Alapon

আজ কায়েদে আজম মোহাম্মাদ আলী জিন্নাহর জন্মদিন...


যার কারণে আপনাকে আমাকে রাস্তায় ধরে কেউ এখনও 'জয় শ্রীরাম' বলতে বাধ্য করে না, যার কারণে আমরা এখনও নির্বিঘ্নে গরুর মাংস কিনে খেতে পারি, বকরি ঈদ না বলে কুরবানির ঈদ বলতে পারি, যিনি উপমহাদেশের চল্লিশ কোটি মুসলিমকে রামরাজ্য থেকে বাঁচিয়েছেন উপমহাদেশের সেই মহান নেতা মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ'র আজকে জন্মদিন।

জিন্নাহ তার অভিজ্ঞতা থেকে এই সিদ্ধান্তে এসেছিলেন, ৪০ কোটি হিন্দু এবং ৭ কোটি মুসলিম একসাথে এক দেশে বসবাস করা সম্ভব না। দাঙ্গা হলে মুসলিমরা ভূগবে বেশী। তাই দুই ধর্মের মানুষের জন্য দুটি দেশ চেয়েছেন জিন্নাহ। জিন্নাহর পাকিস্তানে ইসলামি হুকমত কায়েম হবে জিন্নাহ এরকম কথা কখনো বলেননি। যতদিন বেঁচে ছিলেন সেরকম কোনো উদ্যোগও নেননি।

কিন্তু মুহাম্মদ আলী জিন্নাহকে বাংলাদেশে যতটা ঘৃণা করা হয় তিনি এই ঘৃণার প্রাপ্য নন। জিন্নাহর পাকিস্তান না হলে কোনোদিন বাংলাদেশ হত না। আমাদের ভারতের অন্তর্গত থাকতে হত।

লাহোর প্রস্তাবে দুইটা পাকিস্তানের পরিকল্পনা ছিল। জিন্নাহ সেটাকে সংশোধন করে একটা পাকিস্তান করেছেন। এটা জিন্নাহর একটা অপরাধ। কিন্তু জিন্নাহর দিক দিয়ে দেখলে তার কৌশল হচ্ছে, দুইটা পাকিস্তানের দাবি দুর্বল দাবি হবে, দুইটা পাকিস্তান চাইলে একটাও হবে না। তারচেয়ে একটা পাকিস্তান আদায় করা সহজ হবে। জিন্নাহর চিকিৎসক বলেছিলেন, যক্ষার কারণে তিনি বেশিদিন বাঁচবেন না। জিন্নাহ বিশ্বাস করতেন, তিনি মারা গেলে আর কেউ ভারত থেকে পাকিস্তান আলাদা করতে পারবে না। তাই তিনি যতদুর সম্ভব একটা পাকিস্তান করতে চেয়েছিলেন।

অনেকে অভিযোগ করেন জিন্নাহ নিজে ক্ষমতা পাওয়ার জন্য পাকিস্তান চেয়েছিলেন। কিন্তু অখণ্ড ভারত রাখার স্বার্থে মহাত্মা গান্ধী জিন্নাহকে অখণ্ড ভারতের প্রথম গভর্নর জেনারেল বা প্রধানমন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু ভবিষ্যতের কথা ভেবে জিন্নাহ সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।

জিন্নাহর একমাত্র অপরাধ, উর্দু এন্ড উর্দু শ্যাল বি দ্য অনলি স্টেট ল্যাঙ্গুয়েজ অব পাকিস্তান। কিন্তু জিন্নাহর সামনে নো নো বলে প্রতিবাদ করার পরে যতদিন বেঁচে ছিলেন ততদিন জিন্নাহ আর এই কথা মুখে আনেননি। জিন্নাহর সামনে তার বক্তব্যের প্রতিবাদ করায় কারো বিরুদ্ধে অ্যাকশন নেওয়া হয়েছে এমন খবর জানা যায় না।

