Alapon

চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে রমজানের উপকারিত...

সারাবিশ্ব জুড়ে চলছে রমজান মাস। কোথাও একদিন আগে শুরু হয়েছে আর কোথাও একদিন পরে। মূলত রোজা নির্ভর করে চাঁদ দেখার উপর। চাঁদ দেখার মধ্য দিয়ে মুসলিমরা পবিত্র রমজান মাস যথাযথ ভাব,গাম্বির্য ও মর্যাদার সাথে পালন করে থাকে। রমজান মাসে ফজরে আগে সেহরি খেতে হয় আবার মাগরিবের আযানের সাথে সাথে ইফতারি করতে হয়। একটা দির্ঘ সময় কোনো ধরণের পানাহার ছাড়াই থাকতে হয়। তা মোট ঘন্টানুসারে কখনো ১৫ থেক ১৮ ঘন্টা হয়ে থাকে। আবার উত্তর মেরুর দেশগুলোতে তা ২০-২২ ঘন্টা হয়ে থাকে। এতো দীর্ঘ সময় রোজা পালন করলে অর্থাৎ না খেয়ে থাকলে শরীরে কী ধরণের ক্ষতি হয়? অথবা আদৌ ক্ষতি হয় কিনা আজ আমরা সেসব বিষয় নিয়ে লিখব।

রোজা সম্পর্কে ড. আলেগ হিগই বলেছেন, রোজা রাখার ফলে মানসিক শক্তি এবং বিশেষ বিশেষ অনুভূতিগুলো উপকৃত হয়। স্মরণশক্তি বাড়ে, মনোসংযোগ ও যুক্তিশক্তি পরিবর্ধিত হয়। প্রীতি, ভালোবাসা, সহানুভূতি, অতীন্দ্রিয় এবং আধ্যাত্মিক শক্তির বিকাশ ঘটে। ঘ্রাণশক্তি, দৃষ্টিশক্তি, শ্রবণশক্তি প্রভৃতি বেড়ে যায়। এটি খাদ্যে অরুচি ও অনিচ্ছা দূর করে। রোজা শরীরের রক্তের প্রধান পরিশোধক। রক্তের পরিশোধন ও বিশুদ্ধি সাধন দ্বারা দেহ প্রকৃতপক্ষে জীবনীশক্তি লাভ করে। যারা রুগ্ন তাদেরও আমি রোজা পালন করতে বলি।’

বিখ্যাত মনোবিজ্ঞানী সিগমন্ড নারায়াড বলেন, ‘রোজা মনস্তাত্ত্বিক ও মস্তিষ্ক রোগ নির্মূল করে দেয়। মানবদেহের আবর্তন-বিবর্তন আছে। কিন্তু রোজাদার ব্যক্তির শরীর বারংবার বাহ্যিক চাপ গ্রহণ করার ক্ষমতা অর্জন করে। রোজাদার ব্যক্তি দৈহিক খিচুনী এবং মানসিক অস্থিরতার মুখোমুখি হয় না।’

ডাক্তার ক্লিভ তার পেপটিক আলসার নামক গবেষণামূলক পুস্তকে লিখেছেন- ভারত, জাপান, ইংল্যান্ড, দক্ষিণ নাইজেরিয়াতে অন্যসব এলাকার তুলনায় মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় এই পেপটিক আলসার রোগের প্রকোপ অনেক কম। কেননা তারা সিয়াম পালন করে থাকেন। তাই তিনি জোর দিয়ে বলেছেন- 'সিয়াম কোনো রোগ সৃষ্টি করে না'

এগুলোতো বিজ্ঞানী এবং ডাক্তারদের মন্তব্য। আসুন আলাদা করে জেনে নেই, রোজা আমাদের শারীরিক দিক থেকে কী রকম উপকার করে থাকে।

চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে রোজা রাখলে হার্ট ভালো থাকে। রোজা দেহের অতিরিক্ত কোলস্টেরলের পরিমাণ কমায়। এতে রক্তনালীতে জমে থাকা চর্বির উপাদানগুলো কমতে থাকায় হার্ট ব্লকের সম্ভাবনা কমায়। এছাড়া ইফতারি ও সেহরিতে তৈলাক্ত খাবার পরিহার করলে, অতিরিক্ত ওজনদ্বার মানুষ সহজেই নিজের ওজন নিয়ন্ত্রন করতে পারবে। অতিরিক্ত ওজন হার্টের ঝুকি বাড়ায়।

এক গবেষণায় দেখা গেছে, রোজা ডায়বেটিকস রোগীদের জন্য অত্যন্ত উপকারী। বর্তমানে পৃথিবীতে ডায়বেটিকস রোগীর সংখ্যা কয়েককোটি। রোজা দেহের মধ্যে নানাধণের ইনসুলিন তৈরীতে সহায়তা করে। যার কারণে, রোজা ডায়বেটিকস রোগীদের জন্য ভীষণ উপকারী।

রোজা মস্তিষ্কের কার্যক্রম পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তেল জাতীয় অধিক খাদ্য গ্রহণের কারণে যেমন শরীরের ওপর চাপ তৈরী হয়, একই চাপ মস্তিষ্কের উপরও তৈরী হয়। রমজানে সেই চাপ অনেকাংশে হ্রাস পায়। সেক্ষেত্রে সেহরি এবং ইফতারে তেল জাতীয় খাবার বর্জন করাই হবে সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ।

এছাড়া রমজানের মাধ্যমে বদ অভ্যাসগুলো নিয়ন্ত্রন করা যায়। যেমন, ধুমপান। আমাদের সমাজের একটা উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ ধুমপায়ী। ধুমপানের কারণে ধুমপায়ীর নিজের যতোটা না ক্ষতি হয়, ধোয়ার কারণে ধুমপায়ীর পাশ্ববর্তি ব্যক্তিরই বেশি ক্ষতি হয়। একে প্রভাবিত ধুমপান বলা যায়। এই বদ অভ্যাসটি নিয়ন্ত্রনের জন্য রমজান সর্বোত্তম সময় বলে বিশেজ্ঞরা বলেন।

আর রমজানের প্রকৃত মহত্ম এবং শিক্ষা হচ্ছে, আল্লাহ ভীরুতা। রমজানের প্রকৃত শিক্ষা হচ্ছে তাকওয়া অর্জন করা, অর্থাৎ আল্লাহ ভীরুতা অর্জন করা। আল্লাহপাক আমাদের রমজানের প্রকৃত শিক্ষা গ্রহণ করার সুযোগ দান করুন। আমিন।

(তথ্যগুলো ইন্টারনেট থেকে সংগৃহিত)

পঠিত : ১১২৫ বার

মন্তব্য: ০