Alapon

যান্ত্রিক এই শহরের ঈদটাকেও যান্ত্রিক মনে হয়...

ছোটবেলায় একবার দেখেছিলাম, ছোট চাচ্চু ঈদ করার জন্য নাকি বাড়ি আসবে না! কারণ, সামনে এডমিশন টেষ্ট। বাড়ি গেলে পড়াশুনার ক্ষতি হবে, তা-ই এই ঈদটা মেসেই করবে।

তখন আমি আব্বাকে বলেছিলাম, ‘আব্বা, ঈদে যারা বাড়ি আসে না তারা কি মানুষ? আমার কেন জানি, তাদের মানুষ মনে হয় না!’

সেই আমি-ই আর ঈদে বাড়ি যাই না। গতকাল এক ছোটভাইকে বললাম, ‘ঈদে বাড়ি যাচ্ছি না।’
তখন সে বলল, ‘আপনি কি মানুষ?’
তার এই প্রশ্ন শুনে উপরোক্ত ঘটনাটি মনে পড়ে গেল। আমি হাসলাম, অনেক হাসলাম।

আমাদের অফিসে উত্তরবঙ্গের মানুষের আধিক্য বেশি। তাই অফিসে রমজানের শেষের দিনগুলোতে প্রধান আলোচ্য বিষয় থাকে, ‘কে টিকেট পেয়েছে; ট্টেন নাকি বাস? কে কবে যাচ্ছে, কবে ফিরতেছে; এগুলোই। এসব নিয়ে তাদের সেকি টেনশন!

একটা সময় আমার আফসোস হত, ‘ইশ! আমারও যদি এমন টেনশন থাকত।’
আল্লাহ আমাকে হয়তো একটু বেশিই পছন্দ করেন। তাই এরূপ টেনশন থেকে গত ৫ টি বছর ধরে আমাকে মুক্ত রেখেছেন। আলহামদুলিল্লাহ।

এই শহরে ঈদ করতে আমার ভালোই লাগে। ৮টায় ঈদের জামায়াত। যাস্ট ৮ টাতেই জামায়াত শুরু হবে। জামায়াত শেষে আমি আর আমার দুলাভাই কোলাকুলি করি। তারপর দুজনে মাথা নিঁচু করে হেলতে দুলতে বাসায় ফিরি।

ঐ সময়টা আমাকে অসহায় দেখায় কিনা জানি না, তবে দুলাভাইকে দারুণ অসহায় দেখায়! এতোবড় একটি শহর, এতো মানুষ, অথচ ঈদের নামাজ শেষে আমাদের সাথে কোলাকুলি করবার মত কোনো মানুষ নেই। এই শহরের মানুষরা অপরিচিত মানুষের সাথে বুক মেলায় না!

ছোটবেলায় ঈদের দিন যদি কাউকে ঘুমাতে দেখলাম, তখন খুব অবাক হতাম। ঈদের দিন কেউ ঘুমায় নাকি! আমার মনে পড়ে, ছোটবেলায় একবার অসুস্থ থাকার কারণে ঈদের দিনটা ঘুমিয়ে কাটাতে হয়েছিল। ঈদের দিনটা ঘুমের মাঝে কেটে যাওয়ায় আমার আফসোসের শেষ ছিল না। আর এখন?

ঈদের নামাজ পড়ে এসেই শুয়ে পড়ি, তারপর মনে মনে জব করি, ‘আয় ঘুম আয়!’ কিন্তু এইদিন আর ঘুম আসতে চায় না।

সেদিন অফিসে একজন জিজ্ঞেস করল, ‘ঈদের সময় ঢাকাকে কেমন দেখায়?’
তাকে বললা, ‘ঈদের সময় এলেই ঢাকাটা উলঙ্গ হয়ে যায়!’
সারাবছর মানুষ আর গাড়ির চাপে, ব্যস্ততার ভিড়ে ঢাকার উলঙ্গ অবস্থাটা চাপা পড়ে যায়। কিন্তু ঈদ এলেই তা উন্মুক্ত হয়ে যায়।
সে আমার কথা বুঝতে পারে না। বিষ্ময়ভরা চোখ নিয়ে আমার পানে চেয়ে থাকে।

তখন তাকে বলি, ‘এই শহরে কত মানুষ যে খোলা আকাশের নিচে রাত কাটায় তা কেবল ঈদ এলেই স্পষ্ঠ হয়। হাইকোর্ট প্রাঙ্গন, কমলাপুর আর ফ্লাইওভারের নিচে কত হাজার মানুষের বসবাস তা কেবল ঈদ আসলেই চোখে পড়ে। সরকারের ভাষ্যমতে দেশ উন্নতির স্বর্ণশিখরে পৌঁছে যাচ্ছে, কিন্তু তাদের জীবনের কোনো পরিবর্তন আসে না।’

সর্বোপরি, যান্ত্রিক এই শহরের ঈদটাকেও যান্ত্রিক মনে হয়।

পঠিত : ৬৭৬ বার

মন্তব্য: ০