Alapon

শর্তযুক্ত ঐক্যের আহ্বান অনৈক্যের সুদুরপ্রসারী পরিকল্পনা মাত্র।


কওমী ঘরানার বঙ্গদেশীয় মুরব্বিরা জামায়াতের সাথে রাজনৈতিক ঐক্য করার পুর্বে চারটি শর্ত দিয়েছিলেন। কি কি শর্ত দিয়েছিলেন সেটা সবাই জানেন, যারা জানেন না তারা জিঞ্জেস করে নেন। তার মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য একটি শর্ত হচ্ছে জামায়াতকে মওদূদীর সকল বই বাদ দিতে হবে। কেউ কেউ আরেকটু এগিয়ে গিয়ে বলছেন, সব বই পুরিয়ে ফেলতে হবে। অনেকে অবশ্য একটু নরম ভাবেই বলেছেন, মওদূদীর চিন্তাধারা পরিত্যাগ করতে হবে। অবশ্য কি সেই চিন্তাধারা, কিইবা তার ধরন সেটা কেউ ক্লিয়ার করতে পেরেছেন বলেও আমার জানা নেই। তাছাড়া রাজনৈতিক ঐক্যের ধরনইবা কেমন এবং এর প্রয়োজনীয়তা কোন বিষয়কে উপলক্ষ করে সেটাও অনেকের ধারনা বাইরে বলেই মনে হয়েছে। এ অবস্থায় ঐক্য নিয়ে কথা বলার সুযোগও কমে যায়।

বস্তুত শর্ত দিয়ে ঐক্য প্রচেষ্টার দাবি করাও অনৈক্যের কারণ কারণও বটে। ঐক্যের প্রয়োজনে মওদূদীর দর্শন, ভাবনাকে ত্যাগ করার এরকম দাবি যারা করেন তাদের পুর্ব এবং বর্তমান ইতিহাস নিয়ে কথা বলার আগে আমরা প্রথমে একটি বিষয় ক্লিয়ার করে দেওয়া জরুরী মনে করছি আর তাহলে এই যে, মওদূদীর বইর স্বত্ব জামায়াতের একার নয়, এটা ফি সাবিলিল্লাহ। যে কেউ প্রকাশ করতে পারে, প্রচার করতে পারে। ফলে মওদূদীর পাঠকদের তার কিতাব অধ্যায়ন থেকে জামায়াত কোন অবস্থায় নিবৃত করতে পারে না। বাকি রইলো, মওদূদীর চিন্তাধারার বিষয়ে। সেটারও খোলাশা হওয়া দরকার।

জামায়াত বা মাওলানা মওদূদী রহ যে রাষ্ট্র ব্যবস্থার গাড়াপত্তন করতে চেয়েছে বা চাচ্ছে, রাষ্ট্র ব্যবস্থায় খেলাফতের পুর্ণ বৈশিষ্ট বিদ্যমান রাখার দাবি করে তার বিষয়ে বিরুদ্ধবাদীদের আপত্তির কোন ফিরিস্তি জামায়াতের কাছে নেই। প্রশ্ন হলো, খেলাফতের যে বৈশিষ্ট মাওলানা মওদূদী বিশ্বাস করেন, তার সাথে কোন কোন পজিশানে কওমীদের বিরোধ সেটা কিন্তু আজো অব্দি কেউ ক্লিয়ার করেনি। এ বিষয়টি ক্লিয়ার হওয়া দরকার। ঐতিহাসিক কিতাব পত্র রচনা বা পর্যালোচনার ক্ষেত্রে হুশ রাখা চাই। লেখকের সকল বক্তব্য আমার বুঝ মতো নাও হতে পারে, এ কারণে ঐতিহাসিক কিতাবগুলো আক্বীদার কিতাব বানিয়ে তা নিয়ে ময়দান গরম করা উদ্দেশ্য প্রনোদিত ।

