Alapon

পাঠ্য সিলেবাসে কি অর্ন্তভূক্ত থাকে, অভিবাবকের ধারণা থাকা জরুরী...


কিছু প্রবাসীকে পেয়েছিলাম যারা সন্তানদের ভর্তি করিয়েছেন ভারতীয় স্কুলে এবং তার সিলেবাস ভারতীয়। অর্থাৎ তারা ভারত সরকারের রাষ্ট্রীয় সার্টিফিকেট দিয়ে নিজেদের শিক্ষিত প্রমাণ করবে। তাদের কমবেশি সবাইকে বাংলাদেশী সিলেবাসের প্রতি শুধু অনীহা নয়, ঘৃণা প্রকাশ করতে দেখেছি। সে সব স্কুলের বাংলাদেশী কয়েকজন ছাত্রের প্রতিক্রিয়া জানতে চেষ্টা করেছিলাম কেন তারা বাংলাদেশকে ঘৃণা করে?

তারা উত্তরে জানায় বাংলাদেশ পচা, বাংলাদেশের মানুষ কদর্য ও নোংরা খাসিয়তের।

কিভাবে জানলে, প্রশ্ন করেছিলাম,

উত্তরে জানাল, এটা তো আমাদের ক্লাসের ছাত্র-শিক্ষক সবাই বলে। কথা যদি সত্যি না হত তাহলে তারা কি এভাবে বলত। এটাতো ক্লাসেই বলা হয়।

প্রশ্ন করলাম, তারা বললেই কি তোমরা বিশ্বাস করবে?

উত্তরে জানাল, কেন করবে না! স্যারদের সকল কথা বিশ্বাস করেই তো লেখাপড়া করি!

প্রশ্ন করলাম, তোমরা যে বাংলাদেশী এটা ক্লাসের সবাই জানে?

উত্তর দিল, নিচের ক্লাসের ওরা জানত আমরা বাংলাদেশী কিন্তু এখন সবাই জানে আমরা ভারতীয়?

প্রশ্ন করলাম, কখনও বাংলাদেশে গিয়েছ?

উত্তরে বলল, গিয়েছি। একদম বাজে, মন টিকে না। রাস্তাঘাটে নোংরা, মানুষও নোংরা!

কখনও ভারতে গিয়েছ? প্রশ্ন করলাম।

না যাইনি, তবে বাবাকে বলেছি ভারতীয় পাসপোর্ট বানাতে! ভারতীয়দের অনেক সম্মান, তারা পৃথিবীর সকল দেশে যেতে পারে।

বাংলাদেশী পাসপোর্ট দিয়েও পৃথিবীর সকল দেশে যেতে পারে; তাদেরকে জানালাম।

বলল, না পারেনা, আমার বাবার নামের পিছনে খান আছে। সে কারণে কানাডিয়ান এমব্যাসি বলে দিয়েছে জীবনে কোনদিন আমরা কানাডায় যেতে পারব না। কেননা কানাডার ইমিগ্রেশনের ভাষায় খান হল সন্ত্রাসীদের পরিচিতি। কিন্তু যদি ভারতীয় পাসপোর্টে যদি খান থাকে তাহরে এই নামে কানাডা যাওয়া কোন সমস্যা নয়!

প্রবাসেই ভদ্রলোক কোটিপতি। ছেলেদের ভারতীয় স্কুলে ভর্তি করিয়ে রুচি ও চিন্তা বদলিয়ে ফেলেছে। দীর্ঘ ১২ বছরের বেশী সময় ধরে, দেশের বিরুদ্ধে নেতিবাচক শুনতে শুনতে তারা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। তারা পিতাকে বলেছে, হয় ভারতীয় পাসপোর্ট নাও, সেখানে বাড়ি বানাও, নয় কানাডায় পাঠাও। তারপরও ঘৃণিত বাংলাদেশে যাবেনা।

তারা শিখেছে জাতিয় পাখি ময়ূর, জাতীয় উৎসব হোলী, দেওয়ালী। এক পারিবারিক ইসলামী অনুষ্ঠানে ভদ্রলোকের মেয়ে কেন অনুপস্থিত প্রশ্ন করায় গৌরবের সহিত মা উত্তরে জানিয়েছিল, বান্ধবীদের বাসায় হোলী উৎসব পালন করতে গেছে। তাকে ছাড়া নাকি অনুষ্ঠান জমেনা!

বাংলাদেশী অনেক পরিবার চোখ বন্ধ করে, সে সব স্কুলে সন্তানদের ভর্তি করিয়ে দিচ্ছে। তারা ভুলেও চিন্তা করেনা তাদের প্রিয় সন্তান সেখানে পড়ছে টা কি?

