Alapon

কাশ্মীর ইস্যুতে পাকিস্তানকে একঘরে করতে গিয়ে, ভারত এখন নিজেই একঘরে!

এইতো কিছুদিন আগের কথা! মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যেন ‘পাকিস্তান’ দেশটির নামই শুনতে পেতেন না। অথবা তার আচার-আচরণ দেখে মনে হতো পাকিস্তান নামে যে একটি দেশ আছে, তিনি হয়ত জানেন-ই না।

একথা সর্বজনবিদিত, পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকেই আমেরিকার সাথে তাদের পারস্পরিক সম্পর্ক খুবই ভালো। সেই সুবাদে পাকিস্তান আমেরিকার হয়ে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙ্গতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাও রেখেছিল। মার্কিন ডলার আর পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর কৌশলের কাছে পুরো সোভিয়েত ইউনিয়ন পরাজয় মানতে বাধ্য হয়েছে। তারই দরুন আজ পৃথিবীর বুকে সোভিয়েত ইউনিয়ন কেবলই একটি ইতিহাস। এ কথা অস্বীকার করতে কোনো দ্বিধা নেই, আজও যদি সোভিয়েত ইউনিয়ন থাকত তাহলে আমেরিকার মোড়লিপনা করার কোনো সুযোগই থাকত না।

যাই হোক, এ সব পুরনো ইতিহাস। আমেরিকার নীতি হচ্ছে, স্বার্থ যতক্ষণ আছে ততক্ষণ বন্ধুর জন্য সবই করবে। কিন্তু স্বার্থ শেষ, তারপর বন্ধুর পাছায় লাত্থি মারতে কসুর করবে না। পাকিস্তানের ক্ষেত্রেও হয়েছে তাই। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন ঘটেছে, পাকিস্তানের প্রয়াজনীয়তাও ফুরিয়ে গেছে। এরপর ক্রমান্বয়ে পাকিস্তানের সাথে আমেরিকার সম্পর্ক খারাপ হতে থাকে।

তারপর সেই সম্পর্ক পুনরায় গভীর বন্ধুত্বে রূপ নয় টুইনটাওয়ার হামলার পর। টুইনটাওয়ারে হামলার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত নয়। তখনই আবার পাকিস্তানের বন্ধুত্বের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। আর অর্থনৈতিকভাবে ভঙ্গুর পাকিস্তানও ডলারের লোভে মার্কিনিদের বন্ধুত্বের আহব্বানে সাড়া দেয়। এভাবেই পাক-মার্কিন সম্পর্ক স্বার্থের উপরে টিকে আছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আবারও পাকিস্তানের বন্ধুত্বের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। যার কারণে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প খুব অপ্রত্যাশিত ভাবে ভারতকে চটিয়ে কাশ্মীর ইস্যুতে মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছে। যা ভারতসহ রাজনীতি সচেতন অধিকাংশ মানুষকেই ভীষণ অবাক করেছে। কারণ, বিগত কয়েকবছর ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারতের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কটা বেশ জোরদার হচ্ছিল। তাই সকলেই ভেবেছিল, এই সম্পর্কের জেরে আমেরিকা কোনো মধ্যস্থা না করলেও চুপচাপ থাকবে হয়ত!

কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বরাবরই স্বার্থ সচেতন। স্বার্থের বাইরে আমেরিকা কিছুই করে না। তালেবানদের বাগে আনতে আমেরিকার এখন পাকিস্তানকে প্রয়োজন। তাই ট্রাম্পের গলাও কাশ্মীর ইস্যুতে মধ্যস্থতার সুর। আবার আজ পত্রিকায় দেখলাম ডোনাল্ড ট্রাম্প সন্ত্রাস ইস্যুতে ভারতের ব্যাপক সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘পাকিস্তান সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে কিছুটা হলেও সহায়তা করেছে। তবে ভারত একদমই করছে না। এটি কিন্তু ঠিক নয়।’

যারা সাম্প্রতিক সময়ে আফগানিস্তানের খবরাখবর রাখেন, তারা নিশ্চয়ই জানেন, আফগানিস্তানে মার্কিন বাহিনী প্রচন্ড নাজুক অবস্থার মধ্যে রয়েছে। কাগজে-কলমে না হলেও, বাস্তবিক দিক থেকে আমেরিকা আফগানিস্তানের যুদ্ধে পরাজয় বরণ করেছে। তালেবানরা ইতিমধ্যেই আফগানিস্তানের অধিকাংশ এলাকা দখল করে এখন রাজধানী কাবুলের দিকে ধেয়ে আসছে। তারই ফলাফলস্বরূপ, আমেরিকা তালেবানদের সাথে নেগোসিয়েশন করতে চাচ্ছে!

তালেবানদের লজিস্টিক সাপোর্ট যে অধিকাংশ ক্ষেত্রে পাকিস্তানই দেয়, এ কথা এখন ওপেন সিক্রেট। সে কারণে, তালেবানদের বাগে আনতে এবং নেগোসিয়েশনের শর্ত যেন সহজ হয়, সেই লক্ষ্যে আমেরিকা এখন পাকিস্তানের সহযোগিতা চাইছে। জানি না, পাকিস্তান সহযোগিতা করবে কিনা! কিন্তু এরই প্রেক্ষিতে আমেরিকার অবস্থান যে ভারতের পক্ষে নয়, এটাই বা কম কিসে! আমেরিকা ভারতের পক্ষে অবস্থান নিলে পাকিস্তান এখন যতটা আক্রমনাত্মক ভূমিকা পালন করছে, তখন হয়ত এতোটা সম্ভব হতো না।

সর্বোপরি দেখা যাচ্ছে, কাশ্মীর ইস্যুতে ভারত পাকিস্তানকে এক ঘরে করতে চাইলেও, আদৌত ভারতই এক ঘরে হয়ে গেছে!

পঠিত : ১২১১ বার

মন্তব্য: ০