Alapon

আলেমগণের ইখতিলাফের অনুসরণ করা উচিত, ইফতিরাক বা বিভক্তির নয়!

যুবাইর ইবনুল আওয়াম রা. বলেন, রাসূল সা. বলেছেন, ‘পূর্ববর্তী উম্মতগণের ব্যাধি তোমাদের মধ্যে ধীরে ধীরে প্রবেশ করছে, সে ব্যাধি হল হিংসা ও বিদ্বেষ। বিদ্বেষ মুণ্ডনকারী। আমি বলি না যে, তা মাথা মুণ্ডন করে, বরং তা দীন মুণ্ডন করে। যার হাতে আমার জীবন তাঁর শপথ! ঈমানদার না হলে তোমার জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। আর তোমরা পরস্পর ভালো না বাসলে ঈমানদার হতে পারবে না। আমি কি তোমাদের সে বিষয়ের কথা বলব না, যা তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক ভালোবাসা সৃষ্টি করবে। তোমাদের মধ্যে সালামের প্রসার ঘটাও।’ (তিরমিযী, আস-সুনান ৪/৬৬৪)

উপরোক্ত হাদীসটি পড়ে ভাবলাম, আমাদের বর্তমান অবস্থা সত্যি সত্যি সেই জাতির মত হয়েছে, যাদের মাঝে হিংসা ও বিদ্বেষ বিদ্যমান ছিল। হিংসা ও বিদ্বেষ শব্দদুটির অবস্থানও পাশাপাশি। মূলত হিংসা থেকেই বিদ্বেষের জন্ম নেয়।

বর্তমানে এই হিংসা ও বিদ্বেষ সবচেয়ে বেশি প্রত্যক্ষ করা যাচ্ছে আলেম এবং ওলামাদের মাঝে। আলেম এবং ওলামারা দীনের মুস্তাহিদ। অথচ একজনের সাথে অপরজনের মতের মিল না হলেই পরস্পর পরস্পরের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ শুরু করে।

এই অবস্থা যেন তৈরী না হয় সে জন্য ইসলামে ‘ইখতিলাফের সুযোগ রয়েছে। ইখতিলাম অর্থ মতদ্বন্দ অথবা মতভেদ করা। অর্থাৎ দীনের কোনো বিষয়ে বিভিন্ন আলেম বিভিন্ন মত দিতে পারেন। এবং তারা প্রত্যেকেই নিজের মতকে শুদ্ধ মনে করে, সেই মতের উপর অটল থাকতে পারবেন। এই অবস্থাকে ইসলামে ‘ইখতিলাফ বলা হয়। কিন্তু বর্তমানে ইখতিলাফের স্থান ‘ইফতিরাক দখল করে নিয়েছে।

ইফতিরাক অর্থ বিচ্ছিন্ন হওয়া অথবা দলে দলে বিভক্ত হওয়া। বর্তমানে অনেক আলেম আর ইখতিলাফ না করে ইফতিরাক করছেন। অর্থাৎ কোনো বিষয়ে মতের মিল না হলেই বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছেন। অপর পক্ষকে বাতিল বা ভ্রান্ত বলে ঘোষণা করছেন। ইখতিলাফের মূল সৌন্দর্য হল, মতভেদ স্বত্ত্বেও কেউ কারো মতকে বাতিল বলে গণ্য না করা। কারও প্রতি বিদ্বেষ পোষণ না করা এবং সর্বোপরি পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা না হারা। আর ইফতিরাকের মূল উদ্দেশ্যই হল, পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া। কার্যত ইখতিলাফ এখন গৌণ বিষয়, আর ইফতিরাক মূখ্য বিষয়ে পরিণত হয়েছে।

অথচ, ইফতিরাক অর্থাৎ দলে দলে বিভক্ত হয়ে যাওয়া ইখতিলাফের সবচেয়ে নিন্দনীয় পর্যায়। ইখতিলাফ সবসময় ইফতিরাক মানে দলাদলি সৃষ্টি করে না। সাহাবীগণের সময় থেকে সব যুগেই আলেম ওলামাদের মধ্যে ইখতিলাফ ছিল, অর্থাৎ মতভেদ ছিল। কিন্তু তাদের মাঝে ইফতিরাক অর্থাৎ দলে দলে বিভক্ত হয়ে যাওয়ার প্রবনতা খুব কমই দেখা গেছে। শরীয়তের দৃষ্টিতে ইখতিলাফ বা মতভেদ নিষিদ্ধ নয়। কিন্তু ইফতিরাক বা দলাদলি সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ।

অথচ আজকের আলেমগণ ইখতিলাফে বা মতভেদে বিশ্বাসী নন, ইফতিরাক বা দলাদলিতে বিশ্বাসী। কারও মতামত বা ফতোয়া আপনার পছন্দ হল না, আর আপনি অমনি তাকে বাতিল বলে ঘোষণা দিলেন, এসব ইসলামে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ! অথচ আজকের আলেমরা এই নিষিদ্ধ কাজেই বেশি আগ্রহী!

পঠিত : ৮৭৭ বার

মন্তব্য: ০