Alapon

মৃত ব্যক্তির জন্য কতোটুকু কান্না করা যায়?

আমাদের সমাজে কেউ মারা গেলে এক শ্রেণীর মানুষ একটি বিষয় খেয়াল করে। তাহল মৃত ব্যক্তির আত্নিয়রা কেমন কান্নাকাটি করল। আত্নিয় স্বজনরা যদি কম কান্নাকাটি করে তবে মানুষ ধারণা করে নেয়, মৃত ব্যক্তির জন্য পরিবারের সদস্যদের মধ্যে কোন টান নেই। কিংবা তার প্রতি কেউ ভালোবাসা অনুভব করছে না। আর যদি পরিবার পরিজন খুব বেশি কান্নাকাটি করে আর সেই পরিবারটি যদি আবার একটু ধার্মিক পরিবার হয় তবে কেল্লা ফতে। লোকজন তখন বলাবলি করে, আপনারা কেমন আহাম্মক মানুষ। আপনাদের এই কান্নাকাটির জন্য মৃত ব্যক্তির আজাব হবে। আপনারা আত্নিয়স্বজনরাই কিনা তার আজাব বৃদ্ধির কারণ হয়ে যাচ্ছেন। তখন একটি হাদীস উল্লেখ করে নিজেদের বক্তব্যকে আরো পাকাপোক্ত করতে প্রান্তকর চেষ্টা করে যায়। রসূল (সাঃ) বলেছেন, “নিশ্চয়ই মৃত ব্যক্তিকে তার পরিবার পরিজন কান্নার কারণে শাস্তি দেওয়া হবে।” (বুখারী - ১২২৬)


কিন্তু এই হাদীসটির প্রেক্ষাপটটি আমরা অধিকাংশরাই জানি না। আর না জানার কারণেই উপরেল্লেখিত মতামতগুলো আমাদের সমাজের মানুষের মাঝে স্থায়ীত্ব লাভ করছে। পূর্বেকার যুগের মানুষরা মৃত্যুর পূর্বে তাদের পরিবার পরিজনকে কান্নার বিষয়ে অসিয়ত করে যেত। তারা এই অসিয়ত করত যাতে মানুষ বুঝতে পারে জীবদ্দশায় সে পরিবারের কাছে মহব্বতের এবং প্রিয় পাত্র ছিলেন। তাদের অসিয়ত ‍গুলো কিরূপ ছিল তার মধ্যে দু’টি আপনাদের সামনে উপস্থাপন করছি।


    “হে মা’বাদের মেয়ে


     যখন আমি মৃত্যুবরণ করবো 


    আমি যতোটুকু উপযুক্ত ততোটুকু কান্না করবে 


    আর আমার জন্য নিজের পকেট ছিড়ে ফেলবে।” (সূত্র-মেশকাত)


দ্বিতীয়টি,


    “যখন আমি মৃত্যুবরণ করবো


     তখন তুমি দুই কারণে কাঁদবে


     তোমাকে মিথ্যাবাদী বলা হবে না


     তোমাকে যে মিথ্যাবাদী বলবে 


     সে কতই নিকৃষ্ট কান্নাকারী”। ( সূত্র- মুতাকাদ্দিমীনদের কবিতা থেকে সংগৃহিত)


উপরোক্ত ব্যক্তিদের উদ্দেশ্য করে রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “ঐ ব্যক্তি যারা শোকের কারণে গন্ডদেশে আঘাত করে কাপড়-চোপড় ছিড়ে ফেলে এবং জাহিলিয়্যাতের যুগের মতো অনুপযুক্ত কথাবার্তা বলে আখ্যায়িত করে তারা আমাদের অন্তভুক্ত নয়।” (বুখারাী- ১২৩২)


হুজুরে পাক রাসূল (সাঃ) আরো বলেছেন, “বিলাপকারীনী যদি তার মৃত্যুর পূর্বে তওবা না করে, তাহলে তাকে কিয়ামত দিবসে এমন অবস্থায় উঠানো হবে যে, তার উপর আলকাতরাযুক্ত ও মরিচাযুক্ত পোশাক থাকবে।” (মুসলিম- ৯৩৪)


এরপর নাবী করীম (সাঃ) এরশাদ করেন, “আল্লাহ বলেছেন, আমার মুমিন বান্দা যদি তার দুনিয়ার অন্তরঙ্গ বন্ধুর মৃত্যুতে সওয়াবের আশা রাখে তাহলে তার জন্য আমার নিকট জান্নাতই একমাত্র প্রতিদান।” (বুখারী-৬০৬০)

পঠিত : ১০১০ বার

মন্তব্য: ০