আর জামায়াত সাংগঠনিক সিলেবাসে বিভিন্ন ধারার লেখকদের কিতাবের পাশাপাশি মওদূদী রহ এর বই রাখার অন্যতম কারণ হলো এই যে, ইসলামী সংগঠন, ইক্বামাতে দ্বীনের প্রয়োজনে সংঘবদ্ধ প্রচেষ্টার প্রয়োজনীয়তা এবং পাশ্চাত্য সভ্যতায় আকুণ্ঠে প্রেমে আসক্ত জাতির সামনে তার অসাঢ়তা তুলে ধরে সেকুল্যারীজম সহ সমকালিন ভ্রান্ত মতবাদগুলো সহজ সরল ব্যবচ্ছেদ করার চিত্র মওদূদীর বাইরে অন্য কারো কলমে ততটা সাবলিল ভাবে খুজে পাওয়া যায় না। যেসকল ব্যক্তিরা এ বিষয়ে কলম ধরেছেন, তারাও মওদূদী রহ এর যুক্তিকেই ফলো করেছেন। তার কিতাব পত্র থেকে, ভাবনা থেকে উপকৃত হয়েছেন।

ফলে ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় হোক, প্রচুর সংখ্যক লেখক, সাহিত্যিক, দার্শনিক ইতিমধ্যে তৈরি হয়েছে যারা মওদূদীর সাহিত্যের মুহতাজ ছিলেন, আছেনও। ফলে চাইলেও মওদূদীর সাহিত্যকে বাতিল সাভ্যস্ত করা যাবে না। যেসব বিষয়ে মওদূদীর সাথে আমাদের ভিন্নমত রয়েছে, সেসব বিষয়ে আমরা নিজ নিজ দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী কর্মপদ্ধতি তৈরি করতে পারি কিন্তু ঢালাও ভাবে মওদূদীর সকল খেদমতকে বাতিল সাভ্যস্ত করতে পারি না, এটা সম্ভবও নয়। এটা যদি লজিক হিসেবে ধরে নেওয়া হয় তাহলে দুনিয়াতে কস্মিনকালেও মুসলিমদের ঐক্য সম্ভব নয়। কারণ কোন ঘরানার মুরব্বিদের কিতাবই ভুলভ্রান্তী থেকে মুক্ত নয়। ফলে কারো কিতাবে ভুল দেখেই সেটা বাতিলের দাবি করা অনুচিত।

আমার জানা মতে, জামায়াত করে না, জামায়াতের কোন প্রোগ্রামে কখনোই বসেনি, এরকম লক্ষ লক্ষ লোক মওদূদীর সাহিত্য থেকে উপকৃত হচ্ছে। খোদ দেওবন্দের বহু ওলামারা মওদূদীর রহ সাহিত্যকে হীরার সাথে তুলনা করেছেন, মওদূদী রহ কে ডিফেন্ড করে যত কিতাব রচিত হয়েছে তার অধিকাংশই কওমী তথা দেওবন্দী কোন মুরব্বির হাতে লিখিত হয়েছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, মওদূদী রহ কে নিয়ে দেওবন্দের ভিতরকার মতপার্থক্য, চিন্তার দুরত্ব্য দুর করার দায়িত্ব্য কে নেবে ? মওদূদীর রহ ব্যাপারে তারা নিজেদের চিন্তাগত পজিশান ঠিক না করে অন্যদের নিয়ে ভাবনার সুযোগ পায় কিভাবে ?

কওমী তথা দেওবন্দের একটি অংশ, বিশেষত নেতৃত্বে থাকা অংশটি বার বার মওদূদী রহ কে নিয়ে যে তিলেসমাতি এখতেলাফে লিপ্ত রয়েছেন এবং উপমহাদেশে এর যে ব্যপক মার্কেটিং করেছেন তার ফলাফলই হচ্ছে গোটা উপমহাদেশে মুসলিম উম্মার বিভক্তি। খোদ কওমী ঘরানাতেও বিভক্তির মুলে রয়েছে ঐসব মার্কেটিং প্রসেস। কিন্তু ইতিহাস কি বলে ? মাওলানার বিরোধীতার ধরণ এবং প্রকৃত কারণ কি শুধুমাত্র আক্বায়েদ, দ্বীনি ইখতেলাফ, ইলমী নজরীয়াই ছিলো ? সত্যিই কি মাওলানা আক্বায়েদের ক্ষেত্রে আহলে সুন্নাতের বাইরে ছিলেন ? মাওলানার ইখতেলাফী নজরীয়া কি আহলে ইলমের খেলাফ ছিলো ? মওদূদীর ফিকহী দৃষ্টি ভঙ্গি কি নতুন কোন ফেরকার গোড়া পত্তন করেছিলো যেটা মুসলিমদের মাঝে আলাদা ভাবে প্রচলিত হয়ে উঠেছে ? মোটেও না। এর কোন প্রমাণ কেউ দিতে পারেনি, যা কিছু দাবি করা হচেছ তার অসাঢ়তা ইতিপুর্বে বহুবার প্রমাণ করা হয়েছে।

