Alapon

নতুন বছরে ছাত্রলীগ যেন আরও ভয়ংকর...


গেল সপ্তাহে বুয়েটের শেরে বাংলা হলের সামন দিয়ে বাসায় ফিরছিলাম। তখন বাজে আনুমানিক রাত ১১ টা। শীতের রাত, তাই চারদিকে শুনশান নীরবতা। সাইকেলটা ব্রেক করে কিছুক্ষণ শেরে বাংলার নীরব ভবনের দিকে তাকিয়ে রইলাম। এই হলের প্রতিটি দেয়াল আবরারের চিৎকারের সাক্ষি। শেরে বাংলা হলের প্রতিটা গাছ, আবরারের হাহাকারের সাক্ষি। শেরে বাংলা হল কি কখনো আবরারের হাহাকার আর চিৎকার ভুলিয়ে দিতে পারবে?

পারবে না! সেইসাথে ছাত্রলীগও হয়তো চায় না, বাংলাদেশের মানুষ আবরারের ঘটনা ভুলে যাক। ছাত্রলীগ যে পৈশাচিক কায়দায় আবরারকে হত্যা করেছিল, তা জাতি হয়তো কখনোই ভুলবে না। তাদের মনের গহীণে কোথাও না কোথাও আবরারের কথা লেখা থাকবে। অন্যদিকে মনে হয়েছিল, এমন একটা পৈশাচিক ঘটনা ঘটানোর পর ছাত্রলীগ নিজেকে শুধরে নিবে। এমন বর্বরচিত ঘটনা আর কখনো ঘটানোর সাহস করবে না। কিন্তু আবরারের ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই, ছাত্রলীগ পুনরায় আপন সমহিমায় আর্বিভূত হয়েছে।

গতকাল আবারও সেই জুজো ‘শিবির সন্দেহে’ চার ছাত্রকে রাতভর বেধড়ক পিটিয়ে আহত করেছে। এবার এই ঘটনা ঘটেছে স্বয়ং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।

সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের চার শিক্ষার্থী নাকি ছাত্রলীগে প্রোগ্রামে নিয়মিত উপস্থিত হন না। এই অপরাধে তাদের গেস্টরুমে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে এই চার ছাত্রকে রড, হকিস্টিক এবং লাঠি-সোটা নিয়ে বেধড়ক মারধর করা হয়। এভাবে রাত ২ টা পর্যন্ত নির্যাতন চলতে থাকে।

তারপর বাংলা সিনেমার মত- যখন সবশেষ তখন পুলিশের আগমন ঘটে- তেমনি পিটিয়ে তক্তা বানানো শেষ তখন হলের প্রক্টর হাজির। প্রক্টর সাহেব সেই ৪ ছাত্রকে হেফাজত করবেন কী, উপরন্তু তিনি সেই ছাত্রদের পুলিশের হাতে তুলে নিলেন। অবশ্য পুলিশের হাতে তুলে দেওয়াও এক ধরণের হেফাজতের নামান্তর। কারণ, ছাত্রলীগের হাতে থাকলে এই জানোয়ারগুলো যে আবারও আবরারের মত পিটিয়ে হত্যা করবে না, তার নিশ্চয়তা কে দিবে! অন্তত পুলিশ ঢাবির ছাত্রদের পিটিয়ে হত্যা করবে না। তাই ছাত্রলীগের হাতে বন্দি থাকার চেয়ে পুলিশের লকাপে বন্দি থাকাই অপেক্ষাকৃত নিরাপদ।

এর শেষ কোথায়?

ছাত্রলীগের এমন সন্ত্রাসমূলক কার্যক্রম নতুন কিছু নয়। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ছাত্রলীগ একের পর এক অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সেসব অপকর্মের নাম মাত্রও বিচার হয়নি। যার দরুন তারা এখন এতোটাই বেপরোয়া যে, পিটিয়ে মানুষ হত্যা করতেও তারা কার্পণ্য বোধ করে না। পিটিয়ে মানুষ হত্যা করার পর তাদের সাময়িকভাবে ছাত্রত্ব বাতিল হয় ঠিকই, কিন্তু সরকারের হাতে যে আদালত সেই আদালত রায় দিয়ে তাদের পুনরায় ছাত্রত্ব প্রদান করে।

দিনশেষে দেখা যায়, যে বিচার ব্যবস্থা সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করার কথা। সেই বিচারব্যবস্থাই পরোক্ষভাবে এহেন অপরাধীদের লাই দিয়ে অন্যায়কে পশ্রয় দিচ্ছে।

শেষ কথা, যে দেশে গণতন্ত্রই নেই, ভোটাধিকার নেই, জনগণের ভোটে নির্বা‍চিত সরকার নেই সে দেশে সাধারণ জনতা তারপরও যে বেঁচে থাকতে পারছে- এটাই তো বড় কথা। তাই এই মুজিব বর্ষে আওয়ামী লীগ সরকার তথা শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাই। আপনি যে আপনার আব্বুর দেশে আমাদের থাকতে দিয়েছেন তাতেই আমরা কৃতজ্ঞ! ন্যায় বিচার এবং পূর্ণ‍ নাগরিক অধিকারে স্বপ্ন সে তো দূর কি বাত অথবা দুঃস্বপ্ন মাত্র! তাই নিত্য নতুন আবরারদের মৃত্যুর মুখে পতিত হওয়া আর কোনো অস্বাভাবিক ঘটনা নয়; বরং এটাই স্বাভাবিক।‍

পঠিত : ৫০৪ বার

মন্তব্য: ০