Alapon

সুফিবাদ ইসলামের যে ক্ষতি করেছে...


আব্বাসি যুগের অতি বিলাসিতা আর খলিফাদের অন্দরমহলে নৃত্যকারদের নৃত্য ও সংগীতের অভিশাপে যে রঙিন দুনিয়ার ছোঁয়া মুসলিম সমাজে লাগছিলো, এর প্রভাব থেকে মুসলমানদের রক্ষা করতে সুফিবাদের জন্ম হয়৷ সুফিবাদের জন্ম যেহেতু এই প্রেক্ষিতে হয়েছিলো, তাই তাদের আধ্যাত্মিক চর্চায় যে বিধর্মীয় ধারার সূচনা হয়েছিলো, সেটা নিয়ে আমার আজকের আলোচনা না৷ আজ আমি তাদের আসল উদ্দেশ্য নিয়ে কিছুকথা বলবো।

বস্তুত সুফিরা চাচ্ছিলেন দুনিয়ার ছোঁয়া মুসলমিদের গায়ে না লাগুক৷ সুফিবাদে আছে রুহের তাযকিয়া, বস্তুবাদী দুনিয়া থেকে দূরে থাকার শিক্ষা, আখেরাতের স্মরণ৷ যেগুলোর সবই ইসলামে আছে৷ কিন্তু তারপরও কিছু নেতিবাচক দিক ছিলো যার কারণে সুফিবাদ নিজেই ইসলামের সহিহ মানহাজ থেকে সরে পড়েছে৷

সুফিবাদ মূলত বাস্তব সমাজ থেকে পলায়নের একটি আন্দোলন মাত্র৷ বাস্তব সমাজ সম্পর্কে উদাস থেকে তারা এক অজানা দুনিয়ায় ডুবে যায়৷ সেখানে তারা মনের আনন্দ পেয়ে থাকে৷ সেখানেই তারা আল্লাহ ﷻ-র নৈকট্যের স্বাদ পেয়ে থাকে বাস্তবে বা ধারণায়৷ এই অদৃশ্য জগতে বিচরণ তাদের বাস্তবিক সমাজ সম্পর্কে উদাস করে রাখে৷ ইসলাম একজন মুসলিমকে সমাজ সংস্করণের যেই দায়িত্ব অর্পণ করেছে, সুফিবাদ সেই দায়িত্ব এড়িয়ে যায়৷ কারণ সুফিবাদের উদ্দেশ্যই হলো অদৃশ্য জগতের স্বাদ অাস্বাদন করানো৷ এর বাইরে আর কোনো দায়িত্বই সুফিদের উপর বর্তায় না৷ তাই সমাজ সংস্করণের মতো কঠিন বোঝা তারা উঠাতে রাজি হয় না৷ বা বলা চলে এটা তাদের মাকসাদও নয়৷

সুফিবাদে আছে বাস্তবতা বিবর্জিত কিছু অনুভূতি, যা সর্বদা তাদের পাগল করে রাখে৷ কখনো তারা প্রকৃতস্থ হতে চায়না৷ আধ্যাত্মিক, মানসিক, শারীরিক চর্চা তাদের এমন এক অদৃশ্য জগতে নিয়ে যায়, যা অসীম৷ কিন্তু ইসলাম না তাদের এই দায়িত্ব দিয়েছে৷ আর না ইসলামের মৌলিক কাজের সংগে এর কোনো সম্পর্ক আছে৷

ইসলাম এসেছে বাস্তবিক সমাজে ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য৷ এই উম্মাহ যেমন এই জগতে ন্যায়ের ধারক, তেমনি পরজগতেও তারা অন্যান্য উম্মাহর কাজের সাক্ষী হবে৷ তাদেরকে সমাজ সংস্করণের এক মহান দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, যা অদৃশ্য জগতের বিচরণের পদ্ধতিতে কখনোই পুরো হবার নয়৷ ইসলাম "সৎকাজের আদেশ এবং অসৎ কাজের নিষেধ" এই নির্দিষ্ট এক মানহাজ বেঁধে দিয়েছে৷ যা মূলত পৃথিবীতে ইসলাম এবং মুসলিম উম্মাহর মৌলিক কর্মের জানান দেয়৷ এই মানহাজের পুরোপুরি সম্পর্কই বাস্তবতার সংগে৷ অদৃশ্য জগতের সংগে তার বিন্দুমাত্র সম্পর্ক নেই৷ এখানে এসেই ইসালম আর সুফিবাদের পার্থক্যটা নজরে পড়ে৷ সুফিবাদ হলো— নেতিবাচক বিচ্ছিন্নতা৷ আর ইসলাম হলো— ইতিবাচক সম্মুখবর্তিতা৷

ইসলামে দুনিয়ার উপভোগ্য বস্তু ব্যবহার করে নিজেদের উন্নত হতে অনুমতি দিয়েছে৷ সুফিবাদেও তা আছে৷ যদিও একেবারেই প্রয়োজন অনুপাতে৷ তবে পার্থক্যটা দেখা দেয় এই উন্নত সামাজিক শক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে৷ ইসলাম বলে এই শক্তি কাজে লাগাতে হবে খেলাফত প্রতিষ্ঠা, খোদায়ী মানহাজে সভ্যতা বিনির্মাণে জিহাদের পথে এবং সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধের প্রজেক্টে৷ সুফিবাদ বলে অদৃশ্য জগতের অনুভূতি অর্জনের জন্যই এই শক্তি৷

