Alapon

এটিএম আজহারঃ শাহদাতের পথে আরেকটি প্রাণ...


জামায়াত নেতাদের মধ্যে এ টি এম আজহার চাচাই অন্যতম নেতা যার আদর সোহাগ আমি বেশি পেয়েছি। উনি বাসায় আসতেন, খুনসুটি করতেন কাছে টানতেন, মজা করতেন। অনার্সে পড়াকালে একবার উনার অফিসে গিয়েছিলাম একটা কাজে। সেই দেখাটাই ছিল লাস্ট দেখা। তাও আবার দীর্ঘ একটা বিরতির পর আমাদের দেখা হয়েছিল। জামায়াত নেতাদের এই একটা কমন গুন, ছোটকালে চেনা কাউকে যুগকাল পরে প্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায় দেখলেও অনায়াসে চিনে ফেলতেন। আমার ক্ষেত্রেও তাই হল। আমি উনার শাদাতের দিন গুনতে কষ্ট পাচ্ছি... কিন্তু আল্লাহর পক্ষ থেকে দেয়া এইটাই আমাদের প্রাপ্য। রবের ধার্য্যকৃত পরিনাম হিসেবে আমরা এটা মাথা পেতেই নিলাম। কারণ, আমরা সকল সিচুয়েশনে তাঁর সিদ্ধান্তের উপরই নিজেদেরকে সমর্পন করি।

এটিএম আজহার চাচা এমন কেউ ছিলেন না যাকে বাঁচিয়ে রাখলে সরকারের খুব ক্ষতি হয়ে যেতো। জামায়াতের যা ক্ষতি হওয়ার তা অলরেডি হয়ে গেছে। ইনফ্যাক্ট যখন খালেদা জিয়ার মতো নেত্রী কে জেলে পঁচিয়ে মারা হচ্ছে এবং সেটা জনগনের জ্ঞাতার্থেই হচ্ছে, জনগণ এটাকে অনিবার্য ব্যাপার হিসেবে মেনে নিয়েছে- সে তুলনায় এটিএম আজহার চাচা তো নস্যি।! সুতরাং উনাকে ফাঁসি দেয়াটা এখন আর ইসলামের কিংবা জামায়াতের বিজয় বা পরাজয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট নেই। এদেশের মানুষের দিলে ঈমানের আলো যতদিন জ্বলবে ততদিন জামায়াত নিজেকে পরাজিত ভাবতে পারে না। ততদিন জামায়াতের কাজও থেমে যাবে না। এই ফাঁসির সাথে সরকারেরও জয় পরাজয় সম্পর্কিত কোনও বিষয় সম্পৃক্ত নেই। এটা করা না করার সাথে সরকারের লাভ-ক্ষতি হিসাব আর জড়িত আছে বলে মনে করি না। প্রাথমিক ফাঁসি গুলোতে যেটা খুবই প্রাসঙ্গিক ছিল- এটা এখন আর নেই।

জামায়াত-শিবির নিধন ও জামায়াত নেতৃবৃন্দের ফাঁসি কে জায়েজ করিয়ে নেয়ার মাধ্যমে সরকার-শাহবাগী জোট যে প্রভুত্বের অবস্থান অর্জন করেছে সেটাতে ইমান এনেছে দেশের অন্যান্য ইসলামী শক্তিও। এখন জামায়াত নেতাদের ফাঁসি, জামায়াত শিবির বলে মেরে ফেলা, নির্যাতন করা, জেলে দেয়া- এগুলো শ্রেফ চেতনাধর্মের ধর্মীয় রিচ্যুয়াল হয়ে গেছে। এটা এখন আর এর চেয়ে বেশি কিছু নয়। আমরা যেমন প্রতি কুরবানীর ঈদে কোরবানি দেই, সনাতন ধর্মে নর বলি দেয়, কেউ কেউ পাঠা বলি দেয়, ঠিক তেমনি চেতনা ধর্মের রিচ্যুয়াল হল জামায়াত-শিবির বলি দেয়া। এটা শ্রেফ একটা ধর্মীয় রিচ্যুয়াল (চেতনা ধর্মের), রাজনৈতিক ইগো (শেখ হাসিনার) এবং আদর্শিক শুদ্ধতাবাদ (সেক্যুলার-বাম-শাহবাগ ব্লকের)।

জামায়াত নেতাদের ফাঁসিতে কখনও ন্যায় বিচার ও সুবিচারের বিষয় জড়িত ছিল না। এটা শুরু থেকেই উচিৎ কি অনুচিতের বৃত্তে সীমাবদ্ধ ছিল। এক মতবাদের ক্ষেত্রে যেটা উচিৎ, আরেক মতবাদের ক্ষেত্রে সেটাই অনুচিত। উচিৎ ও অনুচিতের আরও কিছু ভিত্তি হল স্টেরিওটাইপ, প্রেজ্যুডিস ও পাবলিক পারসেপশন। জামায়াত নেতাদের ফাঁসি এগুলোর উপর ভিত্তি করেই সুসম্পন্ন হয়েছে, ভবিষ্যতেও হবে। যেমন ধরেন, নাস্তিকদের মেরে ফেলা উচিৎ- এমনটা যেমন প্রচুর সংখ্যক মানুষ মনে করে, তেমনি জামায়াত-শিবিরদের মেরে ফেলা উচিৎ এমনটাও প্রচুর সংখ্যক মানুষ মনে করে। দুইটারই ভিত্তি ফান্ডামেন্টালিজম ও চেতনা ভিত্তিক স্টেরিওটাইপ, প্রেজ্যুডিস ও পাবলিক পারসেপশন। এই যে ফাঁসির মতো একটা ক্যাপিটাল পানিশমেন্টকে ন্যায় বিচার ও সুবিচারের ভিত্তি থেকে আলাদা করে ফেলা এবং স্টেরিওটাইপ, প্রেজ্যুডিস ও পাবলিক পারসেপশনের সাথে জুড়ে দেয়া- এটাই ছিল মূলত যুদ্ধ। এই যুদ্ধে জামায়াত হেরে গেছে, শাহবাগীজম জিতে গেছে। এইটাই তো শাহবাগীজম ও চেতনা ধর্মের মৌলিক আদর্শ। এই মৌলিক আদর্শ থেইকা জামায়াত শিবির মারা, ফাঁসি দেয়া, দমন করা, ব্যান করা হল যাস্ট রিচ্যুয়াল। যেটা দ্বারা ধর্মটা জিন্দা থাকে।

লিখেছেন: জাবাল আত তারিক

পঠিত : ১২৪৩ বার

মন্তব্য: ০