Alapon

ইসলামকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করার সুবিধা...


মানবরচিত মতবাদের সাথে মিলিয়ে যদি তুলনা করা যায় তাহলে বলতে হয়, ইসলামিক প্রক্রিয়ার দুটো গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা আছে। প্রথমত, ইসলামে আত্মপর্যালোচনা এবং নিজস্ব তত্ত্বাবধানের সুযোগ থাকায় জটিল ও দুর্বোধ্য আইনি প্রক্রিয়া প্রয়োগের প্রয়োজনীয়তা বা জোর করে মানুষকে দিয়ে কোনো কিছু মান্য করানোর প্রয়োজনীয়তা একেবারেই থাকে না অথবা অনেকটুকুই কমে যায়।

দ্বিতীয়তঃ এর মাধ্যমে সমাজের প্রতিটি সদস্য স্বতঃস্ফূর্তভাবে ব্যক্তিগত ও সামাজিক উন্নয়নের কাজে অংশ নিতে উৎসাহ পায়। ফলে, সামাজিক সম্পদগুলোকে বিশেষ করে মানুষ এবং বস্তুগত অন্যন্য সম্পদগুলোকে উন্নয়মূলক কর্মকান্ডে পুরোপুরিভাবে কাজে লাগানো সম্ভব হয়।

মানবসৃষ্ট নানা মতবাদে সৃষ্ট ভারসাম্যহীনতা, বঞ্চনা ও দারিদ্রতার সুযোগে সমাজেও উত্তেজনা দেখা দেয়। তার অনেকটুকুই ইসলামী পদ্ধতিতে বিলীন হয়ে যায়। অন্যন্য মতবাদে সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার জন্য যে পরিমাণ সম্পদ অলসভাবে পড়ে থাকে বা ক্ষমতার অপব্যবহার করার প্রয়োজন পড়ে ইসলামিক পদ্ধতিতে তার কোনো অবকাশ থাকে না। একই সঙ্গে, মানুষের আধ্যাত্মিক জাগরণ ঘটায় ন্যায় বিচারের পথ রুদ্ধ হয় না। বরং সম্পদকে পুরোপুরিভাবে মানুষের উন্নয়নে কাজে লাগানো সম্ভব হয়।

সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র কাঠামোতে অর্থনৈতিক উন্নয়নকে রাষ্ট্রের জিম্মায় দিয়ে দেয়া হয় আর পুঁজিবাদি কাঠামোতে একটি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মহলের হাতেই অধিকাংশ সম্পদকে ছেড়ে দিয়ে অর্থনৈতিক উন্নয়ন হওয়ার দাবি করা হয়।

আর পুঁজিবাদী পদ্ধতিতে দ্রুততম সময়ে অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং প্রযুক্তিগত অগ্রগতি নিশ্চিত করা যায়। তবে এর জন্য বিপুল সংখ্যক মানুষকে চড়া মাশুলও গুনতে হয়। বিশেষ করে, দারিদ্রতা, ক্ষুধা ও অপুষ্টি, আবাসন সংকট, স্বাস্থ্যসেবা এবং শিক্ষার অভাবকে পুঁজিবাদি সমাজে প্রকটভাবে লক্ষ্য করা যায়। পাশাপাশি, পুঁজিবাদি কাঠামোতে অর্থনৈতিক বৈষম্য প্রবল মাত্রায় থাকায় সমাজে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে এবং আইনের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধা কমে যায়। ফলে অসংখ্য মানুষকে বলপ্রয়োগ করে শাস্তি দেয়ার প্রয়োজন দেখা দেয়।

সেই সাথে প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে কার্যকর রাখতেও বিপুল পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন হয়। ফলে ধীরে ধীরে এই পদ্ধতিটি অকার্যকর হতে শুরু করে। ফলে সভ্যতার বিকাশে সমাজতন্ত্র বা পুঁজিবাদি অর্থনীতি যে অবদানগুলো রাখতে পেরেছিল তা বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতিও সমাজে নানা ধরনের বৈষম্য ও অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করে। সোভিয়েত ইউনিয়ন যেভাবে বিভক্ত হয়ে গেল তার মাধ্যমেও সমাজতান্ত্রিক মতবাদের অন্তর্নিহিত অস্থিতিশীলতা প্রমাণিত হয়।

অর্থনৈতিক উন্নয়ন সংক্রান্ত ইসলামী নীতিমালার আওতায় ব্যক্তিবিশেষের উন্নয়নের পাশাপাশি সামাজিক সম্পদের বিকাশকেও নিশ্চিত করা হয়। এর মাধ্যমে প্রমাণিত হয় যে, সমাজের প্রতিটি সদস্যই সম্পদ বিনির্মাণে ভূমিকা রাখতে সক্ষম এবং তাদের অবদানের উপর ভিত্তি করে সমাজে ভারসাম্যপূর্ণ অগ্রগতি নিশ্চিত হয়। ফলে, ইসলামী অর্থনৈতিক নীতিমালা বরাবরই একটি ভারসাম্যপূর্ণ পদ্ধতি হিসেবে স্বীকৃত হয়। এই পদ্ধতির অনুসরণ করার মাধ্যমে অর্থনৈতিক অগ্রগতি এবং প্রযুক্তিগত উন্নয়ন টেকসই হয়। তাই সভ্যতা বিনির্মাণে, ইসলামি অর্থনীতি যে অবদান রাখে তা অন্য যেকোন সভ্যতার তুলনায় অনেক বেশি কার্যকরভাবেই টিকে থাকে।

ইসলামিক নীতিমালায় ব্যক্তির স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়ন অর্জিত হওয়ায় এক্ষেত্রে প্রত্যেকেই মানসিকভাবে সন্তুষ্ট থাকে। সেই সাথে উন্নয়নের ভিত্তি মূল ভারসাম্যপূর্ণ ও ন্যায়নিষ্ঠ হওয়ার কারণে সভ্যতার অগ্রগতিতে স্থিতিশীল অবদান রাখাও সম্ভব হয়। ফলে বহিঃশত্রূর আক্রমণ না হলে সচরাচর এই অবদানগুলো বিনষ্ট হওয়ার কোন সুযোগও নেই। এ কারণেই দেখা যায়, ক্রূসেডার কিংবা মঙ্গলীয়দের আক্রমনের কারণেই সভ্যতার উন্নয়নে মুসলমানদের অবদানগুলো বিনষ্ট হয়, অন্য কোনো কারণে নয়।

লিখেছেন: আলী আহমাদ মাবরুর

পঠিত : ৪৬৫ বার

মন্তব্য: ০