Alapon

সহিংস ও অহিংস আন্দোলনের ব্যবচ্ছেদ...


হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির পলিটিকাল সায়েন্সের প্রফেসর এরিকা চেনোয়েথ ১৯০০ সাল থেকে ২০০৬ সালের মাঝে সংগঠিত ৩২৩ টি অহিংস আর সহিংস আন্দোলনের ডাটা রিসার্চ করে দুইটি মুল্যবান তথ্য দিয়েছেনঃ


১) অহিংস আন্দোলনের সফলতার হার সহিংস আন্দোলনের তুলনায় দ্বিগুণ।

২) অহিংস আন্দোলনের সফলতার টিপিং পয়েন্ট হচ্ছে মোট জনসংখ্যার ৩.৫%।


প্রফেসর চেনোয়েথ ডাটা হিসাব করে দেখেছেন যে যখনই কোন দেশের জনসংখ্যার #মিনিমাম ৩.৫% অহিংস আন্দোলনে অংশগ্রহন করেছে তখনই সেসব অহিংস আন্দোলন #সফল হয়েছে।


কিন্তু কোন আন্দোলনে বোমাবাজি, অপহরণ, অবকাঠামোগত ধ্বংস, আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়া ইত্যাদি জড়িত থাকে তখন সেসব আন্দোলনকে আর অহিংস বলে বিবেচনা করেননি প্রফেসর চেনোয়েথ।


আমার মতে সহিংস আন্দোলনের কয়েকটি বড় নেগেটিভ পয়েন্ট আছেঃ


১) আইন যে কোন অরাজকতার বিরুদ্ধে থাকায় সরকার শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার অজুহাতে যেকোনো সহিংস আন্দোলনের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা প্রয়োগ করতে পারে । এই কারনে শান্তিপূর্ণ অহিংস সরকার বিরোধী আন্দলনকে সহিংস দেখানর জন্য প্রায় দেখা যায় সরকারের এজেন্টরা ভুয়া আন্দোলনকারি হিসাবে আন্দোলনে ঢুকে গোলমাল করে তার একটা সহিংস রুপ দেখিয়ে আন্দোলনের ভরাডুবি করে।


২) সাধারন জনগন সহিংস আন্দোলনে অংশগ্রহন করতে ভয় পায়। ইন ফ্যাক্ট শুরু থেকে আন্দোলন সহিংস হলে, আন্দোলনকারিরা রাস্তায় ভাংচুর, আগুন সংযোজন, ইটপাটকেল ছোড়াছুড়ি করলে চান্সেস আর যে সাধারন জনগন আর সেই আন্দোলনে যোগ দিবে না।


৩) সরকারের ফায়ারিং পাওয়ার বা ওয়েপন্স সবসময় বেশি থাকায় সহিংস আন্দোলনকারীদের পক্ষে নিজ থেকে তা ম্যাচ করা সম্ভব নয়। সেইখেত্রে তাদের বহির্বিশ্বের সাপোর্ট জরুরী।


৪) সহিংস আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের শারীরিকভাবে সক্ষম হতে হবে।


৫) সহিংস আন্দোলনকারীদের সিক্রেটলি আন্ডারগ্রাউন্ড থেকে আন্দোলন চালাতে হবে যা সাধারন জনগন পর্যন্ত পৌঁছানো বেশ দুষ্কর।


আন্দোলন অহিংস হলে জনগন আন্দোলনে অংশগ্রহন করতে উদ্বুদ্ধ হয় আর অংশগ্রহন তাদের জন্য অপেক্ষাকৃত লেস রিস্কি। এসব ক্ষেত্রে আন্দোলন শুরুর জন্য জন্য কোন লিড রোলেরও অনেক ক্ষেত্রে প্রয়োজন পড়ে না। কিন্তু আন্দলনকে দীর্ঘ মেয়াদে সফল করে ধরে রাখতে আর তার রুপ রেখাকে অহিংস রাখতে একটা প্যানেল থাকা জরুরী।