পাকিস্তানী কর্তৃত্বাধীন স্কুলও রয়েছে সেদেশে। বেজায় সুনাম, ইসলামী পরিবেশ, শিষ্টাচার ও নামাজের প্রতি তাদের মনোনিবেশ যথেষ্ট কঠোর। বাংলাদেশী বহু ছাত্র সেখানে পড়ানো হয়। কিন্তু সেখানে একটি সমাজ বিজ্ঞান পড়ানো হয়, যেটাতে স্বাধীনতা সংগ্রাম ও তার পরবর্তী ইতিহাস গুলো আমাদের বিপরীত উল্লেখ করা হয়! যেমন, ১৯৭১ সালে বাঙ্গালী কসাইয়েরা প্রচুর বিহারী হত্যা করে, তারা ছিল গাদ্দার ইত্যাদি।

আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসের বিপরীতটাই তাদের সমাজ বিজ্ঞানের ইতিহাস। তিরানব্বই হাজার আত্মসমর্পণকারী পাকিস্তানী সৈন্য তাদের কাছে বীর। পাকিস্তানিদের দেশপ্রেমের জন্য সে ইতিহাস তাদের জন্য উপযোগী কিন্তু আমাদের ছেলেরা শুধুমাত্র সিলেবাসের কারণেই নিজ জাতির বিরুদ্ধে ঘৃণা শিখে বেড়ে উঠছে। আর অর্থায়ন করছে বাংলাদেশী পিতা। অগণিত পিতা-মাতা জানেনা কিংবা খবর রাখেনা তার আদরের সন্তান এত মূল্যের যে লেখাপড়া করছে তাতে কি পড়ানো হয়! সে পড়াটি আমাদের সমাজ, কৃষ্টি ও ধর্মের জন্য কতটুকু উপযোগী। সর্বোপরি এই শিক্ষায় পিতামাতার লক্ষ্য পূরণ হচ্ছে কিনা।

আরেকটি উদাহরন দিলে যে কোন পিতা-মাতাই আমার সাথে একমত হবেন যে, স্কুলের পাঠ্য বই পিতা-মাতাকেও পড়া উচিত। নতুবা সন্তানের পিছনের মিলিয়ন টাকার পুরোটাই গচ্ছা যাবে।

ইংলিশ মিডিয়ামের ক্লাস ফাইভের ইংলিশ লিটারেচার বইয়ের একটি পার্ট এ রকম।

সুরেশের বাবা ভারত সরকারের উচ্চমানের কর্মকর্তা। সুরেশ তার পিতা-মাতার সাথে মোম্বাইয়ে থাকে এবং একটি ইংরেজি স্কুলে লেখাপড়া করে। সে প্রতিদিন স্কুলে ডাল-ভাদা নিয়ে আসে। টিফিন পিরিয়ডে বন্ধুরা ডাল-ভাদা গন্ধ বলে টিটকারি দেয়। সে মনে কষ্ট পায় এবং টিফিন না খেয়ে ঘরে ফেরত নিয়ে আসে। সুরেশের বাবার আয় কম, টানাটানির সংসারে তার মায়ের করার কিছু থাকেনা।

সুরেশের বাবা আমেরিকায় চাকুরী পায় এবং সেও বাবার সাথে চলে আসে। এখানেও সুরেশ স্কুলে ডাল-ভাদা আনে। ক্লাসের সবাই তাকে এড়িয়ে চলে, সে একলা হয়ে যায়। ফলে সুরেশের মা টিফিনে বার্গার বানিয়ে দেয়, সুরেশ এটা খুবই পছন্দ করে এবং সে ফাস্টফুড খেতে শিখেছে ফলে সকলেই সুরেশকে খুব পছন্দ করে। সুরেশ এখন খুব মহাসুখী।

এই পাঠে মনে হবে সুরেশ কে আধুনিক শিষ্টাচার শেখানো হচ্ছে। মোটেও তাই নয়! লক্ষ্য করে দেখুন, এখানে সুরেশের বাবা ভারতীয় বড় কর্মকর্তা। এতবড় কর্মকর্তা হবার পরও তাদের দুঃখ যায়নি। তাদের খাদ্য-রুচি দুর্গন্ধময়, কখনও ঘৃণিত। বাহিরের দুনিয়াতে এটা চলে না। ফাস্টফুড হল টেষ্টি ও মর্যাদাকর। যা খেলে বিদেশীরাও বন্ধু হয়ে উঠে।

লক্ষণীয় যে, এই বইটি মোম্বাই থেকে প্রকাশিত আবার ভারতীয় খৃষ্টানদের দ্বারা পরিচালিত স্কুলের সিলেবাসের পাঠক্রম। এই পড়া যদি কোন শিশু পড়ে তার পক্ষে কোনদিনই দেশপ্রেম থাকবে না। আরো অগণিত উদাহরণ দেওয়া যাবে। লেখার পরিধি বাড়বে মাত্র। সচেতন কোন পিতা-মাতা গভীর ভাবে উপলব্ধি করলে বুঝতে পারবে নিজের সন্তান নষ্ট হবার জন্য এ ধরনের একটি ক্লাসই যথেষ্ট।

Nazrul Islam Tipu

পঠিত : ৪২০ বার

মন্তব্য: ০