Alapon

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আকুল আবেদন...


আজ শুক্রবার না হলেও ভোটের কারণে অফিস বন্ধ রয়েছে। অবশ্য, অনেকটা আশঙ্কা থেকেই অফিস বন্ধ রাখা হয়েছে । বিগত কয়েকবছরে বাংলাদেশে নির্বাচনের যেরূপ চরিত্র দেখা যাচ্ছে তাতে শঙ্কিত না হয়ে কোনো উপায় দেখছি না। তার উপর ভোটের দুদিন আগে র‌্যাব প্রধান বেনজির আহমেদ বললেন, ‘যারা ভোটর নন, স্থায়ী বাসিন্দা নন- তারা ঢাকা ছাড়ুন।’

আমি ঢাকার ভোটারও নই, স্থায়ী বাসিন্দাও নই- চাকরি সূত্রে থাকা হয়। তাই র‌্যাব প্রধানের হুশিয়ারি শুনে ভয়ে সকাল থেকে বাসা থেকে বের হইনি। তাই বাহিরের অবস্থা কি তা নিজ চোখে দেখতে পারিনি। জোহরের নামাজ পড়তে মসজিদে গেলাম। নামাজ শেষে মসজিদ থেকে বেরিয়ে মূল রাস্তায় জনসাধারণের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে- তারা কোনো ছুটির দিন কাটাচ্ছে। অন্যান্য ছুটির দিনগুলোতে মানুষ যেমন বউদের নিয়ে রিক্সায় ঘোরে আর বউরে ঠোটে গাঢ় করে লিপিস্টিক দিয়ে সাজে- ঠিক তেমন করে সবাই ঘুরতে বেরিয়েছে।

অদূরেই ছিল ভোটকেন্দ্র। খানিকটা এগিয়ে গিয়ে দেখলাম, ভোটকেন্দ্র মোটামুটি খা খা করছে। ভোট কেন্দ্রের বাহিরে সরকার দলীয় কর্মীরা বুকে ব্যাজ বেঁধে বিরিয়ানীর প্যাকেট নিয়ে ছোটাছুটি করছে।

কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর দেখলাম- এক বয়োবৃদ্ধ নারী ভোট দিতে এসেছেন। কিন্তু ইভিএমের কোনো এক সমস্যার কারণে তিনি ভোট দিতে পারছেন না। আর এসব নিয়ে সরকার দলীয় এজেন্টরা দৌড়াদৌড়ি করছেন। তাদের এ অবস্থা দেখার চেয়ে বাসায় ফিরে সংবাদ পত্রিকার মাধ্যমে পুরো ভোটের চিত্র জানার জন্য ল্যাপটপ ওপেন করলাম। পত্রিকার ওয়েবসাইড খুলতেই দেখি- ‘সিইসি’র আঙুলের ছাপ মিললো না ইভিএমে’- এই সংবাদ।


ভোটকেন্দ্র গুলোতে এমনিতেই ভোটরদের উপস্থিতি তেমন একটা দেখা যায় না। উপরন্তু ইভিএম মেশিনের ব্যাবস্থা করে জনসাধারণকে ভোটের প্রতি আরও নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। যেখানে স্বয়ং সিইসিকেই ইভিএম মেশিনে ভোট দিতে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে, সেখানে সাধারণ ভোটারদের না জানি কি অবস্থা।

আর ভোটের নিরাপত্তা পরিস্থিতির কথা যদি বলি- গতকাল সন্ধ্যায় বাসায় ফেরার সময় দেখলাম র‌্যাব আর বিজিবির গাড়ি বহর টহল দিচ্ছে। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কড় সাইরেন বাজিয়ে টহল দিচ্ছে। কিন্তু এই কড়া সাইরেন যাদের কর্নকুহরে পৌছা দরকার সেই ভোট ডাকাতদের কর্নকুহরে পৌঁছায়নি। অন্যান্য সকল ভোটের মত এবারেও ভোটারদের উপস্থিতি অনেক কম। তারপরও যারা ভোট দিতে উপস্থিত হয়েছে তাদের উপর চড়াও হয়েছে সরকার দলীয় সন্ত্রাসীরা। নির্বাচন কমিশনের হিসাবনুসারে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ২১ টি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।


এমন ঘটনা যে ঘটবে তা নির্বাচন কমিশন না জানলেও আমরা সাধারণ জনতা কিন্তু জানতাম। কিন্তু তারপরও সিইসি সম্ভবত মাঝে মাঝে ফ্রুটিকা খায়। যার দরুন কখনো কখনো সত্য কথাটা মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা বলেন, ‘আমরা এমন ভোট চাইনি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যারা আছে তাদের কাছে আমার নির্দেশ, এ জাতীয় পরিস্থিতি যদি ঘটে, তাহলে তারা সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেবেন। যারা প্রার্থী, ভোটার বা সমর্থক তাদের প্রতি আমার অনুরোধ, যাতে তারা পরিবেশ-পরিস্থিতি শান্ত রাখেন।’

আপনার চাওয়া না চাওয়ায় কোনো কিছু যায় আসে না। এখানে সরকার প্রধানের ইচ্ছাই মুখ্য। তাই বলিকি- এসব নির্বাচন করে কোটি কোটি টাকা নষ্ট করার চেয়ে প্রধানমন্ত্রী তার পছন্দের লোককেই মেয়র বানাক। আর মেয়ররা তাদের পছন্দের লোকদের ওয়ার্ড কমিশনার বানাক। তাতে টাকাও নষ্ট হবে না। এসব সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটবে না, প্রাণহানিও হবে। অন্যদিকে আমাদের মত সাধারণ জনতাকে আতঙ্কের মধ্যেও দিনাতিপাত করতে হয় না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনার প্রতি আকুল আবেদন- আশা করছি, পরবর্তি নির্বাচন থেকে এই দিকটি খেয়াল রাখবেন।

পঠিত : ৫৭৭ বার

মন্তব্য: ০