একদিকে ইসলাম বাস্তব সমাজের সংস্কার করে, যা ব্যক্তি ও সমাজ দুনো পরিমন্ডলে ব্যাপ্ত৷ ইসলাম পথ দেখায় মানবজাতিকে অনুভূতির ছোট জগত থেকে বের হয়ে এক মহা বাস্তবিক জগতের দিকে আসতে৷ যেখানে তাদের শারীরিক, আধ্যাত্মিক, বুদ্ধিবৃত্তিক সব রকমের চর্চাই হবে৷ এই তিন শক্তির সমন্বয়ে প্রতিষ্ঠিত হবে আল্লাহ ﷻ-র জমিনে আল্লাহর খেলাফত৷ পৃথিবীকে সাজানো হবে আল্লাহ ﷻ-র সঠিক মানহাজে৷

অপরদিকে সুফিবাদ মানুষকে এই মহা জাগতিক পরিসর থেকে টেনে এনে এক অবাস্তব অনুভূতির জগতে প্রবেশ করিয়ে দেয়৷ বাস্তবতার সংগে যার কোনো সম্পর্ক নেই৷ ব্যক্তিগত শুদ্ধির দীর্ঘ এক ছক তাদের অব্যাহত দিয়ে থাকে অশুদ্ধ সমাজের শুদ্ধিকরণের দায় থেকে৷ খেলাফত প্রতিষ্ঠা, পৃথিবীতে ন্যায় প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম। আর জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহির মতো দায়িত্বের কথা নাই-বা বললাম৷

একজন মানুষ যতই চেষ্টা করুক কখনোই ফেরেশতাদের মতো নিরলস ইবাদত করতে পারবেনা৷ আল্লাহ ﷻ মানবজাতিকে এই উদ্দেশ্যে সৃষ্টিও করেননি৷ তাদের সৃষ্টি করেছেন পৃথিবীতে আল্লাহ ﷻ-র খেলাফত বাস্তবায়নের মতো এক মহান উদ্দেশ্যের জন্য৷ যেখানে একজন মানুষের রুহ, শরীর, বুদ্ধি সবগুলি উপাদানই একসংগে কাজ করবে৷ তখন তার বুদ্ধির কার্যকলাপই হবে ইবাদাত৷ তার রুহের কার্যকলাপই হবে ইবাদত৷ তার শরীরের কার্যকলাপই হবে ইবাদত৷ এই অর্থেই তো বলা হয়ছে "আপনি বলুন, আমার নামাজ, আমার হজ্জ, আমার মৃত্যু বরং আমার জীবনই মহা জগতের রবের জন্য"৷

আল্লাহর রসুল ﷺ -র চাইতে বেশি ইবাদত আর কে করতে পারবে? কিন্তু তিনি কখনো নফল পড়েছেন৷ আবার কখনো আরাম করেছেন৷ কখনো নফল রোযা রেখেছেন৷ কখনো আবার রোযা থেকে বিরত থেকেছেন৷ তিনি সারাদিন নিজস্ব ইবাদাতে পার করেননি৷ দাওয়াত-তাবলিগ, সাহাবাদের তরবিয়ত, জিহাদ, সিয়াসাত, বিবাহ, ইবাদাত সব ক্ষেত্রেই আল্লাহ ﷻ-র রসুল ﷺ এর সমান কীর্তি ছিলো৷ তিনি অজানা ও অধরা আধ্যাত্মিকতার চর্চার নামে বাস্তবতা থেকে দূরে সরে যাননি। বরং কেউ এর চর্চা করতে গেলে বলেছেন, "জেনে রেখো! আমি আল্লাহ ﷻ-র সর্বাধিক ইবাদতকারী৷ কিন্তু আমি নফল রোযা রাখি আবার ছাড়ি৷ নফল নামাজ পড়ি আবার ছাড়ি৷ তোমরা বিবাহ করো৷ যে আমার সুন্নাহ থেকে মুখে ফিরিয়ে নিবে সে আমার উম্মাহর কেউ নয়"৷

এটাই ভারসাম্যতা৷ এটাই মধ্যপন্থা৷ সুফিবাদে এই মধ্যপন্থার চর্চা হয়না৷ তারা দুনিয়া ছেড়ে সম্পূর্ণই আখেরাতে নিমগ্ন হয়ে থাকে৷ বাস্তবতা ছেড়ে অধরা এক অনুভূতির সাগরে হাবুডুবু খেতে থাকে৷

জেনে রাখা ভালো দুনিয়া-আখেরাত মিলেই ইসলাম৷ ব্যক্তি-সমাজ মিলেই ইসলাম৷ রুহ-শরীর মিলেই ইসলাম৷ দুনিয়া ছেড়ে আখেরাত ধরলে, সমাজ ছেড়ে ব্যক্তি ধরলে, শরীর ছেড়ে রুহ ধরলে কখনোই ইসালমের মহান উদ্দেশ্য পূরণ হবে না৷ সুফিবাদ ইসলামের এই ক্ষতিটাই করেছে এবং করে চলেছে।

সংগৃহিত...

পঠিত : ৮৩২ বার

মন্তব্য: ১

২০১৯-১২-১৩ ১০:৫৫

User
rabiul islam

kjhlkj;lklkl

submit