Alapon

অপবিত্র ও পবিত্র সমান নয়, যদিও অপবিত্রের প্রাচুর্য মানুষকে বিস্মিত করে।


"বলে দিনঃ অপবিত্র ও পবিত্র সমান নয়, যদিও অপবিত্রের প্রাচুর্য তোমাকে বিস্মিত করে। অতএব, হে বুদ্ধিমানগণ, আল্লাহকে ভয় কর-যাতে তোমরা সাফল্য লাভ করতে পার।" (সূরা মায়িদাঃ ১০০)

আসসালামু আলাইকুম। এটি হচ্ছে সূরা মায়িদার ১০০ নাম্বার আয়াত। আলহামদুলিল্লাহ, এই আয়াতে আল্লাহ তার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বলতে নির্দেশ দিচ্ছেন যে - মন্দ এবং ভালো এক সমান নয়। প্রথমেই যেটা আমাদের বুঝতে হবে তা হলো আল্লাহ শুধু এইটুকুই বলেন নি যে, নোংরামি এবং ভালো এক জিনিস নয়, বরং তিনি তার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে এই ঘোষণা দিতে আদেশ করেন। কারণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হলেন আল্লাহর নির্বাচিত প্রতিনিধি - যিনি কোনটা ভালো কোনটা খারাপ, কোনটা গ্রহণযোগ্য, কোনটা অগ্রহণযোগ্য এই বিষয়গুলো নির্ধারণ করে দিবেন। এ ক্ষেত্রে রাসূল (স )-ই হলেন মানদন্ড স্বরূপ।

এই ধরনের আলোচনায় আমরা প্রায় বলি যে, সিদ্ধান্ত নিবে সমাজ। সমাজই সিদ্ধান্ত নিবে কোনটা স্বাভাবিক, কোনটা অস্বাভাবিক, কিংবা কোনটা অশ্লীল আর কোনটা শ্লীল অথবা কোনটা গ্রহণযোগ্য কোনটা বর্জনীয়। কিন্তু এই সকল সীমা প্রতিনিয়তই পরিবর্তিত হচ্ছে। তাই নয় কি? তাই দেখা যায় কয়েক বছর আগেও যা ছিল অগ্রহণযোগ্য তাই সবার কাছে গ্রহনযোগ্য হয়ে উঠে। যেমন, বিনোদন জগতে আগে যে মুভিটাকে 'R' রেটিং করা হতো পরে তা 'PG13' হয়েছে, তারপর 'PG' হয়েছে আর এখন এটা সম্পূর্ণ স্বাভাবিক। যা কিনা পঞ্চাশ বছর আগেও ছিল সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য। অর্থাৎ মানদন্ড পরিবর্তনশীল। সুতরাং কতদূর পর্যন্ত আপনি পরিবর্তন করবেন? কোথায় আপনি সীমা নির্ধারণ করবেন? রাসূল (স) -ই হলেন সীমা নির্ধারণ করার ব্যাপারে আল্লাহর নিকট থেকে ক্ষমতাপ্রাপ্ত। তার আগমনের এটি অন্যতম উদ্দেশ্য।

"তাদেরকে বলুন - ভালো ও মন্দ কখনো সমান নয়, যদিও মন্দের প্রাচুর্য তোমাকে বিস্মিত করে।" এই কথাটির প্রতি লক্ষ্য করুন, "যদিও মন্দের বিপুলতা আপনাকে অভিভূত করে ফেলে।" এমনকি যদি এটা আপনার চোখ ধাঁধিয়ে দেয়। এর অর্থ হলো - খারাপ জিনিস হবে অগনিত এবং সর্বত্র ছড়িয়ে থাকবে, আর আপনি হয়তো আমাকে বলবেন "সবাইতো এটা করছে, সবাইতো এভাবেই কথা বলে। আপনি আবার কী বলতে চাচ্ছেন? স্বাভাবিক দৃষ্টিতে দেখুন, এরকম অদ্ভুত কেন আপনি?"

অদ্ভুত হলো তাই যা দুষ্প্রাপ্য, যা বিস্ময়কর, অগ্রহণযোগ্য এবং বিরল। আর যা সাধারণ্যে স্বীকৃত তাকে আমরা বলে স্বাভাবিক। তাই আল্লাহ বলেন নোংরামি বা মন্দ কাজটিই একসময় সবার কাছে গ্রহনযোগ্য হবে। কিন্তু এটা যত গ্রহণযোগ্যই হোক বা সমাজে যত স্বাভাবিক হোক, আপনাকে ভুললে চলবে না যে মন্দ আর ভালো কখনই এক নয়।

যা ভুল আপনার সব বন্ধুরা করতে থাকলেও তা ভুলই হবে। এমনকি যদি আপনার চারপাশে এই ভুল কাজটিই ঘটতে দেখেন, এটি কখনো সঠিক হয়ে যাবে না।(অলাও আ'জাবাকা কাস্রাতুল খাবিস - যদিও খবিসের প্রাচুর্য তোমাকে বিস্মিত করে।)