এসব কারনেই সম্প্রতি লেবানন আর ইরাকের সাম্প্রতিক অহিংস আন্দোলন শুরু হয়েছে গানবাজনা দিয়ে। সাধারন জনগনকে রাস্তায় নামানোর জন্য তারা ডিজে পার্টি, দেশাত্মবোধক গান, আধ্যাত্মিক গান , গানের তালে তালে মার্চ , বিয়ে, ইত্যাদি আকর্ষণীয় পদ্ধতি অবলম্বন করেছে। আন্দোলনের স্থায়িত্ব এতে করে দীর্ঘতর হয়েছে। আন্দোলনকারীদের শারিরিভাবেও খুব একটা শক্ত সমর্থ হওয়ার প্রয়োজন হচ্ছে না। বুড়া থেকে শুরু করে কোলের শিশু নিয়ে জনগন আন্দোলনে শরিক হয়েছে।


হংকং এর আন্দোলনও শুরুতে অহিংস ছিল যা পরবর্তীতে সহিংস রুপ ধারন করে। যতদিন অহিংস ছিল চীন সরকার ততদিন ধৈর্য ধরে ছিল, আন্দোলনকারীদের উপর কোন বল প্রয়োগ করতে দ্বিধান্বিত ছিল, কারন তারা জানে বিশ্বের নজর হংকং এর দিকে। কিন্তু আন্দোলনকারীরা সহিংস হয়ে উঠলে পুলিশ বলপ্রয়োগ করে আন্দোলনকারীদের এরেস্ট করা শুরু করে। ইরানের গেলো সপ্তাহের আন্দোলন থেমে যাচ্ছে । আন্দোলনকারীরা প্রথম থেকেই সহিংস হওয়ায় আন্দোলন তেমন জমে উঠতে পারে নাই। আর স্বল্প আন্দোলনকারীদের নিরাপত্তা কর্মীরা সহজে রাস্তা থেকে উৎখাত করে দিচ্ছে। জনগন একবার সরকারকে বলপ্রয়োগ করতে দেখলে নিরুৎসাহিত হয়ে পড়ে।


প্রায় মাস দুয়েক ধরেই চলছে ইরাকের বাগদাদ আর পুরা লেবাননের অহিংস আন্দোলন, সিকিউরিটি ফোর্স সেখানে এখন পর্যন্ত তেমনভাবে হস্তক্ষেপ করে নাই । কিন্তু ইরাকের দক্ষিনে নাজাফ, কারবালা ইত্যাদি শহরে আন্দোলনকারীরা সহিংস হওয়ায় সেখানে সিকিউরিটি ফোর্স ৩০০ এর অধিক আন্দোলনকারীকে হত্যা করেছে।


সো উই আর সিইং এ প্যাটার্ন হিয়ার, যা থেকে অনেক কিছু বুঝার আছে। প্রফেসর চেনোয়েথের রিসার্চ ডাটা থেকে অনেক কিছু শিখার আছে। বিনা প্ল্যানে, চোখ বুঝে আন্দোলন বলে রাস্তায় ঝাপিয়ে পড়লে, কিছু বাস পুড়ালে, দোকানের জানালায় ঢিল ছুড়লেই সেসব আন্দোলন হাওয়া পেয়ে যাবে, দলে দলে সাধারন মানুষ আন্দোলন সমর্থন করে রাস্তায় নেমে পরবে তা ভাবার কোন কারন নাই।

উপরের সব পয়েন্ট আমার এনালিসিসের উপর ভিত্তি করে।


আন্দোলনের সফলতা নির্ভর করে অনেক ফ্যাক্টরের উপর। আর যে কোন আন্দোলন অত্যন্ত ডাইনামিক একটা প্রসেস, যেখানে অনেক ভেরিয়েবল জড়িত। এই সব কিছু হিসাবনিকাশ করে, আন্দোলনের রূপরেখা ভালো করে বুঝে, প্রধান শহরগুলোতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চোখের সামনে অহিংস রুপে, মিনিমাম ৩.৫% জনগনকে রাস্তায় নামাতে পারলে প্রফেসর চেনোয়েথরের রিসার্চ অনুযায়ী আন্দোলন সফল হবে।


নোটঃ Thanks to Tim Clancy for bringing professor Chenowath's research on this 3.5% rule to my attention.

লিখেছেন: সাবিনা আহমেদ

পঠিত : ৫৭৩ বার

মন্তব্য: ০