Alapon

৫ মে, ইতিহাসের একটি কালো দিন।

আজ ৫ মে। বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি রক্তরঞ্জিত দিন। এই দিনটিতে ঢাকার প্রাণকেন্দ্র মতিঝিলের শাপলাচত্বর প্রাঙ্গন আলেমের রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল। সাদা শাপলা ফুলটা সেদিন রক্তবর্ণ ধারণ করেছিল। ঢাকার রাজপথ সাক্ষি হয়েছে একটি বর্বরোচিত রাতের। ঢাকার রাজপথের ক্ষুদে গাছগুলো রাজ সাক্ষি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে সেই দিনকার আলেমদের আত্নচিৎকার নিয়ে। 


২০১৩ সালের ৫ মে ঢাকার প্রাণকেন্দ্র মতিঝিল শাপলা চত্বরে হেফাজত ইসলাম সমাবেশের আয়োজন করে। এই সমাবেশ ছিল সেইসকল নাস্তিকদের বিরুদ্ধে, যারা শাহবাগে বসে সরকারী টাকায় বিরিয়ানী খেয়ে আল্লাহর রাসূলকে নিয়ে ব্যাঙ্ড় বিদ্রুপ করতো এবং ইসলামকে গালি দিতো। সরকারী অর্থায়ানে ফ্রি ইন্টানেটের মাধ্যমে ফেসবকু এবং ব্লগগুলোতে এই কুরুচিপূর্ণ কথাগুলো ছড়িয়ে দিতো শাহবাগী নাস্তিকদের দল। তাদের এই উর্ধ্বতপূর্ণ আচরন দেখে চুপ করে থাকতে পারেনি, জিন্দাদিল মু’মিন মুসলমান। হেফাজত ইসলাম সারাদেশের তৌহিদী জনতাকে সঙ্গে নিয়ে এই নাস্তিকদের বিরুদ্ধে দূর্বার আন্দোলন গড়ে তুলে। আর সেই আন্দোলনের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ছিল ৫ মে এর শাপলা চত্বরের সমাবেশ। 



সেইদিনের সেই রৌদ্রজ্বল দিনটির সমাবেশে যোগদান করে লক্ষ লক্ষ মুসলিম জনতা। তারা এই নাস্তিকদের বিরুদ্ধে হাতে হাত রেখে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সমাবেশে অংশ গ্রহণ করে। কিন্তু দিনটি ঠিক এতোটাও সহজ ছিল না। সমাবেশে যোগদানের উদ্দেশ্য যারা ঘর থেকে বের হয়েছিলেন তাদেরকে পথে পথে বাঁধার প্রাচীর প্রত্যক্ষ করতে হয়েছে। পথের মোড়ে মোড়ে বাঁধার সৃষ্টি করেছিল সরকারের পেটোয়া বাহিনী এবং ছাত্রলীগ। যানবাহন এবং ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেয় সরকার। নদীপথে নৌ-যান চলাচলও প্রায় বন্ধ ছিল। কিন্তু সব বাধাই উপেক্ষা করে ঢাকা শহরে জড়ো হতে থাকে লক্ষ লক্ষ তৌহিদী জনতা।


ঢাকায় পৌছানোর পরও খন্ড খন্ড সংঘর্ষ চলতে থাকে। সেই সংঘর্ষ একসময় মারাত্নক আকার ধারণ করে। বায়তুল মোকাররমের উত্তরগেটে হামলা চালায় ছাত্রলীগ। বিবিএভিনিউয়ের আওয়ামীলীগ অফিস থেকে ছাত্রলীগের পেটুয়া বাহিনী পেট্টোল নিয়ে কুরআন শরীফেও আগুন ধরিয়ে দেয়। এরপর তারা অপপ্রচার চালিয়ে বলে এইসব কাজ হেফাজত ইসলাম করেছে। যে হেফাজত ইসলাম আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূলে প্রেমে মসগুল হয়ে রাজপথে নেমেছে তারাই কিনা আল্লাহর কিতাব পবিত্র কুরআন জ্বালিয়ে দিবে! এর চেয়ে হাস্যকর অভিযোগ ইতিহাসে বিরল।


দিন গড়ানোর সাথে সাথে সংঘর্ষের পরিমানও বাড়তে থাকে।  এরপর রাত ৩ টা। রাত তিনটায় ঢাকা শহরের সমস্ত লাইট বন্ধ করে দিয়ে চালানো হয় ক্রাক ডাউন। আলেম ওলামাদের লক্ষ করে নিক্ষেপ করা হয় কয়েক হাজার গুলি। আহত হন কয়েকশত আলেম। আর নিহত হন ৬৭ জন। এভাবেই একটি জালিম সরকার নাস্তিক্যবাদকে উৎসাহিত করতে আলেম ওলামাদের উপর নির্যাতনের ষ্টিমরোলার পরিচালনা করে।


আর এই নির্যাতনের কথা যেন সাধারন মানুষ জানতে না পারে, সেই লক্ষ্যে ঐ একই দিনে বন্ধ করে দেওয়া হয় তৎকালীণ সময়কার সবচেয়ে জনপ্রিয় সংবাদ ভিত্তিক টিভি চ্যানেল ‘দিগন্ত টিভি’। সেই সাথে বন্ধ করা হয় ইসলামিক টিভি। এভাবেই এই জালিম সরকার ৫ মে কে ইতিহাসের পাতায় একটি কালো দিন হিসেবে অঙ্কিত করে। আর এই দিনটি বাংলাদেশের ইতিহাসের জন্য একটি লজ্জার দিন।

পঠিত : ৭৫৫ বার

মন্তব্য: ০