Alapon

ইসলামের দৃষ্টিতে ঋণ খেলাপিদের পরিণতি...

কোনো এক রমজান মাস হবে হয়ত। ইফতারি কেনার জন্য বাহিরে বের হয়েছি, বিল্ডিংয়ের নিচে দেখি এক দম্পতি ইফতারের দোকান দিয়ে বসেছে। আমার দেখে বেশ ভালোই লাগল। হালাল উপার্জনের জন্য তারা দুজন মিলেই চেষ্টা করছে, দৃশ্যটা সত্যিই মনে রাখার মত।
তাদের কাছেই ইফতারি ক্রয় করলাম।

আমি জানি না, আমার মত আর সবাই চিন্তা করেছিল কিনা! সেই রমজানে তাদের বেশ ভালোই ব্যবসা হয়েছিল। ব্যবসার লাভের টাকা দিয়ে তারা ছোট্ট একটি দোকান ভাড়া করে এবং সকালের নাস্তা; পরোটা ও ডাল বিক্রি করতে শুরু করে।

তাদের দোকানের ডালটা ছিল বেশ মজাদার। যার কারণে সেই দোকানে পুরো সকাল জুড়েই ভিড় লেগে থাকত। বছরখানিক তার ব্যবসা কিন্তু বেশ ভালোই চলেছে। এরপর সে তার ব্যবসরা পরিসর বাড়ানোর চিন্তা করল। আরও একটি নতুন দোকান ভাড়া নিল। তারপর সেই দোকান সে তার ছোট ভাইকে দিয়ে চালানো শুরু করল।

এই দোকান কিন্তু সে তার লভ্যাংশের টাকা দিয়ে গড়তে পারেনি। এই দোকান ভাড়া নিতে এবং চালু করতে তাকে স্থানীয় সমিতি থেকে ঋণ গ্রহণ করতে হয়েছে!

এভাবে কিছুদিন চলার পর এক সকাল বেলা দেখি তার দুটি দোকনই বন্ধ। এভাবে সপ্তাহ খানেক বন্ধ দেখার পর জানতে পারলাম, সে ঋণের টাকা পরিশোধ করতে না পেরে রাতের আধারে পরিবার-পরিজন নিয়ে পালিয়ে গেছে। সে কি সত্যিই পালাতে পেরেছে?

আমি এরূপ ঘটনা আরও অনেকবারই দেখেছি। ঋণের টাকা পরিশোধ করতে না পেরে রাতের আঁধারে পরিবার পরিজন নিয়ে পালিয়ে যায়। কিন্তু তারা কি সত্যিই পালিয়ে বাঁচতে পারে?

একজন মুসলিমের জন্য দুনিয়ার জীবন-ই শেষ জীবন নয়। এ জীবনের পর আরও একটি জীবন আছে। সেই জীবনটাই হল মুসলিমদের জন্য আসল জীবন। এমনকি পৃথিবীর তাবদ মানুষকে সেই জীবনের মুখোমুখি হতে হবে। তাই যারা দুনিয়ার জীবনে ঋণ পরিশোধ না করে পালিয়ে গেছে তাদের উদ্দেশ্যে আল্লাহর রাসূলের একটি হাদিস উল্লেখ করছি-

‘একবার জিহাদের ময়দানে যাওয়ার সময় সৈন্য সামন্ত নিয়ে আল্লাহর রাসূল একটি রাস্তার মোড়ে দাড়ালেন। এবং সকল সৈন্যের উদ্দেশ্যে চিৎকার করে বললেন, ‘তোমরা শুনে রাখো, যদি কারও কোনো ঋণ থাকে আর তার মধ্যে এই আশঙ্কা থাকে যে সে যুদ্ধের ময়দানে শহীদ হয়ে যেতে পারে, তাহলে ঋণগ্রস্থ হয়ে মরার চেয়ে উত্তম হবে যদি সে ফিরে যায়। আমার সাথে তার যাওয়ার দরকার নেই। কারণ সেই অপরিশোধিত ঋণটি তাকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাতে পারবে না।’ (রাজিন)

বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের অর্থনীতির দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই, অগনিত ঋণখেলাপি। এই ঋণখেলাপিরা কিন্তু কোনো গরিব বা মিসকিন টাইপ কেউ নয়। এরা প্রত্যেকেই স্ব-স্ব অবস্থানে প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু তারা ঋণ গ্রহণ-ই করে খেলাপির জন্য।

আর আমাদের মাঝে একশ্রেণীর মানুষ আছে যারা একবার ঋণ গ্রহণ করলে তা আর ফেরত দেওয়ার প্রয়োজন মনে করে না। আমার ব্যক্তি জীবনেও বার কয়েক এরূপ ঘটনার মুখোমুখি হয়েছি। কিন্তু এখন ঋণ গ্রহণ করে ঋণ পরিশোধ না করাই একটি ফ্যাশন হয়ে দাড়িয়েছে। আর তাদের চিহ্নিত করেছেন, হুকুম অমান্যকারী হিসেবে।

মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামী সূরা আরাফের ১০২ নাম্বার আয়াতে বলেছেন, ‘আর তাদের অধিকাংশ লোককেই আমি প্রতিজ্ঞা বাস্তবায়নকারীরূপে পাইনি; বরং তাদের অধিকাংশকেই পেয়েছি হুকুম অমান্যকরী হিসেবে।’

অতএব ঋণ পরিশোধ না করে দুনিয়ার জীবন থেকে হয়তো খানিক সময় পালানো যাবে, কিন্তু অনন্ত জীবনে পালানোর কোনো সুযোগ নেই। বরং সেই দিন আল্লাহ ঋণ খেলাপি এবং ঋণগ্রস্থদের খুব শক্তভাবে পাকড়াও করবেন।

পঠিত : ৯২৪ বার

মন্তব্য: ০