Alapon

সৌভাগ্যের বরপুত্র জেনারেল এরশাদ...

স্বৈরশাসক! গণতান্ত্রিক যুগ এসে পৃথিবীর কোনো কোনো না দেশে স্বৈরশাসন চলছে। আবার কোথাও রাজতন্ত্রের নামে স্বৈরশাসন চলছে। এই স্বৈরশাসকদের পতনও ঘটে।

ক্ষমতায় থাকাকালীণ স্বৈরশাসকরা যেমন সবসময় আলোয় ঝলমলেময় অবস্থায় থাকে। তেমনি পতনের সাথে সাথে তাদের অবস্থান হয় অন্ধকার কারাগার অথবা চির ঠিকানা কবর। যেমন, যুগশ্রেষ্ঠ স্বৈরশাসক এডলফ হিটলার। কথিত আছে পতন অনিবার্য দেখে হিটলার আত্মহত্যা করেছিলেন।

অতো দূরে না গিয়ে সাম্প্রতিক সময়ের দুজন শাসকের কথা বলি। ইরাকের সাবেক প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেন। সাদ্দাম হোসেন ব্যাপক প্রভাব এবং প্রতিপত্তির সাথেই বহু বছর ধরে রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিলেন। বিধব্বংসী অস্ত্র রাখার অজুহাতে আমেরিকা ইরাকে হামলা চালানোর আগ পর্যন্ত সাদ্দাম হোসেনই ইরাকের ক্ষমতায় ছিলেন। কিন্তু হামলা চালানোর পরপরই সাদ্দাম হোসেন লোকচক্ষুর আড়ালে চলে যান। এরপর মার্কিন বাহিনী একটি পরিত্যাক্ত বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে তাকে বিচারের মুখোমুখি করে এবং বিচারে তাকে ফাঁসির দন্ডে দন্ডিত করা হয়। এরপর এক কাকডাকা ভোরে প্রচন্ড ক্ষমতাধর এই শাসকের ফাঁসি কার্যকর করা হয়।

ইরাকের কিছুটা পাশেই আর একটি দেশ, লিবিয়া। এখনও লিবিয়া নামটি শুনলেই চোখে ভাসে লৌহমানবখ্যাত মুয়াব্বার গাদ্দাফির কথা। লিবিয়ায় তার স্বৈরশাসন অনেক বছর ধরে স্থায়ী ছিল। তারপর আরব বসন্তের জের ধরে লিবিয়াতেও আন্দোলন দানা বাঁধতে শুরু করল। এক পর্যায়ে সেই আন্দোলন রক্তক্ষয়ি সংঘর্ষে রূপ ধারণ করল।

এরপর লৌহ মানব খ্যাত মুয়াব্বার গাদ্দাফি বিদ্রোহীদের হাতে নির্মমভাবে নিহত হন। তাকে হত্যা করার সেই চিত্র গোটা বিশ্ববাসী দেখেছে।

এবার আসল কথায় ফিরে আসি। বিশ্বের কোথাও স্বৈরশাসকদের পতন হবার পর, তাদের রাজনীতিতে ফিরে আসাতো দূরের কথা, অধিকাংশরাই অন্ধকার কারাগারে মারা গেছে অথবা বিদ্রোহীদের হাতে নিহত হয়েছে। কিন্তু ব্যতিক্রম ছিলেন একমাত্র বাংলাদেশের স্বৈরশাসক জেনারেল হুসেইন মুহাম্মাদ এরশাদ।

জেনারেল এরশাদ ১০ বছর দেশ চালানোর পর এক জনরোষে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন। তারপর তার স্থান হয় কারাগারে। এরপর দির্ঘদিন তাকে কারাগারে বন্দি থাকতে হয়।

১৯৯৬ সালের নির্বাচন এরশাদের জন্য আর্শীবাদস্বরূপ দেখা দেয়। কারণ, উক্ত নির্বাচনে আওয়ামীলীগ এবং বিএনপির মধ্যে কোনো দলই নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করতে পারেনি। সরকার গঠন করতে হলে জেনারেল এরশাদের রাজনৈতিক দল জাতীয় পার্টির সাপোর্ট প্রয়োজন।

তখন আওয়ামীলীগের সভানেত্রি শেখ হাসিনা জেল গেটে এরশাদের সাথে দেখা করেন এবং কয়েকটি শর্তের বিনিময়ে সমর্থন আদায় করেন। শর্তগুলোর মধ্যে একটি ছিল, আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় গেলে তাকে আর জেলে বন্দি থাকতে হবে না। আর এরশাদকে জেলে বন্দি করেছিল খালেদা জিয়া। যার কারণে খালেদা জিয়ার উপর এরশাদের ক্ষোভ ছিল। এরপর জেনারেল এরশাদের সমর্থনে ১৯৯৬ সালে আওয়ামীলীগ সরকার গঠন করে।

এরপর থেকে বাংলাদেশের ক্ষমতার ভাগ্য নির্ধারণে এরশাদ সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হিসেবে আর্বিভূত হয়েছিলেন। স্বৈরশাসক হয়ে এরূপ সৌভাগ্যের বরপুত্র হওয়ার ভাগ্য হয়তো পৃথিবীর আর কোনো স্বৈরশাসক লাভ করতে পারেননি!

পঠিত : ৬৭৬ বার

মন্তব্য: ০