Alapon

ভাষা সৃষ্টি ও পরিবর্তনে নোয়াখালীর উপমা : পাটোয়ারী থেকে হ্যাডারি...


নোয়াখালীতে 'পাটোয়ারী' কে 'হ্যাডারি' বলে! পাটোয়ারী ব্রিটিশ আমলে সৃষ্ট একটি উপাধি। যারা সরকারের আস্তা ভাজন, খাজনা তুলতে সহযোগিতা কিংবা জমি-জমা ক্রয়-বিক্রয়ে সহযোগিতা করে জীবিকা নির্বাহ করত। উপাধিতে ব্যবহৃত শব্দগুলো দীর্ঘ বছরেও প্রায় সঠিক থাকে কিন্তু নোয়াখালীতে পাটোয়ারীকে হ্যাডারি হয়ে যেতে হয়! শুনতে হাস্য-পদ মনে হলেও এর ভিতরে চলতে থাকে এক ভিন্ন ম্যাকানিজম। তাই এই শব্দটিকে বাছাই করা হয়েছে বিশ্লেষণের জন্য। আমাদের সাথে থাকবেন জনাব তড়িৎকর্মা পাটোয়ারী।

তড়িৎকর্মা পাটোয়ারী (নোয়াখালীর উচ্চারণ রীতি 'প' এর স্থানে 'হ' এর প্রভাব হেতু পরিবর্তিত হয়ে)
তড়িৎকর্মা হাটোয়ারী (উৎসস্থল একই স্থানে হওয়ায় 'হ' এর পরে 'ট' এর উচ্চারণ অস্বস্তিকর। তাই 'ট' এর সৎ ভাই 'ড' এখানে উপস্থিত হয়, ফলে উচ্চারণ দাঁড়ায়)
তড়িৎকর্মা হাডোয়ারী (প্রতি বর্ণেই স্বরবর্ণের টান থাকায়, দ্রুত উচ্চারণে বিপত্তি ঘটে। হয় স্বরবর্ণের উচ্চারণে কাটতি কিংবা বর্ণের ঘাটতি ঘটাতে হবে। এই শব্দের উচ্চারণে দুর্বল অবস্থানে আছে 'য়' তথা 'য়া'। ফলে এটিই অনুচ্চ থাকবে কিংবা ছাটাই হবে, সবশেষে দাঁড়াল)
তড়িৎকর্মা হাডোরী, অথবা
তড়িৎকর্মা হাডারি, তার চেয়েও সুন্দর
তড়িৎকর্মা হ্যাডারি...

এভাবেই পাটোয়ারী শব্দটি হ্যাডারি'তে পরিবর্তন হয়ে গেল। মূলত ভাষা বদলে যায় উচ্চারণের তারতম্যের কারণে। আর উচ্চারণের তারতম্য সৃষ্টি হয় মানুষের জিহ্বার গঠন বৈশিষ্ট্যের ফলে।

মানুষের জিহ্বা, তার গঠন, আকার ও উচ্চারণ রীতি সৃষ্টি করেছেন আল্লাহ। এই স্থানে মানুষের কোন হাত নেই, মানুষ এই কাজে পারদর্শিতা দেখাতে অক্ষম। তবে, পরিবেশ, আবহাওয়া, জলবায়ু, খাদ্য উপাদানের কারণে কখনও জিহ্বার গঠন-আকৃতিতে পরিবর্তন আসতে পারে। তখন আরো নতুন শব্দের সৃষ্টি হবে, তার সাথে সৃষ্টি হতে থাকে নতুন নতুন ভাষা। এটার পিছনেও রয়েছে আল্লাহর কুদরত। সে কারণে আল্লাহ বলেছেন সকল ভাষা তারই সৃষ্টি এবং এটা তার নেয়ামতের অংশ। আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বলেছেন,

"তাঁর নিদর্শনা-বলীর মধ্যে রয়েছে আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টি এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের পার্থক্য। অবশ্যই জ্ঞানীদের জন্য তার মধ্যে রয়েছে বহু নিদর্শন।" সুরা রূম-২২

আল্লাহর এই নেয়ামত কেমন তা আমরা আন্দাজ অনুমান করতে পারিনা! এটা এমন ক্ষুদ্র কোন ব্যাপার নয় যে চিন্তাশীল ব্যতীত সহজে উৎঘাটিত হয়। কিন্তু উচ্চারণের কারণে সাধারণ মানুষের কাছে তা হাস্য-পদ মনে হয়। মানুষের জিহ্বার গঠন প্রক্রিয়াই এই উচ্চারণের তারতম্য সৃষ্টি করে। সৃষ্টি করে নতুন শব্দ। আবার সেই শব্দ মানুষের জিহ্বার মাধ্যমে ঘষা-মাজা খেয়ে নূতন আঙ্গিকে প্রকাশ পায়। আমরা প্রাত্যহিক জীবনে এ ধরনের বহু শব্দ ব্যবহার করি, যার মূল শব্দ কোনটি খবর রাখি না। দুটোই একই জিনিষ কিন্তু শুনতে লাগে আসমান জমিন তফাৎ। যেমন আদিতে একটি মূল শব্দ ছিল 'পাদশাহ'। 'প' এর উচ্চারণে 'ব' বসে হয়ে গেছে 'বাদশাহ'! এখন এটাই প্রচলিত শব্দ। সেভাবে যার নাম 'জওহর' তার নাম 'গওহর'। যিনি 'ইস্কান্দর' তিনিই 'সেকান্দর'। যারা 'সিন্ধু' তারাই 'হিন্দু'। যারা 'কারিকর' তারাই 'কারিগর'। যেটা 'ইয়াসমিন সেটাই 'জেসমিন'।

লিখেছেন: নজরুল ইসলাম টিপু

পঠিত : ১০৯৪ বার

মন্তব্য: ০