মাওলানা মওদূদী রহ এর চিন্তাধারা যে আহলে সুন্নাতের ট্র্যাকেই ছিলো, তার আক্বায়েদের পজিশান যে কোন দিক থেকেই দেওবন্দের বাইরে ছিলো না সেটার উৎকৃষ্ট প্রমাণ হচ্ছে এটাই যে, ততকালে কোনরুপ ব্যক্তিগত স্বার্থ্য ছাড়াই দেওবন্দের সুতিকাঘার বা দেওবন্দের শিকড় নামে পরিচিত ব্যক্তি, গোষ্টি তথা পরিবার থেকেই মাওলানা মওদূদীর পক্ষে বহু কলম উত্থিত হয়েছিলো। যারা মওদূদীর সাথে এক দিন দেখাও করেননি, তার সাথে সরাসরি কথাও বলেননি তারাও মওদূদীর সাহিত্য সরাসরি অধ্যায়ন করে তার ওপরে জুলুম হওয়ার বিষয়ে জাতিকে সতর্ক করেন এবং কিছু বুজুর্গের অতি মাত্রায় মওদূদী বিরোধীতাকে উম্মাহর জন্য ক্ষতিকর বলে মত দিতে থাকেন। তাদের প্রকাশিত সেই সময়কার পত্রিকাগুলোর অসংখ্য কলাম স্বাক্ষী রয়েছে।

তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন মাওলানা আমের ওসমানী রহ, মাওলানা ইউসুফ রহ, মাওলানা মাজেদ দরিয়াবাদী রহ সহ বহু ওলামায়ে কেরাম। মাওলানা ওসমানী পরিবারের ততকালের সব থেকে মেধাবী লোকটিই মওদূদীর রহ ওপরে আরোপিত মিথ্যাচারের দালিলিক জবাব দিয়েছেন ক্রমাগত ভাবে। মওদূদী বিরোধীদের নিক্ষিপ্ত তোহমদের যে গোলা বর্ষিত হতো তার মোকাবেলায় নিজের মেধার সবটুকো উজার করে দিয়েছেন এবং নিজের পত্রিকার বিশাল এক অংশ জুড়ে কেবল সে বিষয়ে কলাম লিখেছেন। তার বিষয়ে মাওলানা মওদূদী রহ বলেছেন, দেওবন্দের কতিপয় ব্যক্তির ক্রমাগত হিংসা, বিদ্ধেস প্রসূত মিথ্যাচারের বিষয়ে যে সবর আমি করেছি তার মিঠা ফল হলেন হযরত আমের ওসমানী রহ ।

শুধু আমের ওসমানী র নয়, বহু দেওবন্দের মাশায়েখগন তখন মওদূদীর এর খেদমতের বিষয়ে নিজ নিজ কলমে স্বাক্ষ্য দিয়েছেন। মাওলানার মৃত্যুর পরে যে বিশাল স্মরনিকা প্রকাশিত হয়েছে তাতে উপমহাদেশের বিভিন্ন ঘরানার ওলামা, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বও তো ছিলেনিই সাথে বহু দেওবন্দী মুরব্বির স্বাক্ষ্যও রয়েছে। মাওলানা ইউসুফ রহ তো মওদূদীর ওপরে আনিত ফিকহী ইখতেলাফের দালিলিক জবাব দিয়েছেন । মওদূদীর ওপর আনিত অভিযোগের তাত্বিক পর্যালোচনা নামে দুই খন্ডের বিশাল এক কিতাব তিনি লিখেছেন। তিনি কিন্তু তার এলাকাতে বাংলার হাফেজী হুজুর রহ এর মতোই বা তার থেকেও বেশি দেওবন্দী মুরব্বি হিসেবে সম্মানিত ছিলেন। তিনি বার বার দবি করেছেন, ইলমী ইখতেলাফকে আক্বায়েদের গলদ প্রমাণের যে ভয়াবহ ফেতনার উত্থান আমাদের কতিপয় ওলামারা করছেন, তার অনলে গোটা উম্মাহকে জ্বলতে হবে।

