Alapon

নারী অধিকার সম্পর্কে ইসলাম।

স্কুলে পড়াকালীন সময়ে বায়োলজি আমার সবচেয়ে প্রিয় সাবজেক্ট ছিল। অন্যান্য যেকোন সাবজেক্টের চেয়ে বায়োলজিটা একটু বেশিই ভাল পারতাম মনে হয়। সেই ভাল পারার কারণে বায়োলজি সাবজেক্টের স্যারের সঙ্গে আমার খুব ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সেই সম্পর্কটা ছাত্র এবং শিক্ষকের বাহিরেও অতিরিক্ত কিছু একটা ছিল। যার কারণে স্কুল থেকে কলেজ, কলেজ থেকে আরো অনেকদূর গড়িয়ে যাওয়া পরও স্যারের খবর রাখি।

শুনলাম, স্যারের সংসার নাকি সুখের হচ্ছে না। কারণ, তাদের বাচ্চা। স্যার বয়সে তরুন। সনাতন ধর্মের অনুসারী স্যার চাকরী পাওয়ার পরপরই বিয়ে করেন। অনেকদিন নিঃসস্তান ছিলেন। কিন্তু এরপর স্যার প্রথম সন্তানের মুখ দেখলেন। কিন্তু সেই সন্তান স্যার অথবা স্যারের মা বাবা এমনিকি তাদের পক্ষের কাউকেই খুশি করতে পারলো না। কারণ বাচ্চাটি ছিল মেয়ে। স্যার মনোক্ষুন্ন হলেন। এমনকি তিনি আমাদেরকে মিষ্টিও খাওয়ালেন না। 

এর দু’বছর পর স্যারের দ্বিতীয় সন্তা পৃথিবীর আলো দেখল। কিন্তু এবারও স্যারকে খুশি দেখলাম না। কারণ দ্বিতীয় সন্তানও মেয়ে। স্যারের মা খুবই মনোক্ষুন্ন হলেন। এমনকি নিজের ছেলের বউ এর সঙ্গে কথা বলাই বন্ধ করে দিলেন। স্যারও বউ এর উপর খুবই অসুন্তষ্ট হয়ে পড়লেন। এমনকি তিনি তার বউকে ঘোষনা দিলেন, পরের বাচ্চা যদি মেয়ে হয় তবে তাকে ঘর ছাড়তে হবে। অর্থাৎ স্যার তাকে তালাক দিয়ে দিবেন। এরপর কি হয়েছিল আমি আর জানি না। ইচ্ছে করেই খবর রাখিনি। সেই স্যারের সঙ্গেও আর কথা হয় না। কখনো কখনো মনে হয়, যে মানুষ মানুষ গড়ার কারিগর সে যদি এমন আচরন করে তবে আমরা কোন মানুষ পেতে যাচ্ছি! অবাধ্য মনটা মাঝে মাঝে তাকে স্যার বলতেও নিষেধ করে। কিন্তু এতো আর নতুন কিছু নয়। এমনটা সেই আইয়্যামে জাহেলিয়াতের পূর্ব থেকেই ঘটে আসছে।

পৃথিবীর বুকে যখন থেকে পৌত্তলিকতা ঠাঁই করে নিল ঠিক তখন থেকেই নারীদের জন্মকে এমন খাটো করে দেখা শুরু হল। এমনকি একটা সময় ছিল যখন নারী শিশুদের হত্যা করাকে পূণ্য হিসেবে দেখা হত। সেই সময়ের কবিরা নারী শিশুদের হত্যা করতে কবিতা লিখে মানুষদের উৎসাহিত করত। নারী শিশুকে হত্যার রেওয়াজটি আরব অঞ্জলে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় ছিল। সেই আরবে আজ আর কোন নারী শিশু হত্যার কথা শোনা যায় না। কিন্তু রাতারাতি তাদের এই পরিবর্তনের কারণ কি?
আরবরা সত্যিই অনেক ভাগ্যবান। তারা এমন একজন ব্যক্তির সান্নিথ্য পেয়েছিল যার সংস্পর্শে এসে তারা পৃথিবীর অন্যতম অসভ্য জাতি থেকে বর্তমানে সভ্য জাতিগুলোর অন্যতম জাতি হিসাবে গন্য হয়ে থাকেন। আর সেই মানুষ হলেন হযরত মুহাম্মাদ (সঃ)। 
হযরত মুহাম্মাদ (সঃ) সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে বিখ্যাত লেখক জর্জ বার্ণাড শ বলেন,
‘I believe that if a man like Muhammad were to assume the dictatorship of the modern world he would succeed in solving its much needed peace and happiness...
If any religion has the chance to ruling over England nay Europe within next hundred years it can only be Islam. It is only religion which appears to me to posses the assimilating capacity to the changing phase of existence which can make its appeal to every age.'

