Alapon

ভোলার ঘটনায় কিছু বলার নেই, আছে শুধু হাজারটা প্রশ্ন...


সত্য কিংবা মিথ্যা (গুজব) - দুই কারণেই জনরোষ তৈরি হতে পারে। যার উপর ভিত্তি করে মানুষ রাস্তায় বিক্ষোভেও নেমে আসতে পারে। কিন্তু তাই বলে কি গুলিই সমাধান? তারও আগের প্রশ্ন হল, মহানবী (স) কে কটাক্ষ করে যে ব্যক্তি (লোকটির ধর্ম বিশ্বাস আমার কাছে মুখ্য নয়) বিভিন্ন জনকে মেসেজ দিয়ে বেড়ালো সে ঘটনা কি একেবারেই মিথ্যে? সরকার একথা বলুক! আমরা এই প্রশ্নের উত্তর জানতে চাই।

আমার কাছে সবচেয়ে মূখ্য প্রশ্ন হচ্ছে, মহানবী (স) সহ অন্য যেকোনও ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব, ধর্ম ও ধর্মের খোদাকে নিয়ে অবমাননাকর কথা গণপরিসরে ছড়িয়ে বেড়ানো কে কি সরকার অপরাধ মনে করে? যদি সরকার এটিকে অপরাধ মনে করে থাকে, তাহলে সে কি এটা মনে করে যে একটি অপরাধের বিরুদ্ধে জনতার ফুঁসে উঠার কোনও অধিকার নেই? মানুষের বিশ্বাস, আবেগ ও ধর্মভিত্তিক অনুভুতিকে সরকার কিভাবে মূল্যায়ন করে? ধর্মের পবিত্র ব্যক্তিত্বদের নিয়ে কটাক্ষ করলে সেটার বিরুদ্ধে যদি জনতা প্রতিবাদ করে তাহলে কি সরকার জনতাকে গুলি করে মারবে?

সরকারের এবং সরকারের সমর্থকদের সবচাইতে সম্মানের পাত্র হচ্ছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাঁকে নিয়ে কটাক্ষ করলে এবং সেটা নিয়ে প্রতিবাদ হলে সরকার কি সে প্রতিবাদকারীদের দিকে গুলি ছোড়ে? যে ব্যক্তি কটাক্ষ করে সে ব্যক্তিকে কি সরকার ছেড়ে দেয়? সরকারের এবং সরকারের সমর্থকদের যেমন এমন একজন নবী আছেন যাকে কটাক্ষ করা যায় না, করলে সরকার ও তার সমর্থক গোষ্ঠীর প্রচন্ড রাগ হয়, প্রতিশোধ স্পৃহা জেগে উঠে- ঠিক তেমনি মুসলমানদেরও তো এমন একাধিক নবী আছেন যাদের কটাক্ষ করা হলে মুসলমানদের প্রচন্ড রাগ হয়, প্রতিশোধ স্পৃহা জেগে উঠে। সেক্ষেত্রে সরকার কি নিজের ব্যাথা যেভাবে অনুভব করে সেভাবে মুসলমানদের ব্যথা অনুভব করবে না? মুসলমানদের এই অনুভুতির সাথে সরকারের অনুভুতির পার্থক্যটা এতো বেশি হয়ে গেল কেন যে- একজনের অপমানে সরকার মুহুর্তের মধ্যে অপরাধীকে গ্রেফতার করে আরেক জনের অপমানে সে অপরাধীর পক্ষ হয়ে খোদ প্রতিবাদকারীকেই খুন করে?

অত্যন্ত যৌক্তিক ভাবেই বুঝতে পারি যে, রাসুলুল্লাহ (স) কে এই প্রথম কটাক্ষ করা হয় নাই। তাঁর জীবদ্দশায় তাকে এরকম প্রচুর অবমাননাকর মন্তব্যের তির সৈতে হয়েছে। সে সময় সাহাবারা (আ) গন ছিলেন। তাঁরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অবশ্যই। কিন্তু এভাবে অথোরিটির অনুমতি ছাড়া নিয়ন্ত্রনহীন জনতাকে নিয়ে সরাসরি কি পথে ঘাটে উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি করেছেন? যদি করে থাকেন তাহলে সেটা কিভাবে করেছেন? আমরা কি ঠিক সেভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছি? আর যদি না করে থাকেন তাহলে আমরা কোন বেসিসে এভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছি? এসব কটাক্ষ ও অবমাননামূলক মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে কুরআন ও সুন্নাহ থেকে কি আমরা এভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাবার শিক্ষা পাই?

আমাদের নিজেদেরকে আরেকটি প্রশ্ন করতে চাই। বিগত দুই এক বছরে কি রাসুল (স) কে নিয়ে একটিও অবমাননাকর মন্তব্য হয় নাই? অবশ্যই হয়েছে, একাধিকবার হয়েছে। কিন্তু তখন কেউ রাস্তায় নামে নাই। গন্ডগোল হয় নাই। মারামারি হয় নাই। তাহলে আজকে কেন হঠাৎ করে এভাবে মানুষ রাস্তায় নামলো। হটাৎ করে আজকেই কেন এটা এমন হল? আগে কেন হল না?

প্রশ্ন থেকে যায়, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করা হয়েছিল কিনা? নাকি প্রথমে প্রতিবাদেই সবাই যোগ দিয়েছে? অভিযোগ করা হয়ে থাকলে প্রশাসন কি রেসপন্স করেছে? কেন করেছে? এগুলো পরিশকার জেনে কি আমরা প্রতিক্রিয়ায় নেমেছি? আমি জানি না। আমি কেন এগুলো বলছি? বলছি একারণে যে, আপনি কি হলপ করে বলতে পারেন যে এটা নিরেট একটা প্রতিবাদ? এটার পেছনে কি পর্দার আড়াল হতে কোনও ইঞ্জিনিয়ারিং বা নীল নকসা নেই?

সব শেষ প্রশ্ন সেখান থেকেই আসে, যেখান থেকে শুরু করেছিলাম। মিথ্যে বা গুজব থেকে হোক আর সত্য হোক- মানুষের প্রতিবাদ ঠেকাতে সরকার কেন খুন করতে যাবে? কেন গুলি ছুড়তে হবে? সরকার কি মনে করে এভাবে খুন করে করে শহীদের পরিবার ডেকে নিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেই সব মিটমাট হয়ে যাবে? সরকার কি মানুষের লাশ এতই সস্তা দামে কিনতে চায়?

আজকে যারা শহিদ হল তাঁরা তো সরল বিশ্বাসে সহীহ নিয়তে শহীদ হয়ে গেল। কিন্তু এই শাহাদাৎ আমাদের কি কাজে আসবে? এর আগে যারা এভাবে শহীদ হয়েছে আমরা তাঁদের শাহাদাতকে কি কাজে লাগাতে পেরেছি?

লিখেছেন: জাবাল আত তারিক

পঠিত : ১৫৮২ বার

মন্তব্য: ০