Alapon

র‍্যাব: একটি ঠান্ডা মাথার খুনি সংগঠন।

 


একটি দুটি হাজার হাজার সাধারণ মানুষকে নির্যাতন ও শত শত মানুষ খুনের দায়ে অভিযুক্ত এই সরকারি খুনি বাহিনী। সাত খুনের কথা তো সবাই জানে। নতুন করে হানিফ মৃধার কথাও আপনারা জানেন। এরই মধ্যে চাঞ্চল্যকর তথ্য দেয় সুইডিশ রেডিও। 

খুব সম্ভবত র‍্যাব যাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে খুনী বানায় তাদের একটি প্রশক্ষণের অডিও রেকর্ড পেয়েছে সুইডিশ রেডিও। যার খুব অল্প অংশ তারা প্রচার করেছে। তারা বলেছে যে ব্যক্তি এই রেকর্ড ইংরেজিতে অনুবাদ করেছে সে অস্থির হয়ে গিয়েছিল। বারবার সে প্যানেল থেকে বের হয়ে পানি খাচ্ছিল।  


অডিওতে র‌্যাবের উচ্চপদস্থ এক কর্মকর্তাকে বলতে শোনা যায়, “তোমরা যদি তাকে(টার্গেটকৃত ব্যক্তিকে) খুঁজে পাও, শুট এন্ড কিল হিম(গুলি করো এবং হত্যা করো), যেখানেই থাকুক। এরপর তার পাশে একটি অস্ত্র রেখে দাও।” 


বিচারবহির্ভুত হত্যার এমন রোমহর্ষক নির্দেশ দেয়ার পর পুলিশের এলিট ফোর্স কিভাবে কাকে হত্যা করবে এসব তালিকা কিভাবে নির্বাচন করে এসব নিয়ে কথা বলতে শোনা যায়। এমনকি এই কর্মকর্তা যে নিজেই অসংখ্য হত্যার সাথে জড়িত তা নিজেই উল্লেখ করেন।


র‌্যাবের এই কর্মকর্তা আরো বলেন, কিভাবে র‌্যাব তাদের টার্গেটকৃত ব্যাক্তিকে হত্যা করে, অনেকটা বলতে এমন জায়গা যা চিন্তাও করা যায় না, ধরুন চা এর দোকান বা দৈনন্দিন কাজে যেসব জায়গায় মানুষ যায়। অর্থাৎ মানুষ যখন অত্যন্ত স্বাভাবিকভাবে তার নিয়মিত কাজ করবে তখন র‍্যাব হত্যা করবে। 


র‌্যাব কর্মকর্তা বর্ণনা করেন কিভাবে পুলিশ সন্ত্রাসীদের কাছ থেকে ঘুষ নেন। এমনকি তারা অবৈধ অস্ত্র কিনে মানুষকে খুন করে সেই অস্ত্র তার পাশেই রেখে দেয়। আসলে সাধারন মানুষ কখনো অবৈধ অস্ত্র রাখে না। কিন্ত পুলিশ যাকে হত্যা করছে তারও পুলিশকে হত্যার উদ্দেশ্য ছিল এই ধরনের বিষয় প্রমানের জন্য, বলতে গেলে আত্মরক্ষার্থে তারা গুলি ছোড়ল, এই বক্তব্যের যথার্থতার জন্য নিহতের পাশে অস্ত্র রেখে দেয়া হয়।


দুইঘণ্টাব্যাপী এই গোপন রেকর্ডিং খুবই স্পর্শকাতর। আর র‌্যাব যে হত্যা এবং জোরপূর্বক গুম করে এই বিষয়টি এই কর্মকর্তা তার বক্তব্যে বার বার উল্লেখ করেন। 
গুমের ক্ষেত্রে তিন ধরনের কৌশল ব্যবহার করে থাকেন-
(১) টার্গেটকৃত ব্যক্তিকে অপহরন
(২) তাকে হত্যা করা
(৩) তার লাশ চিরতরে গুম করে ফেলা।
আলাপকালে তিনি বলেন, কোন লাশ নদীতে ফেলে দেওয়ার আগে তারা লাশের সাথে ভারি ইট বেঁধে দেন। আসলে পুলিশ যাকে হত্যা করবে, তাকে অনেকটা বলা হয় এরকম যে- তোমাকে তোমার বন্ধুর কাছে নিরাপদে দিয়ে আসব বলে নিয়ে চলে, কিন্ত পরবর্তীতে তাকে হত্যা করে।


তিনি আরো কথা বলেন যা অনেকেটা সিনেমার মত- যেসব অফিসার এই ধরনের অপারেশনে যায়,তারা অনেকে নিখুঁতভাবে এই কাজ করে। এটাও সত্য গুম এরপর হত্যা, এই ধরনের কাজে সব পুলিশ দক্ষ না। তাই এই ধরনের অপারেশনে কোন প্রকার ক্লু বা সামান্য চিহ্নও যাতে না থাকে, এমনকি আমাদের আইডিকার্ড, আমাদের গ্লাভস পরতে হয় যাতে আংগুলের ছাপ পাওয়া না যায়। এমনকি জুতার মধ্যেও আলাদা আবরন লাগানো হয়। আরেকটা বিষয় অপারেশনের সময় আমরা কিন্ত ধূমপান করতে পারি না।


তিনি জানান, আসলে এই ধরনের ঘটনা প্রতিদিন হচ্ছে। অনেক নিরীহ মানুষ গুম হচ্ছে। আসলে যে কেঊ এই পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে পারে।


এই কর্মকর্তার মতে, রাজনীতিতে বিরোধীদলের বিশাল একটা অংশকে নিশ্চিহ্ন করা যেমন এই ধরনের অপারেশনের লক্ষ্য। আরেকটা বিষয় হতে পারে- জনসংখ্যা বৃদ্ধির নিয়ন্ত্রনের জন্যও এটা একটা উপায়।

এই র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, আসলে র‌্যাব যাদেরকে ধরে নিয়ে আসে, তাদের ভাগ্য আসলে উপরের নির্দেশের উপর নির্ভর করে। তিনি এই গোপন রেকর্ডিংয়ে গুমকৃত ব্যক্তিদের উপর কিভাবে অত্যাচার করা হয় এই বিষয়গুলোও বলেন। আসলে একটা অন্ধকার কক্ষের ঠিক মাঝখানে একটি হালকা আলোর বাতি দিয়ে গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিকে নগ্ন অবস্থায় রাখা হয়। তাকে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে রাখা হয়, আর তার অন্ডকোষে ইট বেঁধে দেয়া হয়। ইটের ওজনের কারনে তার অন্ডকোষ অনেকেটা মুছড়িয়ে যায়। যার ফলশ্রুতিতে এই ধরনের ব্যক্তি অবচেতন হয়ে যায়, আর বুঝাই যায় না সে কি মৃত না জীবিত।


ফাঁস হওয়া অডিওটি শুনতে ও তাদের প্রতিবেদন পড়তে সুইডিশ রেডিওর ওয়েবসাইট দেখুন। 

পঠিত : ৭৪৯ বার

মন্তব্য: ০