Alapon

ভারতের নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশের মানুষের আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না কেন...?

আমাদের পাশ্ববর্তি রাষ্ট্র ভারত। বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র।  এই রাষ্ট্রে এখন ভোট গ্রহণ চলছে। দেশজুড়ে মোট ভোটারের সংখ্যা প্রায় ৯০ কোটিরও বেশি। এতো বিশাল সংখ্যক ভোটারের ভোটগ্রহণ ৭ টি ধাপে সমাপ্ত হয়ে থাকে। আগামী ২৩ তারিখ জানা যাবে, ভোটের ফলাফল। সেদিনই নির্ধারিত হবে, দিল্লির মদনতে কে বসতে যাচ্ছে; ফের মোদি সরকার নাকি কংগ্রেস?

মূল আলোচ্য বিষয় সেটি নয়। আলোচ্য বিষয় হল, ভারতের নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশের মানুষের আগ্রহ। ২০১৪ সালের নির্বাচনে আমরা দেখেছি, দেশের সকল রাজনৈতিক দলগুলোর ন্যায় জনসাধারণও ভারতের নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে ছিল। সাধারণ মানুষ ভারতের নির্বাচন পরিস্থিতির দিকে চাতক পাখির চেয়ে ছিল। কারণ, দিল্লির মসনদের সাথে ঢাকার মসনদেরও একটি যোগসাজেশ রয়েছে। ধারণা করা হয়, প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ইন্তেকালের পর থেকে ঢাকার মসনদে কারা বসবে তা নাকি দিল্লির কুশিলবরাই ঠিক করে দেয়। এটা এখন ওপেন সিক্রেট। যার কারণে, রাজনৈতিক দলগুলোর মত সাধারণ মানুষও ভারতের নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে ছিল। সাধারণ মানুষের আগ্রহের কারণে সে সময়ে আমাদের দেশের দৈনিক পত্রিকাগুলোতেও ভারতের নির্বাচন বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছিল। আর টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে জমে উঠেছিল টক শো। 

কিন্তু ভারতের ২০১৪ সালের নির্বাচনের ন্যায় ২০১৯ সালের নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশের মানুষের খুব একটা আগ্রহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। সাধারণ মানুষের আগ্রহ কম ধাকার দরুন পত্র-পত্রিকাতেও ভারতের নির্বাচন আগের মত আর গুরুত্ব পাচ্ছে না। একই সাথে টকশো গুলোও জমে উঠছে না। 

ভারতের নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশের মানুষের আগ্রহ কমতির দিকে কেন?

এটা সবাই জানে, কংগ্রেসের সাথে আওয়ামীলীগের বহুপুরনো সম্পর্ক। এমনকি, ৭৫ এর হত্যাকান্ডের পর বঙ্গবন্ধুর পরিবারের বেঁচে যাওয়া দুই সদস্য শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানা কংগ্রেস সরকারের মেহমান হিসেবে বেশ কিছুদিন ভারতেই কাটিয়েছেন। ধারণা করা হয়, সেই সময়ই কংগ্রেসের সাথে আওয়ামীলীগের সম্পর্কের বীজ রোপিত হয়েছে। সেই বীজ এখন গাছ হয়ে বাংলাদেশের ক্ষমতা দখল করে বসে আছে। 

সাধারণ মানুষের হিসাবনুসারে, যেহেতু শেখ হাসিনার সরকার কংগ্রেস ঘেষা। আর বিজেপি ও কংগ্রেসের মাঝে সাপে-নেউলে সম্পর্ক অতএব কংগ্রেস যদি ক্ষমতায় না আসে তাহলে হাসিনা সরকার বিপাকে পড়বে। এমনকি এটাও হতে পারে, ভারত হাসিনা সরকারের জুলুম,নিপিড়ন, নির্যাতনকে যেভাবে সাপোর্ট করছে বিজেপি সরকার আসলে সেভাবে হয়তো সাপোর্ট করবে না। এ আশাতেই বাংলার মানুষ বুকে আশার ফুল চেপে ধরেছিল। কিন্তু সেই ফুল মুহুর্তের মধ্যেই ঝরে পড়েছে। কারণ, ভারতের পররাষ্ট্রনীতি তো আর হাসিনা-খালেদার নীতি নয় যে, হাসিনা যাকে পছন্দ করে খালেদা তাকে দুই চক্ষে দেখতে পারে না। আবার খালেদা যারে পছন্দ করে হাসিনা তাকে দেখতে পারে না। ভারতের পররাষ্ট্রনীতি মহিলা মানুষের সস্তা ঝগড়ার মত নয়। এই পররাষ্ট্রনীতি তৈরী হয় দেশের স্বার্থকে সামনে রেখেই। হয়েছেও তাই!

কথিত আছে, ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং নাকি ক্ষমতা ছাড়ার আগে নরেন্দ্র মোদিকে গোটা কয়েক পরামর্শ দিয়েছিলেন। সেই পরামর্শগুলোর মধ্যে একটি ছিল, বাংলাদেশ নিয়ে পররাষ্ট্রনীতি যেন পরিবর্তন না হয়। এখানে যেন ভারতের স্বার্থকে প্রাধাণ্য দেওয়া হয়। আর ভারতের স্বার্থকে সার্ভ করার জন্য বাংলাদেশে  একমাত্র বিশ্বাসযোগ্য দল হল আওয়ামীলীগ। অতএব, মোদি সরকার যেন আওয়ামীলীগকে সমর্থন দেওয়া বন্ধ না করে। 

আর হয়েছেও তা-ই। কংগ্রেস সরকার হাসিনা সরকারকে যতোটা সহায়তা দিয়েছে, মোদি সরকার তার থেকে কোনো অংশে পিছিয়ে ছিল না। কতক জায়গায় কংগ্রেসের চেয়ে বিজেপি-ই এগিয়ে ছিল।

বাংলার জনগণ এটা বুঝতে পেরেছে, ভারতের ক্ষমতার মদনস পরিবর্তন হলেও তার কোনো আশা নেই। ভারতের ক্ষমতার পালা বদল হলে পররাষ্ট্রনীতির কিছু ভাষা হয়তো পরিবর্তন হয়, কিন্তু কর্ম অপরিবর্তনীয়-ই থাকে। যেমনটা আজও ভারত সরকার বাংলাদেশের স্বৈরাচার সরকারকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। যার কারণে, বাংলার আপামর সাধারণ জনতার ভারতের নির্বাচন নিয়ে তেমন কোনো আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। সবাই বুঝে গেছে, ভারতের সব সরকারের একই বিষ! বাংলাদেশে স্বৈরাচারকে সমর্থন দিয়ে শোষণের বিষ!

পঠিত : ৮৯০ বার

মন্তব্য: ০