Alapon

কাসেম সুলাইমানীর হত্যাকাণ্ড এবং মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতি...


ইরানি বিপ্লবী গার্ড প্রধান কাসেম সুলাইমানীর হত্যাকান্ড ইতোমধ্যেই গোটা বিশ্বের আলোচিত ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। সেইসঙ্গে এর প্রভাব বিশ্ব বাজারেও পড়তে শুরু করেছে। এই হত্যাকান্ডের পরপরই বিশ্ব বাজারে তেলের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই হত্যাকান্ডের প্রতিক্রিয়াস্বরূপ কেবল তেলের দাম বৃদ্ধির মাঝেই কি সীমাবদ্ধ থাকবে?
আমার তা মনে হয় না। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে খুব ভয়ানক কিছু ধেয়ে আসছে। এবং তা কোনো আকর্ষিক বা আবেগি প্রতিক্রিয়া হবে না। তা হবে সুদুরপ্রসারী এবং মারাত্মক প্রতিক্রিয়া। আর এই প্রতিক্রিয়া গোটা মধ্যপ্রাচ্যেই ছড়িয়ে পড়বে। এতে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে সৌদি আরবের। কারণ, কাসেম সুলাইমানীর হত্যাকান্ডে যারা পরোক্ষ মদদ দিয়েছে এবং এই হামলার ফলে রাজনৈতিকভাবে সুবিধা ভোগ করবে তাদের মধ্যে অন্যতম সৌদি আরব।

খুব সম্ভবত ইরানের সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রে হামলা চালানোর মত সক্ষমতা নেই। আর থাকলেও ইরান নিশ্চয়ই সামগ্রিক যুদ্ধে জড়াতে চাইবে না। তাই তারা এই হামলায় যারা সুবিধা লাভ করেছে এবং প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদ দিয়েছে, তাদের উপর হামলা চালাবে। এই হামলা হতে পারে প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ! যাই হোক, সামনের দিনগুলো সৌদি আরবের জন্য যে সহজ হবে না তা চোখ বন্ধ করেই বলে দেওয়া যায়।

কাসেম সুলাইমানীর মৃত্যুতে লাভবান হয়েছে কারা?

এক কথায় এই প্রশ্নের জবাব দেওয়া সম্ভব নয়। কাসেম সুলাইমানীকে হত্যা করার ফলে সিরিয়ার বাশার আল আসাদ নিজের ক্ষমতা নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে পারে। কারণ, বাশারের ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখার পিছনে কাসেম সুলাইমানীর ক্যারেশমাটিক নেতৃত্ব ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে। যার বলি স্বরূপ বহু সুন্নী মুসলমানকে জীবন দিতে হয়েছে। যার ফলে বাশার বিরোধী বিদ্রোহী দলগুলো কাসেম সুলাইমানীর হত্যাকান্ডে লাভবান হবে।

খুব সম্ভবত ইরাকের ক্ষমতার মসনদ থেকে ইরানী প্রভাব বিলীণ হয়ে যাবে। মূলত, ইরাকে চলমান সরকার বিরোধী আন্দোলন দমন, প্রতিরোধ ও ইরান সমর্থিত সরকার টিকিয়ে রাখার নিমিত্তেই কাসেম সুলাইমানী ইরাকে অবস্থান করছিলেন। আর ঠিক সেই মুহুর্তে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে মার্কিন বাহিনী ড্রোন হামলা চালিয়ে কাসেম সুলাইমানীকে হত্যা করে। যেহেতু কাসেম সুলাইমানীকে হত্যা করা হয়েছে, খুব সম্ভবত ইরাক থেকে ইরানের প্রভাব কমে আসবে। আর ইরাকের বর্তমান সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করা হতে পারে। এতে করে ইরাকে যারা সরকার বিরোধী আন্দোলন করছে তারা লাভবান হবে।

তবে সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছে ইসরাইল। মূলত এক কাসেম সুলাইমানীর কারণেই ইসরাইলের প্রায় ঘুম হারাম অবস্থা ছিল। ইসরাইল প্রকাশ্যে কাসেম সুলাইমানীকে হত্যার হুমকি দিয়েছিল। এবং মোসাদ কাসেম সুলাইমানীকে বেশ কয়েকবার গুপ্ত হামলার মাধ্যমে হত্যার চেষ্টা করেছিল বলেও বিভিন্ন মাধ্যম থেকে জানা যায়। বর্তমান সময়ে ইসরাইলের সবচেয়ে বড় মাথাব্যাথা সেই কাসেম সুলাইমানীকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট হত্যা করেছে! নতুন বছরে ইসরাইলের জন্য এর চেয়ে খুশির খবর আর কী হতে পারে।

পরিস্থিতি কোনদিকে যাবে?

এই হত্যাকান্ডের পর মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতি কোনদিকে যাবে তা এই মুহুর্তে নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব নয়। তবে হামলার পর বেশ কয়েক ঘন্টা পেরিয়ে গেলেও ইরান থেকে এখনো তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়নি। মনে হচ্ছে এক্ষেত্রে ইরান বেশ প্রজ্ঞার পরিচয় দিবে। আবেগতাড়িত হয়ে তারা হয়তো কিছুই করবে না। এক্ষেত্রে ইরানের গেম প্ল্যান হয়তো ‘ধীরে চলো’! আর ধীরে চলো নীতিতে এগুলো ইরানের প্রতিপক্ষদের সর্বদা স্নায়ুচাপের মধ্যে বসবাস করতে হবে। আর এই চাপে সবচেয়ে বেশি পিষ্ঠ হবে আর সৌদ পরিবারের দখলকৃত অঞ্চল সৌদি আরব!

পঠিত : ৫৬৮ বার

মন্তব্য: ০