ভাষা প্রশ্নে নাটের গুরু ছিলেন আমাদের ঢাকার সন্তান উর্দুভাষী খাজা নাজিমুদ্দিন। নাজিমুদ্দিনের পরিবার উর্দুতে কথা বলতো, নাজিমুদ্দিন জিন্নাহকে বুঝিয়েছিলেন ঢাকায় উর্দুর ব্যাপক জনপ্রিয়তা। জিন্নাহ যখন এই ভুল বুঝতে পারেন তখন তিনি ভাষার প্রশ্নে তার অবস্থান পাল্টে ফেলেন। জিন্নাহ মারা যান ১৯৪৮ সালে। ভাষা নিয়ে আবার আন্দোলন শুরু হয় ১৯৫২ সালে -- ক্ষমতায় তখন সেই নাজিমুদ্দিন।

অসমাপ্ত আত্মজীবনী এবং কারাগারের রোজনামচা বই দুটিতে দেখা যায়, শেখ মুজিবুর রহমান তার বইয়ে ভাসানীর সমালোচনা করেছেন, ফজলুল হকের সমালোচনা করেছেন, নাজিমুদ্দিনের সমালোচনা করেছেন ; কিন্তু কোথাও জিন্নাহর সমালোচনা নাই। উল্টো পড়লে মনে হবে শেখ মুজিব জিন্নাহকে ডিফেন্ড করার চেষ্টা করেছেন। শেখ মুজিবও মনে করতেন, ভাষার প্রশ্নে জিন্নাহকে ভুল বোঝানো হয়েছিল।

আইউব খানের শোষণের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন জিন্নাহর বোন ফাতেমা জিন্নাহ।আইউব খান বিরোধী ফাতিমা জিন্নাহর নির্বাচনী জোটের অন্যতম শরীক দল ছিল শেখ মুজিবের আওয়ামী লীগ। সুতরাং, ইয়াহিয়া খান, আইউব খান বা নিয়াজির কর্মকান্ডের ভাগীদার করে জিন্নাহকে দোষারোপ করা সমীচীন নয়।

জিন্নাহর বিরুদ্ধে অভিযোগ হচ্ছে, শুধু ধর্মের ভিত্তিতে দুই প্রান্তের দুটো ভূখন্ডে নিয়ে যে পাকিস্তান তৈরি করেছেন তা একটি কৃত্রিম রাষ্ট্র। পাকিস্তান যদি কৃত্রিম রাষ্ট্র হয় তাহলে প্রায় দুই হাজার ভাষা এবং ছত্রিশটি বৃহৎ জাতিগোষ্ঠী নিয়ে ভারত নামের যে রাষ্ট্রটি আছে সেটি যে শুধু কৃত্রিমই নয় বরং একটি কিম্ভূতকিমাকার রাষ্ট্র সেক্যুলার মিডিয়া এই কথা কখনো বলবে না।

NRC, CAB আর বাবরি মসজিদের মত ঘটনা ঘটবে জিন্নাহ অনুমান করেছিলাম আরও ৮০-৯০ বছর আগে। দেশভাগের পরে সীমান্ত পাড়ি দিতে গিয়ে অনেক মানুষ হতাহত হয়েছে। ভারত থেকে পাকিস্তানে গিয়েছে এরকম একজন তরুণ পার্টিশনের এই ক্যাজুয়ালিটির কথা মনে করিয়ে দিয়ে বললেন, 'Mr. Jinna, Don't you think your idea of partition was wrong ? ' জিন্নাহ বললেন,' My son, history will prove whether I was wrong.'

জিন্নাহর সমালোচনার একটিমাত্র কারণ আছে -- ভাষা নিয়ে দেওয়া তার বক্তৃতা।কিন্তু ইতিহাস খুঁজলে দেখা যায়, বক্তব্যটি তিনি সরল বিশ্বাসেই দিয়েছিলেন। জিন্নাহকে ঘৃণা করার একটি কারণ অবশিষ্ট থাকে -- আপনি আজকের স্বাধীন বাংলাদেশ চান না, ১৯৪৭ সালের দেশভাগও সমর্থন করেন না, আপনি চান অখন্ড ভারত।

শুভ জন্মদিন মি. জিন্নাহ। আল্লাহ আপনাকে জান্নাতবাসী করুন। আমিন।।

সংগৃহীত

পঠিত : ৮০৩ বার

মন্তব্য: ০