এখন কারা নোংরামি এবং বিশুদ্ধতার মাঝে পার্থক্য করতে পারবে? (ফাত্তাকুল্লাহ - আল্লাহকে ভয় কর) আল্লাহর ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বন কর। (ইয়া উলিল আল বাব) যারা নেক হৃদয় ও স্বচ্ছ চিন্তার অধিকারী। এমন মানুষ যাদের চিন্তা শক্তি সংস্কৃতির দ্বারা দূষিত হয়নি, যাদের হৃদয় অন্ধ মানসিকতার হৃদয়গ্রাহী কিন্তু অন্তঃসারশুন্য মতবাদের আক্রমনে পরাভূত হয়নি। সবাই যেহেতু এটা করছে তাহলে নিশ্চয়ই এটা ঠিক - আপনার চিন্তার ধরন এমন হতে পারে না।

এমন মানুষ আছে যারা নির্দিষ্ট কিছু অনুষ্ঠান পালন করে অথচ জানে না কেন তা পালন করে। তাদের কাছে এ সংক্রান্ত কোনো ক্লু নেই। এমন কিছু ছুটির দিন আছে যা উদযাপন করতে মানুষ অধীর থাকে অথচ কেন তা উদযাপন করতে হবে, তা তাদের জানা নেই। অধিকাংশ সময় অন্যান্য মানুষকে করতে দেখেন বলে তারাও এটা করেন। বোকার মত আচরণ করবেন না। আপনাদের স্বচ্ছ, মুক্ত ও গভীর চিন্তার অধিকারী হতে হবে। (ইয়া উলিল আলবাব লা'আল্লাকুম তুফলিহুন ) ‘’হে বুদ্ধিমানগণ, যাতে তোমরা সাফল্যের ভাগীদার হও।" আপনি সবাইকে একটা কাজ করতে দেখেন আর ভাবেন নিশ্চয়ই এটা সাফল্য লাভের উপায়। কিন্তু আল্লাহ বলেন - না যত লোকই সে কাজ করুক না কেন কিংবা এ কাজের দ্বারা সাফল্য লাভ করছে বলে যতই আপনার মনে হোক না কেন, আপনার জন্য মঙ্গলজনক হলো - আপনি আল্লাহর ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বন করবেন, চিন্তা শক্তিকে কাজে লাগান এবং ভালো কাজের সংগে যুক্ত থাকুন। যদি সত্যিকারের সাফল্য লাভ করতে চান।

এই আয়াতের শেষ যে শব্দটির প্রতি আমি আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই তা হলো - ইফ্লাহ, আল্লাহ বলেন নি "লাআল্লাকুম তাফুজুন" যাতে আপনি সফল হন, আরবিতে সাফল্য বোঝাতে অন্য একটি ক্রিয়াপদ রয়েছে। হ্যাঁ, তিনি বলেছেন 'তুফ্লিহুন।' আর এর মূল শব্দ ইফ্লাহ, আর ইফ্লাহ শব্দটি সেই সাফল্য বুঝাতে ব্যবহৃত হয় - যেমন আপনি একটি খামার তৈরী করছেন, তাতে বীজ বুনলেন, মাটি নরম করলেন এবং পোকার সংক্রমণ ও আগাছা রোধে ব্যবস্থা নিলেন, সারা বছর জমিতে কঠোর পরিশ্রম করলেন, পরিশেষে সাফল্য পেলেন। 'তুফলিহুন' মানে হলো যখন আপনি কোনো কাজের পেছনে প্রচুর শ্রম দেন। অর্থাৎ আল্লাহ ইঙ্গিত করছেন যে - নোংরামির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা এবং এমন এক দুনিয়ায় পবিত্রতার সন্ধান করা যা অপবিত্রতা দ্বারা বেষ্টিত, পবিত্রতার দৃষ্টান্ত যেখানে দুষ্প্রাপ্য, সেখানে পবিত্রতার উপর টিকে থাকতে হলে আপনাকে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। এই সাফল্যের জন্য মূল্য দিতে হবে। এটা এমনিতেই ঘটবে না।

এর জন্য প্রচুর শ্রম দিতে হবে, ভালো বন্ধু খুঁজে বের করতে হবে, ভালো বিনোদন, ভালো বই পড়তে হবে, সঠিক উপার্জনের উৎস খুঁজে পেতে হবে, এমনকি ভালো ও খাটি খাদ্যেরও ব্যবস্থা করতে হবে যা আসলে অনেক শ্রম সাধ্য ব্যাপার। আপনার পক্ষে এসব করা অনেক অনেক পরিশ্রমের ব্যাপার কিন্তু শেষ পর্যন্ত আপনি বুঝবেন যে এ কাজ পরিশ্রমেরই যোগ্য ছিল।
এতসব কিছু করেছেন কারণ আপনি আল্লাহকে ভয় করেন, সাফল্য অর্জন করতে চেয়েছেন। আপনি কখনই আপনার চিন্তাশক্তিকে বিশৃঙ্খল হতে দেন নি, আপনি "উলিল আলবাব-বুদ্ধিমানদের" অন্তর্ভুক্ত ছিলেন, স্পষ্ট ও সঠিক চিন্তার অধিকারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। বারাকাল্লাহু লি ওলাকুম।

- উস্তাদ নোমান আলী খান।

পঠিত : ১৩৫৭ বার

মন্তব্য: ০