্যতামূলক করেছে। তাই আপনি না চাইলেও, কোনো না কোনো ভাবে আপনাকে সুদের সাথে সম্পৃক্ত থাকতে হচ্ছে। আর এই কাজটাকে আমাদের সমাজব্যবস্থা সহজেই গ্রহণ করে নিতে বাধ্য হয়েছে।

তাই সমাজব্যবস্থাকে নৈতিকতা সম্পন্ন করতে হলে, রাষ্ট্র ক্ষমতাকে নিয়ন্ত্রন করতে হবে। আর এ জন্যই ইসলামি দলের প্রয়োজন, ইসলামি রাজনীতি করা প্রয়োজন এবং নৈতিকতা সম্পন্ন রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন। আর নৈতিকতা সম্পন্ন এমন একটি রাষ্ট্রের নামই ‘ইসলামি রাষ্ট্র’।

পঠিত : ১২৩৪ বার

মন্তব্য: ০