অতএব, যারা এতসব হিসেব নিকেষ মাথায় না নিয়েই সোজা এক বাক্যে বলে দেন যে, জামায়াতের সাথে ঐক্য তখনই হবে যখন মওদূদীকে ছাড়া হবে, তারা সত্যিই নিজেদের পজিশান ভুলে গেছেন। তারা ভুলে গেছেন যে, তাদের সাংগঠিনক, দার্শনিক চিন্তাধারার বিশাল অংশ মওদূদীর ইলমী, সাংগঠনিক খেদমতের ওপরে বিনির্মান হয়েছে। ইক্বামাতে দ্বীনের যে প্রবল আকাঙ্খা তাদের মধ্যে দেখা যাচ্ছে তার সাথে ততকালিন দেওবন্দের নজরিয়াতও যদি তারা সামনে রাখতো তাহলে দেখতে পেতো যে, মওদূদী রহ যে চিন্তাধারার প্রচলণ ঘটানোর কারণে কতিপয় দেওবন্দী মুরব্বির রোষানলে পড়েছেন, নতুন ফিরকার গোড়া পত্তনের মতো ভয়াবহ অভিযোগের সামনে দাড়িয়ে গেছেন, সেই চিন্তাধারার তারাও স্বার্থক্য প্রচারক, লালনকারীই নয়, বরং মওদূদীর সেই দর্শনের বিশাল বহরের অগ্র সেনাও বটে। কিন্তু তারা সেটা বুঝেও বুঝতে চাচ্ছে না না কেন জানি না।

অতএব, মওদূদীকে ছাড়তে হলে নিজেদের সাংগঠনিক সিস্টেমের শুরু থেকে ঝেড়ে ফেলুন। নিজেদের ভিতরে লালিত ইক্বামাতে দ্বীনের আধুনিক ধারণা বা দর্শনের যে চর্চা করছেন, সেটা ঝেড়ে ফেলে দিন। বিভিন্ন মতবাদের বিরুদ্ধে যে সকল তত্ব, যুক্তি, দালিল পেশ করার নতুন ধারনার উন্মেষ ঘটেছে এবং যার চর্চা আপনারা করছেন সেগুলো পুরোপুরি বদলে ফেলুন, তবেই বুঝতে পারবো যে, মওদূদী কে ছাড়ার যে দাবি আপনারা করছেন তার সত্যিকার অধিকার আপনারা রাখেন বা সেরকম পজিশানে আপনারা আছেন।

মনে রাখা দরকার যে, ইক্বামাতে দ্বীনের যে দর্শন বা শরয়ী স্কিমের ওপরে বর্তমান মুসলিম উম্মাহর বিভিন্ন অঞ্চলে ইসলামী সংগঠন কায়েম হয়েছে তার অধিকাংশের দার্শনিক ভিত্তি কিন্তু মওদূদীর চিন্তাধারা। বিশেষ করে উপমহাদেশের বিভিন্ন হক্কানী দল ও গোষ্টি তাদের সাংগঠনিক যে প্রসেসের প্রেকটিস করেন, তার শতভাগ বিরোধীতায় দেওবন্দের বহু শায়েখের কিতাব রচিত হয়েছে সেই শুরু থেকেই। মাওলানা আশরাফ আলী থানবী রহ বলেছিলেন, এসবে আমার অন্তর সায় দেয় না। মাওলানা নদভী শুুরুর দিকে জামায়াতে ছিলেন কিন্তু তিনি পরবর্তিতে ইসলামী আন্দোলনের এই প্রসেসের সাথে দ্বিমত করেন এবং দাওয়াত ও তাবলীগকেই একমাত্র সমাধান জ্ঞান করে বহু কিতাব রচনা করেন।

তিনি জামায়াত ত্যাগ করার সময় তাকে নেতৃত্ব নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয় কিন্তু তিনি রাজি হননি, মাওলানা মওদূদীকেই অধিকতর যোগ্য মনে করেন। অতিমাত্রায় রাজনৈতিক এক্টিভিটি, মওদূদী বিষয়ে দেওবন্দের মুরব্বিদের ক্রমাগত বিরোধীতার কারণে তিনি জামায়াত ত্যাগ করেন কিন্তু জামায়াত ত্যাগ করার পরে নতুন করে ইসলামী আন্দোলন বা ইক্বামাতে দ্বীন কেন্দ্রিক কোন সংগঠনে তিনি আর জড়াননি এবং নিজেও সহীহ কোন দল গঠনের উদ্যোগ নেননি। তিনি মাওলানা ইলিয়াস র এর নেছাবের তথা তাবলীগের তরিকার ওপরে পুর্ন এতমিনান আনেন এবং মওদূদী রহ এর বর্ণিত, প্রচারিত ইক্বামাতে দ্বীনের এই ধারণাকে ইসলামের অতিমাত্রিক রাজনৈতিক ব্যখ্যা বলে দাবি করে কিতাবও রচনা করেন। তার দেখাদেখি আরো কয়েকজন মওদূদীর প্রচারিত রবুবিয়াত, উলুহিয়াত, আল্লাহর গোলামী এবং মানুষের প্রভূত্বের নতুন সংজ্ঞাকে সমালোচনা করতে শুরু করেন। এভাবে মাওলানা মওদূদীর নতুন ইসলামী আন্দোলণের ধারণাকে নতুন ফেরকা বলে মুল্যায়ন করা হয়েছিলো।