ইসলাম এই রাসূল (সঃ) এর মাধ্যমেই নারীদের বেঁচে থাকার অধিকার দান করেন। নারীদেরকে সম্মানিত করেন। তিনি নারীদের সম্মান বোঝাতে গিয়ে বলেন, আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসূল (সঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সাবালক হওয়া পর্যন্ত দু’টি কন্যা সন্তানকে লালন-পালন করবে, হাশরের ময়দানে আমি এবং সে এভাবে থাকব। এ কথা বলে আল্লাহর রাসূল হাতের দু’টি আঙ্গুলকে এভাবে একত্রিত করে দেখালেন।’ (সহীহ মুসলিমঃ ৪৭৬৫)





এছাড়াও রাসূল (সঃ) কোন পুরষের পিতা ছিলেন না। তাঁর ঘরে শুধুমাত্র কন্যা সন্তানই ছিল। এছাড়াও রাসূল (সঃ) বিদায় হজ্জের ভাষণে নারীদেরকে আরো অধিকা সম্মানিত করে গেছেন। তিনি বলেন, “হে লোক সকল! তোমরা নারীদের সঙ্গে সদাচরনের ব্যাপারে অন্তিম উপদেশ গ্রহণ কর। কেননা, তারা তোমাদের নিকট আবদ্ধ। তোমরা তাদের ব্যাপারে কোন মালিকানা রেখো না। তবে তারা কোন প্রকাশ্য অশ্লীল কান্ডে লিপ্ত হলে ভিন্নকথা। যদি তারা প্রকাশ্যে কোন অশ্লীল কর্মকান্ডে লিপ্ত হয় তাহলে তাদের বিছানা আলাদা করে দাও এবং তাদেরকে অল্প প্রহার কর। যদি তারা তোমাদের আনুগত্য স্বীকার করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কোন পন্থা অবলম্বন করতে যেও না। নিশ্চয় তাদের তোমাদের উপর রয়েছে কিছু হক। তাদেরও তোমাদের উপর হক রয়েছে। তোমাদের অধিকার তোমাদের স্ত্রীদের উপর হলো তারা তোমাদের বিছানায় কাউকে জায়গা দিবে না যাদের প্রবেশ করাটা তোমাদের নিকট সন্তোষজনক নয়। তোমরা জেনে রাখো, তাদের অধিকার তোমাদের উপর হলো তোমরা তাদের সাথে সুন্দর আচরন করবে তাদের খাওয়া দাওয়া ও ভরনপোষনের ব্যবস্থা করবে।” (সহীহ মুসলিম-২৬৭১)

এভাবেই পর্যায়ক্রমে ইসলাম নারীকে সম্মানিত করেছে এবং তাদের অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছে। যেখানে নারীরা বেঁচে থাকার অধিকারটুকুই ছিল না সেখানে ইসলাম নারীদেরকে সম্পত্তিতে ভাগও প্রদান করেছে। কিন্তু আজ কিছু প্রগতিশীল নামধারীর অপপ্রচারে মনে হয়, ইসলামই যেন নারীদের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। হায় হতভাগা! হতভাগার দল নারীদের অধিকার অধিকার করতে গিয়ে তাদের এমন এক পর্যায়ে নামিয়ে এনেছে যেখানে নারীরা স্রেফ পন্য হিসাবে গন্য ছাড়া আর কিচ্ছু না।

পঠিত : ৭৩৬ বার

মন্তব্য: ০