আপনি আহলে হক, বাকিরা কী ?
তারিখঃ ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১৯:৩৬
দুটি শব্দ অতিমাত্রায় ব্যবহারকারী ব্যক্তি, দল গোষ্ঠী এই মুহুর্ত্য বাতিলের সহযোগী হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে এবং এরাই যুগে যুগে দ্বীন বিরোধী শক্তির ক্রীড়ানক হিসেবে কাজ করেছে। অথচ গলা উঁচিয়ে নিজেদেরকে একমাত্র সহীহ্ প্রমাণ করার চেষ্টা করেছে! হিন্দুদের মধ্যকার ঠাকুরদের একটি দল বেদ গীতা বুঝা,মানার ক্ষেত্রে নিজেরা ছাড়া অন্য কারো হিস্যা বরদাস্ত করে না। তদ্রুপ মুসলিমদের মধ্যে একটি গ্রুপ আছে যারা কোরআন সুন্নাহর জ্ঞান নিজেদের ছাড়া অন্য কারো জন্য স্বীকার করতেই চায় না। ইলমের ঠিকা, দ্বীন রক্ষার কথিত ঠিকাদারী তারাই পেয়েছে।
শব্দ দুটি নিম্নরূপ,
এক : আহলে হক ওলামা!
এই শব্দ নিজেদের জন্য খাস করে নিয়ে প্রকান্তরে ওরা সকল ঘরানার ওলামাদের বাতিল, গোমরাহ হিসেবে বিশ্বাস করছে এবং নিজেদের অনুসারীদের এই চিন্তাধারা লালন করে ভিন্নমতালম্বীদের ব্যপারে সেই লেভেলের উগ্রতা শিখাচ্ছে। অথচ বলা উচিত ছিলো আমরা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের ওলামাগন! বিভিন্ন বিষয়ে ইখতেলাফ করেও পুর্বেকার ইমামরা এক পক্ষ অন্য পক্ষকে সম্মান দিয়ে, ইমাম সম্বোধন করে কথা বলতেন। বর্তমান জামানার উগ্র এই গোষ্টিটি চুন থেকে পান খসলে অন্য ঘরানার ওলামাদের গোমরাহ, বাতিল স্বাব্যস্ত করে দেয়।
দুই : কথায় কথায় দাবি করে দ্বীন ধ্বংস করতে দেবো না, ইসলাম বিকৃত করতে দেবো না। প্রায় সময় বিরোধী পক্ষের সাথে ফিকহ বা কালাম শাস্ত্রের সামান্য ইখতেলাফে ওরা ভিন্ মতের ওলামাদের বিরুদ্ধে প্রচারনা চালায় এভাবে, ওরা ইসলাম ধ্বংস করে ফেলতে চাইছে, দ্বীন বিকৃত করছে ইত্যাদি ! এরকম প্রচারণা শুনলে মনে হয় দ্বীন ইসলাম বুঝি খুব ঠুনকো, যখন তখন একে ধ্বংস করা যায়। অথচ খোজ নিলে জানা যায়, দ্বীন বিকৃত করার অন্যতম মাধ্যম বেদয়াত লালনে তাদের থেকে অগ্রগামী কেউ নেই। বরং বেদয়াতের বিরুদ্ধে বলা প্রতিটি কথা ওরা নিজেদের দিকে ফিরিয়ে নেয় এবং এই সূত্রে তাদের বিরোধীতার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে।
এরকম প্রচারনায় তারা যতটা না দ্বীনের স্বার্থ দেখে তার থেকে বেশি দেখে নিজ নিজ মত, গোত্রের স্বার্থে। এই কাজে তারা নিজেদের প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিরুদ্ধে অনবরত উপরোক্ত শব্দগুলি ব্যবহার করে নিজ বলয়ের সমর্থকদের চাঙ্গা রাখতে চেষ্টা চালায়। এই প্রচারনার প্রয়োজনে ওরা দ্বীনের প্রকাশ্যে দুশমনদের সাথে হাত মেলাতে কুন্ঠাবোধ করে না! এসব ওলামারা ক্বায়েমী স্বার্থবাদী। শরীয়াতের পরিভাষায় ওলামায়ে সু।
এদের পরিচয় হাদিসের কিতাব সমূহ সবিস্তারে বর্ণিত আছে! তবে সব থেকে বড় পরিচয় হলো এরা সুরতে আল্লাহর কুতুব, সিরাতে দুনিয়া সেরা হিংস্র। এরা ভাবে চক্করে নিজেদের জন্য আল্লাহর দ্বীনের ঠিকাদারীর দাবিদার হয় এবং সুযোগ পেলেই সেটা কর্মের দ্বারা প্রকাশ করে ফেলে। এদের আরেকটি সিরাত হলো, এ জাতীয় ব্যক্তিরা সমকালীন ইসলাম বিরোধী শাষক গোষ্ঠীর অনুকম্পা পাওয়ার জন্য সব করতে পারে। প্রয়োজনে নিজের ঐতিহ্য ভুলে গিয়ে ঈমান আক্বীদা বিরুধী কাজ করতেও দ্বিধা করে না।
এদের সব থেকে বড় বদখাসালত হলো, এরা হিংস্রতায় পশুকেও হার মানায়। প্রতিপক্ষকে দমন করতে ওরা দ্বীনের শত্রুদের দারস্থ হতে ইতস্ত করে না। এরকম মোল্লাদের থেকে উম্মাহ কেবল বিভক্তির বিষাক্ত বাতাস পায়, ঐক্যর সুঘ্রান ওদের থেকে আশা করা বোকামী। কারণ, আল্লাহ পাক ওদের মধ্যকার ঐক্যও বিনষ্ট করে দেন। ফলে নিজেরা নিজেরাই বিভক্তির অনলে জ্বলতে থাকে।
বর্তমান সময়ের সব থেকে হিংস্র, ফেতনাবাজ, পর মতের প্রতি চরম অবজ্ঞাকারী ওলামাদের তালিকা করলে একশ জনের মধ্যে প্রথম নিরানব্বই জনে তারাই থাকবে। এর পরেও তারাই আহলে হক, বাকিরা গোমরাহ, পথভ্রষ্ট। অতএব, যখনই দেখবেন এরকম দাবি কেউ করছে তখনি তাকে প্রশ্ন করবেন, তুমি আহলে হক হলে বাকিরা কী ?
Apu Ahmed
মন্তব্য: ০