আফসোসের বিষয়ে হলো, মওদূদী বিরোধীরা মওদূদীর ইক্কামাতে দ্বীনের সংজ্ঞা, দর্শন, পজিশান বা স্কিমের ওপরে ঈমান আনার পাশাপাশি এসবের বিরুদ্ধে তাদের মুরব্বিদের লিখিত কিতাবের ওপরেও যথেস্ট ঈমান রাখেন এবং এই কারণেই মওদূদী বিরোধীতার অনল বুকে ধারণ করে রেখেছেন। আমি জানতে চাই, এরকম ডাবল স্ট্যান্ডার্ড কওমী অঙ্গন ছাড়া অন্য কোথাও দেখতে পান কিনা ? যদি তাই না হবে তাহলে ইক্বামাতে দ্বীন প্রশ্নে মওদূদী রহ কেন সার্বজনিন হতে পারেন না ? তাকে ইসলামী আন্দোলনের ইমাম মানতে না পারুন, প্রবক্তা না মানুন, ইক্বামাতে দ্বীনের প্রয়োজনী উপাদান হিসেবে মেনে নিতে কোন ইগো বাধা দিচ্ছে কী ?

একই আমলকে সুন্নাহ এবং বেদয়াত আখ্যায়িত করা মুরব্বিদের উভয় দল যদি কওমীদের মধ্যে সার্বজনিন আকাবার সাজতে পারেন, তাহলে ইক্বামাতে দ্বীনের আধুনিক সংজ্ঞার ক্ষেত্রে মওদূদী রহ কেন তাদের মুরব্বি হতে পারবে না ? কাদের খুশি করতে মওদূদী রহ কে বাদ দেওয়ার দাবি করা হচ্ছে ? আমার আপনার আমলে, ঢংয়ে মতপার্থক্য আছে, কিন্তু আল্লাহর সার্বভৌমত্ব, তার দ্বীনকে দুনিয়ার সকল মতবাদের ওপরে বিজয়ী করার ফরজিয়াত নিয়ে কোন মত পার্থক্য আছে কী ? তথাপীও কেন আমরা ফিকহী ইখতেলাফকেই প্রাধান্য দিচ্ছি ? কাকে খুশি করতে আমার ভাই ?

আপনার মওদূদী বিরোধীতা যদি দ্বীনের কল্যানে, আল্লাহকে খুশি করতে হয়, তাহলে দ্বীনের মাপকাঠিতে, আল্লাহর দেওয়া কিতাবের প্যারামিটারে মওদূদীকে পরিমাপ করুন, আপনার আকল এবং বিবেককে কাজে লাগান। মওদূদীও আমার কবরে যাবে না, কোন মুরব্বিও আপনার কবরে যাবে না। তাহলে তাদেরকেই কেন মাপকাঠি বানাচ্ছি। তাদের অন্ধ গোলামীর কারণে তারাও ক্ষুব্ধ হবেন, হাশরের মাঠে তারাই প্রথম প্রতিবাদ করবে। কারণ, তারা এগুলো সম্পর্কে বেখবর ছিলেন। অথচ আপনি ভাবছেন তারা খুব খুশি হবেন। পুরোই ভুল ধারণা করছেন। নিজেদের মধ্যকার অনৈক্যকে অনেকের শক্তির উৎস না বানিয়ে নিজেরাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে নিজেদের শক্তিমত্তার জানান দিন, অন্যের সমীহ আদায় করে নিন। এতটুকো করতে দল ভাঙ্গতেও হবে না, অন্যকে কোলেও নিতে হবে না।

লিখেছেন: অপু আহমেদ

পঠিত : ১৩৩০ বার

মন্তব্য: ০