Alapon

পতিতাবৃত্তির কারণ এবং কিছু কথা...


আল জাযিরার একটা ডকুমেন্টারি আছে বাংলাদেশের দৌলতদিয়া পতিতালয় নিয়ে।

বেশিরভাগ মেয়েরা এখানে আসে পাচার আর প্রতারণার শিকার হয়ে। অন্ধকার জীবনে তাদের পদার্পন হয় সপ্তাহের পর সপ্তাহ নির্দয় নির্যাতনের মাধ্যমে, তারপর একসময় সে আর নিজেকে একটা মানুষ মনে করে না, মনে করে পন্য। তখন সে নিজেকে বিক্রির অভ্যাস তৈরি করতে শুরু করে।

প্রথমে তাদের শরীর বিক্রি করতে হয় কেবল জীবন বাচানোর জন্য। তারপর একসময় সে বুঝতে পারে একমাত্র অনেক অনেক টাকাই তাকে এখান থেকে বের হওয়ার সুযোগ দিতে পারে।

নিজেকে বিক্রি করা তখন তার সামনে এই অন্ধকুপ থেকে বেরিয়ে আসার একমাত্র উপায় বলে মনে হয়। ক্ষমতাবান-বিত্তবান খদ্দের যোগাড়ের মাধ্যমে দ্রুত পয়সা উপার্জন হয় তাদের লক্ষ্য।
কিন্তু ঘরভাড়া আর নানান রকম বখরাওয়ালাদের খুশি করে টিকে থাকতে গিয়ে আয় হয় ঠিকই, কিন্তু সঞ্চয় হয় না। একটা পর্যায়ে তারা বুঝতে পারে এখান থেকে বেরোতে প্রয়োজনীয় টাকা তারা হয়তো জমাতে পারবে কিন্তু বেরোনোর পর সমাজ আর তাদের মেনে নেবে না।

এই মেয়েরা তাদের জীবনভর গ্লানি বয়ে বেড়ায় বেচে থাকার জন্য।
আল জাযিরার সেই ডকুমেন্টারিতে দেখেছিলাম, অনেক পতিতা বোনেরা তাদের সন্তানদের মাদ্রাসায় পড়তে পাঠান শুধু এইজন্য যে, তাদের পাপেভরা জীবন শেষে যখন তারা পরপারে পাড়ি জমাবেন তখন হাফেজ বা মাওলানা হওয়া সন্তান তাদের জন্য চোখের পানি ছেড়ে আল্লাহর দরবারে দুআ করবে, হয়তো আল্লাহর কালাম হিফজ করা সন্তানের সুপারিশে হাশরের ময়দানে আল্লাহ তাদের মাফ করে দেবেন।
কিন্তু মৃত্যুর পর তাদের জানাযা জোটে না। কোন ইমাম সাহেব তাদের জানাযা পড়াতে রাজি হন না।

নিজের দেশের এই মেয়েদের প্রচণ্ড কষ্টের হৃদয়ছোয়া এই বর্ননা আমাকে স্তব্ধ করে দিয়েছিল কয়েকদিনের জন্য। আমরা এমন এক রাষ্ট্র গড়ে তুলেছি যেখানে বেচে থাকতে অনেক মানুষকে সম্ভ্রম বিক্রি করতে হয়, আর মৃত্যুর পরও তাদের আমরা মানুষ হিসেবে সম্মান দিতে জানি না, অথচ অধিকাংশ ক্ষেত্রে তারা আমাদের তৈরি জাহান্নামেরই বাসিন্দা।

তাদের জীবনকে মহিমান্বিত করে বর্ননা করার প্রয়োজন আমার নেই, আমি যেটা অনুভব করি, সেটা একজন মানুষের জায়গা থেকে আরেকজন মানুষের প্রতি সহানুভুতি, একজন মানুষের অধিকারের প্রতি আরেকজন মানুষের শ্রদ্ধা।

এই অসহায় মানুষদের জন্য আজ আমাদের Shafiqul Alam ভাই এক বহুকালের ট্যাবুভাঙ্গা উদ্যোগ নিলেন। আজকে দৌলতদিয়া পতিতালয়ের একজন যৌনকর্মী হামিদা বেগমের জানাযা পড়ানো হল।

আমাদের সমাজের অন্ধকার অংশটার আকার অনেক বড়।
চোর, বাটপার, মাদকাসক্ত, ছিনতাইকারী, চাদাবাজ, যৌনকর্মী, ঘুষখোররা এই সমাজেরই অংশ, এই রাষ্ট্র ও সমাজেরই সৃষ্টি।
আমাদের মত মানুষদের মত তাদের জন্যও তো ইসলাম এসেছে। ইসলাম তো শুধু ভাল মানুষের জন্য আসে নাই।

তাদের কাছে ইসলামকে নিয়ে না গেলে তারা কিভাবে ইসলামে প্রবেশ করবে??? এই মানুষগুলিকে আশা না দিলে কিভাবে তারা আধার থেকে আলোয় আসবে??

শফিকুল আলম ভাই একটা বন্ধ দরজার তালা খুলে দিলেন। আস্তে আস্তে যেন এই দরজা দিয়ে, হয়তো বা জানাযার ভেতর দিয়েই এই মানুষগুলি স্বাভাবিক জীবনের সিড়ির দিকে আর একটু আগাবেন। হয়তো আজ না, হয়তো অন্য কোন একদিন।

মাওলানা রুমীর ভাষায় বলতে হয়,
এসো এসো এসো....
হাজারবার ওয়াদা ভেঙ্গে থাকলেও এসো....
এ কাফেলা হতাশার নয়!!

Muhammad Sajal

পঠিত : ১৮১৬ বার

মন্তব্য: ০